ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পবিত্র আশুরা

জয় হোক সত্য ও ন্যায়ের

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জয় হোক সত্য ও ন্যায়ের

পবিত্র আশুরা আজ। হিজরি বর্ষপরিক্রমার প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ আশুরা নামে অভিহিত হয়। বিশ্ব ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হয়েছে। মুসলিম বিশ্বে দিনটি ত্যাগ ও গভীর শোকের প্রতীক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন মহররমের ১০ তারিখে। এ দিনেই তিনি তা ধ্বংস করবেন। হিজরি ৬১ সনের এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালা ময়দানে শহীদ হন।

দিনটি একদিকে যেমন শোকের ও বেদনার, অন্যদিকে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অনন্য উদাহরণ। এছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল এদিনে। তাই এটি মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। তবে শুধু মুসলিম নয়, অন্যান্য আসমানি কিতাবের অনুসারীদের কাছেও এ দিনটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ।

আশুরা শব্দটি এসেছে আরবি ‘আশরুন’ শব্দ থেকে, যার অর্থ দশম। ইসলামের পরিভাষায় আশুরা বলতে মহররম মাসের ১০ তারিখকে বোঝায়। হজরত আদম (আ.) এই দিনে পৃথিবীতে আগমন করেন, তাঁর তওবা কবুল হয় এই দিনেই। হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের জুলুম থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছিলেন তাঁর অনুসারীদের নিয়ে নীল নদ পার হয়ে। তাঁদের পশ্চাদ্ধাবনকারী ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে যায়। এ দিন হজরত নূহ (আ.)-এর নৌকা মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পায়। হযরত ইউনূস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান এ দিনে। এমন আরো অনেক তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছে এই ১০ মহররমে।

মহররমের এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে মানব ইতিহাসের নির্মমতম, সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী ঘটনাটি ঘটে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র, চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-র পুত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) দামেস্কের অধিপতি ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। এ ছাড়া আহলে বাইয়াত ও হোসাইন (রা.)-এর অনুসারীদের মধ্যে মোট ৭২ জন শহীদ হন।

কারবালার প্রান্তরে সংঘটিত সেদিনের এই নিষ্ঠুরতা আজও সারা বিশ্বের মুসলমানের হৃদয় ভারাক্রান্ত করে। তাই মুসলমানরা এই দিনটিতে নিজেদের ইমানি শক্তিতে বলীয়ান হয়। কারবালার প্রান্তরে হোসাইন (রা.) নিজের প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমে অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করার যে শিক্ষা আমাদের দিয়ে গেছেন, তা সমুন্নত রাখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সব রকম লোভ, মোহ ত্যাগ করে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা, আদর্শ ও চেতনার বিস্তার ঘটানো। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়- ‘ফিরে এল আজ সেই মহররম মাহিনা/ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না।’ অন্যায়-অবিচার থেকে পৃথিবীকে মুক্ত রাখতে এই ত্যাগের মহিমা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।

সারা বিশ্বে মুসলমানরা আজ নানাভাবে নিগৃহীত। নানা ভ্রান্তি ও চক্রান্তের ফলে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ বাড়ছে। শান্তির ধর্ম ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়ে সহিংসতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় আশুরার এই দিনে মুসলমানদের নতুন করে শপথ নিতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সত্য ও সুন্দরের আলোকে নিজেকে আলোকিত করতে হবে।

আশুরার মূল চেতনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রেরণা, ন্যায়ের সংগ্রাম। আমাদের হৃদয়ে আশুরা ও কারবালার সেই মূল চেতনা ধারণ করতে হবে । সেই সংগ্রামে সাময়িক আঘাত এলেও চূড়ান্ত বিজয় অবধারিত। এটাই মহররমের শিক্ষা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ অক্টোবর ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়