শুভ নববর্ষ
শান্তি ও সমৃদ্ধময় হোক নতুন বছর
কালের গহ্বরে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর। অসীমের পানে মহাকালের যে যাত্রা, সেখানে সূচিত হল আরেকটি মাইলফলক। অতীতের ভুলত্রুটি কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নতুন প্রত্যাশা ও প্রেরণা নিয়ে শুরু হলো ২০১৮ সালের পথপরিক্রমা। গ্রেগরিয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ১ জানুয়ারি পালিত হচ্ছে নববর্ষ হিসেবে। এই নতুন বছরকে সামনে রেখে মানুষ পরিকল্পনা করে সামনের দিনগুলো সুন্দরভাবে সাজানোর। শুধু ব্যক্তি জীবনই নয়, জাতীয় বা রাষ্ট্রীয়ভাবেও প্রত্যাশা থাকে নতুন বছরটি ইতিবাচক হবে দেশের জন্য।
বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন হয়েছে বিদায় নেওয়া বছরে। মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বজুড়ে মানবতার পক্ষে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন, বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো কর্তৃক প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি, ইলিশের জিআই স্বীকৃতি, বাংলাদেশের শীতল পাটিকে ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ ঘোষণা ইউনেস্কোর, প্রথমবারের মতো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ (বেসরকারিভাবে), পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান হওয়া, পোপের আগমন, বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে পদার্পণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক চার লেনসহ আরও কিছু অর্জন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদায়ী বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল বিশ্ব জনমত উপেক্ষা করে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন । আর উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম এবং আন্তমহাদেশীয় বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়ার হুমকি-পাল্টা হুমকির ঘটনা বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল।
বিদায় নেওয়া ২০১৭ সালটি বাংলাদেশের জন্য ছিল দুর্যোগ-দুর্বিপাকের বছর। পাহাড়ি ঢলে হাওর এলাকায় ফসল নষ্টের পাশাপাশি বন্যায় বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দেশকে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির মুখে ঠেলে দেয়। পাহাড়ধসে পার্বত্য চট্টগ্রামে মারা গেছে অনেক মানুষ। মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে রক্ষা পেতে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। এতে একদিকে তারা যেমন দুর্বিষহ জীবনের মুখোমুখি হয়েছে, অন্যদিকে বিরাট সংকটের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিসহ ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়ম ছিল আলোচনায়।
নতুন বছরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন যাবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে আমাদের প্রত্যাশা, সরকার, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সবাই শুভবুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হয়ে নতুন বছরকে অর্থবহ করে তুলবেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। জনসাধারণের প্রত্যাশা, এ নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এজন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সদিচ্ছা। এক্ষেত্রে সরকার পক্ষের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি।
আমাদের প্রত্যাশা বিদায়ী বছরের অপূর্ণতা দূর করে নতুন উদ্যম ও প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধময় হোক নতুন বছর। দেশে আরো ভালো ও নতুন নতুন সাফল্য আসবে নতুন বছরে- এ প্রত্যাশায় আমাদের সব পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়ীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ জানুয়ারি ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম