ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রাত্যহিক জীবনেও তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাত্যহিক জীবনেও তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে

সময়ের আবর্তে বাঙালির জীবনে আবার ফিরে এসেছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’- রক্তে রাঙানো সেই ফেব্রুয়ারিতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। মূলতঃ মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষকাল। তাইতো ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের এই পুরো মাসজুড়ে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাবে বাঙালি জাতি।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে নামেন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ আরও অনেকে। তাদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা। সেদিনের সেই আত্মদানই পরবর্তীতে রূপ নিয়েছিল বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে। পাকিস্তানি শাসক এবং তাদের দোসরদের সব চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাঙালি জাতি এগিয়ে যায় তার অভীষ্ট লক্ষ্যে। এই অর্জনের পথ ধরেই শুরু হয় বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন এবং এর ফলে একাত্তরে নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

আন্দোলনের শুরু মূলতঃ ১৯৪৭ সালের পর থেকে। সে সময় পাকিস্তান কৌশলে বাঙালি জনগোষ্ঠীর ভাষার ওপর প্রথম আঘাত হানে। মায়ের ভাষায় কথা বলা বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করে। কিন্তু বাংলার মানুষ সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় রুখে দাঁড়ায়। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে প্রতিদিন রাজপথে চলতে থাকে মিছিল সমাবেশ। শুরু হয় বাংলাভাষা রক্ষার আন্দোলন। মায়ের মুখের ভাষাকে কেড়ে নিয়ে তারা রাষ্ট্রভাষা উর্দু করতে চেয়েছিল। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। বায়ান্নর আগুনঝরা সে দিনগুলো বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।

‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা! তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!’  কবির এ অমিয় বাণী বাংলা ভাষাভাষীর হৃদয়ের কথা। অতুল প্রসাদ সেনের কালজয়ী এ গানটি মিশে আছে বাঙালির ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে। তাইতো ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা ফিরে তাকাই আমাদের শেকড়ের দিকে। ভাষার মাস নিয়ে আমাদের মধ্যে একটি অন্য রকম আবেগ কাজ করে। সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ থাকে মাসজুড়েই। ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে নানা কর্মসূচিতে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মুখর থাকবে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে আজ শুরু হচ্ছে অমর একুশের বইমেলা। বস্তুতঃ ফেব্রুয়ারি জুড়েই চলবে একুশের অনুষ্ঠানমালা।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে একুশে ফেব্রুয়ারিকে পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। মাতৃভাষার জন্য বাংলার অসমসাহসী তরুণদের আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। এদিন ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এখন বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হয়। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে সেই অমর শহীদদের, যাঁরা ভাষার জন্য তাঁদের জীবন দিয়ে গেছেন।

ভাষার জন্য বুকের রক্ত দেওয়ার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। কিন্তু এমন এক গর্বিত অহংকারের উত্তরাধিকারী হয়েও আজ পর্যন্ত আমরা জাতীয় জীবনের সর্বত্র বাংলার প্রচলন নিশ্চিত করতে পারিনি। একুশের মূল চেতনা ছিল রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা। দেশের সব মানুষ যাতে নিজের ভাষায় লিখতে ও পড়তে পারে সেটি নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে এখনও সর্বস্তরে বাংলা চালু হয়নি। আমাদের বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম করেছে, অথচ আমরা বাংলা লিখছি যে যার ইচ্ছামতো।

মাতৃভাষাকে প্রকৃত মর্যাদা দিতে আমাদের এই স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলা ভাষাকে ভালোবাসতে হবে। বৈশ্বিক প্রয়োজনে আমাদের ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষা শিখতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে মাতৃভাষার চর্চাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। ভাষার মাসে আমাদের প্রত্যাশা সর্বস্তরে বাংলা চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, প্রাত্যহিক জীবনেও তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়