ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ২৩ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিন

সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে আবারো একটি কার্গো-জাহাজ ডুবে গেছে। সম্প্রতি কয়লা বোঝাই এ কার্গো মংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকায় ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ডুবে যায়। গত তিন বছরে সুন্দরবন সংলগ্ন  নদীতে ডুবেছে পণ্যবোঝাই ১০টি লাইটারেজ জাহাজ।  ডুবে যাওয়া এসব জাহাজে থাকা ফার্নেস অয়েল, সার, কয়লা, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিঙ্কার, জিপসাম নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়ে ম্যানগ্রোভ এই বনের জীব-বৈচিত্র। ডুবে যাওয়া অনেক লাইটার জাহাজ উত্তোলন না করায় দ্রুত পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে  সংলগ্ন নদ-নদী।

এভাবে একের পর এক পণ্যবাহি কার্গো ডুবিতে বিপন্ন হতে বসেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র। এ সব কার্গো-জাহাজ ডুবির কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, চালকদের সুন্দরবনের নদ-নদীর মূল চ্যানেল না চেনা, ফিটনেসবিহীন স্ক্র্যাপ (মেয়াদ উত্তীর্ণ) জাহাজের চলাচল, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকদের দিয়ে জাহাজ চালানো। এসব কারণে সুন্দরবনে ডুবোচরে জাহাজ উঠিয়ে দেওয়ায় স্ক্র্যাপ জাহাজগুলোর তলা ফেটে দুর্ঘটনা ঘটছে।  সুন্দরবন ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্ধারকারী জলযান না থাকায় দ্রুত উদ্ধার করাও সম্ভব হচ্ছে না ডুবে যাওয়া এসব জাহাজ ও পণ্য।

এক হিসেবে দেখা গেছে সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে অনেক আগে থেকেই লাইটারেজ জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটছে। আর বিগত তিন/চার বছরে এ হার বেড়ে গেছে। ১৯৯৪ সালের আগস্টে সুন্দরবনের কাছে পশুর চ্যানেলে একটি তেলবাহি জাহাজ ডুবে গেলে প্রথম বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে সুন্দরবন। ২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তেল। এরপর ১৯৯৮ সালের  জুলাইয়ে মোংলা বন্দরের কাছে একটি তেলবাহি লাইটার কার্গো জাহাজ দুর্ঘটনায় পশুর চ্যানেলে তেল ছড়িয়ে পড়লে সুন্দরবন আবারও বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে।

একই বছরের ১০ আগস্ট সুন্দরবনের মাজহার পয়েন্টে অপর একটি তেলবাহি লাইটার কার্গো দুর্ঘটনায় পড়ে সালফারযুক্ত তেল ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে ৯ ডিসেম্বর পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শ্যালা নদীতে তলা ফেটে সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে ডুবে যায় একটি অয়েল ট্যাংকার। এই তেল  নদ-নদী ও বনের প্রায় ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে সুন্দরবন। সে সময়ে ম্যানগ্রোভ এই বনের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যরা ছুটে আসেন ।

অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায়  মেয়াদ উত্তীর্ণ জাহাজ পণ্য পরিবহণ করে আসছে এবং দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। একের পর এক লাইটার জাহাজডুবির ঘটনায়  জাহাজের পণ্য দ্রবীভূত হয়ে ম্যানগ্রোভ এ বনের পানি দূষিত হচ্ছে। এতে সুন্দরবনের কয়েকশ’ প্রজাতির মাছসহ জলজ-প্রাণী ও জীব-বৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর দ্রুত ডুবে যাওয়া জাহাজ ও পণ্য ওঠানো সম্ভব হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হতো।

বিশ্ব ঐতিহ্য আমাদের এই সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। ফিটনেসবিহীন নৌযান যাতে চলাচল করতে না পারে সে জন্য উদ্যোগ নিতে হবে নৌপরিবহণ অধিদপ্তরকে। অদক্ষ মাস্টার দিয়ে জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ, মেয়াদ উত্তীর্ণ জাহাজ চলাচল  বন্ধ,  চ্যানেলে জাহাজ ডুবে গেলে তা দ্রুত তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র রক্ষায় অবিলম্বে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ এপ্রিল ২০১৮/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়