ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাঠ্যবই প্রণয়ন

অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০০, ১৫ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি

সরকারের একটি অনন্য কর্মসূচি প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদান। এ মহৎ কর্মসূচির জন্য সরকার বেশ প্রশংসা অর্জন করেছে। কিন্তু এই কর্মসূচির অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই প্রণয়ন, ছাপা ও বিতরণ পর্যায়ে পদে পদে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক এই সংস্থা সদ্য প্রকাশিত এক গবেষণায় বলেছে, এনটিসিবি এখনো সম্পূর্ণ কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়নি। এটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো বিধিমালা নেই।

পাঠ্যপুস্তকের পাণ্ডুলিপি প্রণয়নের প্রায় সব ধাপেই সুশাসনের অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে টিআইবি।  এ বিষয়ে সংস্থার ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন ও প্রকাশনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তকের পাণ্ডুলিপি তৈরি, ছাপা ও বিতরণ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। এনসিটিবির পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায়ও রয়েছে অস্বচ্ছতা। সঠিকভাবে পাণ্ডুলিপি লেখা পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে না, এতে দলীয়, রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত প্রভাব থাকছে।

পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনা এবং সরবরাহের সর্বমোট ২০টি ধাপের মধ্যে ১৬টি ধাপে সুশাসনের ঘাটতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়ে। আর এনসিটিবির কর্মকর্তারাও এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এ প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিনেও এনসিটিবি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিধি জারি না হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের দ্বারা আদিষ্ট হয়ে এনসিটিবিকে তার কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে সাময়িকভাবে গঠিত একটি বিশেষ কমিটির মাধ্যমে এনসিটিবিকে একটি স্বাধীন কমিশন হিসেবে পুনর্গঠনের কথা বলেন তিনি।

প্রতিবেদনে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়নের প্রক্রিয়া চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের কোনো কোনো বিষয় এবং শব্দ পরিবর্তন করা হয়। শিক্ষাক্রম অনুসরণ না করে অনেক সময় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লেখা পরিবর্তন করা হয়। পাঠ্যপুস্তকের পাণ্ডুলিপি তৈরি, ছাপা ও বিতরণ পর্যায়ের অস্বচ্ছতা পুরো প্রক্রিয়ার ওপর অপপ্রভাব বিস্তার করছে। বিশেষত মানহীন কাগজে পাঠ্যপুস্তক ছাপা, দেশে মানসম্মত ছাপাখানা থাকা সত্ত্বেও মানহীন ছাপাখানাকে কাজ দেওয়ার বিষয়টি একের পর এক সংকট সৃষ্টি করছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শিক্ষাক্রম অনুসরণ না করেই অনেক সময় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লেখা পরিবর্তন করা হয়। পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে বলা হয়, এনসিটিবির কর্মকর্তাদের একাংশ পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র আহ্বানের আগেই প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাক্কলিত দর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়। পরে এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে দরপত্র দাখিল করে। বিতরণ পর্যায়েও নানা ধরনের অনিয়ম হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ থেকে যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে তা হলো- সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। কেননা জবাবদিহি থাকলে সেখানে এত ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হতে পারত না। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন-প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক, দলীয় বা ভাবাদর্শগত দিকে যেসব অভিযোগ টিআইবির প্রতিবদনে তুলে ধরা হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। পাশাপাশি পাঠ্যবই প্রণয়ন, মুদ্রণ ও বিতরণের প্রক্রিয়ায় আর্থিক দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা ফৌজদারি অপরাধ।  কোনো অবস্থাতেই এসব অনিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের সুনামের স্বার্থেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। অবিলম্বে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার ও তা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ নভেম্বর ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়