ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

গণমানুষের অনুপ্রেরণা

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ৭ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গণমানুষের অনুপ্রেরণা

বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। ঐতিহাসিক সে ভাষণে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’  লাখো জনতার মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে রচিত হয়েছিল রাজনীতির এক ঐতিহাসিক মহাকাব্য।

বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে যে ঐতিহাসিক মুহূর্তটি সবচেয়ে বড় অনুঘটকের কাজ করেছে, সেটি হলো ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই ভাষণ। মাত্র ১৯ মিনিটের এই একটি ভাষণ জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। এই স্বল্প সময়ে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রীত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করবো। আজো আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।’

বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় চিন্তা, সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা ও দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্ত্বা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভিত রচিত হয় তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হয়ে পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার পর থেকে ৬টি অধ্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল- ১৯৪৮, ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯ এবং ৭১। প্রত্যেকটি অধ্যায়ই স্বাধীনতা অর্জনের পুঞ্জিভুত শক্তি হিসাবে কাজ করেছে। আর সেই পুঞ্জিভুত শক্তির নিউক্লিয়াস ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে গণমানুষের অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে সেই মহাকাব্য।

বস্তুতঃ বঙ্গবন্ধু, ৭ মার্চ ও স্বাধীনতা এই তিনটি শব্দের সমার্থক রূপ হচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি অত্যন্ত সুচতুরভাবে স্বাধীনতার ডাক ও আহ্বান দিয়ে গিয়েছিলেন, যা পশ্চিম পাকিস্তানীরা অনেক পরে বুঝতে পেরেছিল। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে চারটি মূলনীতি ধরা হয় তার সবগুলোর উপস্থিতি ছিল ৭ মার্চের ভাষণে অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ, সবার গণতান্ত্রিক অধিকার, অর্থনীতির অধিকার নিশ্চিত করা, ধর্ম-বর্ণ নিরোপেক্ষ একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ১২টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। গত বছরের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণটিকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মার্চ ২০১৯/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়