ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কেন এই অপতৎপরতা

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৯, ২ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কেন এই অপতৎপরতা

বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার বিষয়টি এখনো মেনে নিতে পারছে না পাকিস্তান! একাত্তরে যে শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে তাদের, সেই গ্লানি ভুলতে পারছে না তারা। এজন্য দেশটি বারবার বাংলাদেশ বিরোধী নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এবার ঢাকায় বসেই আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে অপপ্রচার করেছে তারা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ‘পাকিস্তান অ্যাফেয়ার্স’ নামের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিও গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তান হাইকমিশন তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে শেয়ার করে।

১৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নন, জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক। ভিডিওটিতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বেশ কিছু আপত্তিকর বক্তব্যও দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতাই চাননি। এ ঘটনার পর পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। এই তলবের খবর পাওয়ার পর ফেসবুক পেজ থেকে তারা ওই ভিডিও মুছে ফেলে। তাদের এই অপতৎপরতা ও ধৃষ্টতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

এর আগেও পাকিস্তান হাইকমিশনের বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও শাস্তি কার্যকর করার সময় তারা অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ  এবং শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছিলেন পাকিস্তানের একজন হাইকমিশনার। প্রতিবাদের মুখে ওই হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান। এছাড়া জঙ্গি অর্থায়ন ও জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অপরাধে পাকিস্তানের একজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরেক কর্মকর্তাকে পুলিশ আটক করার পর মুচলেকা দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে নেয় হাইকমিশন। তাদের বিরুদ্ধে কিছু রাজনৈতিক দলকে অর্থ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক কে, নেতৃত্ব কার ছিল— এ সবই নির্ধারিত। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় হানাদার পাকিস্তানিরা ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা চালিয়েছে। ওই রাতে পাকিস্তানী বাহিনীর অভিযান শুরুর পরপরই  বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন, পরদিন তা বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরসহ বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিবেদনে তা এসেছে।

আমাদের উচ্চ আদালতের রায়েও এই সত্য স্বীকার করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ২১ জুন বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক ঐতিহাসিক রায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে রায় দেন। সুতরাং পাকিস্তান হাইকমিশন কেন ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টায় নেমেছে, তাদের উদ্দেশ্য কী তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।

আমরা দেশের ভেতরে মাঝেমধ্যেই দেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী অপতৎপরতা লক্ষ্য করি। এখনো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অনেকে রয়েছে, যারা নানা অপপ্রচার চালান। তারা স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শহীদদের সংখ্যা ইত্যাদি নিয়ে বিতর্ক উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ঠিক তাদের মতোই অপতৎপরতা, অপ্রপ্রচার চালাচ্ছে পাকিস্তান। কূটনৈতিক রীতিনীতি বা শিষ্টাচার লংঘন করছে তারা। এসব বিষয় হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের এই অপতৎপরতার পেছনে  উদ্দেশ্য কী, সেটি অবশ্যই অনুসন্ধান করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ নভেম্বর ২০১৭/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়