ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৫, ১ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে

চকবাজারের চুড়িহাট্টা, অভিজাত এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ার, এরপর গুলশানে ডিএনসিসি কাঁচাবাজার- ভয়াবহ আগুনে পুড়েছে মানুষ, পুড়েছে সম্পদ। চুড়িহাট্টায় ৭১ ও বনানীতে ২৬ জনের মৃত্যু আমাদের আরো একবার দেখিয়ে দিল ঢাকা কতটা অরক্ষিত এবং মানুষের জীবন কতটা অনিরাপদ। পুরান ঢাকা থেকে আধুনিক ঢাকা-  সর্বত্রই নিরাপত্তাহীনতা। একের পর এক আগুন আতঙ্কে পুরো রাজধানীবাসী। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মানুষের ঘুম যেন কেড়ে নিয়েছে। শুধু ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও  অগ্নিকাণ্ডে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। প্রায়ই বস্তি, গার্মেন্টস ও শিল্প-কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। সবার মনে প্রশ্ন-এর থেকে পরিত্রাণ মিলবে কিভাবে।

প্রতি বছর দেশে ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, গত আট বছরে দেশে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে দুই সহস্রাধিক মানুষ। অগ্নিকাণ্ডের জন্য শতকরা ৭০ ভাগ দায়ী করা হয়েছে বৈদ্যুতিক ত্রুটিকে । আর ভয়াবহ বড় ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটছে বেশি রাজধানী ঢাকায়। গত দুই মাসের ব্যবধানে রাজধানীতে তিনটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেক মানুষের মৃত্যূ ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। অভিযোগ রয়েছে- অসচেতনতা, আবাসন নীতিমালা না মানা, অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি বা ব্যবস্থা না থাকা, সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকির অভাবে রাজধানীতে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ম অনুযায়ী ছয়তলার ওপর কোনো আবাসিক ভবন নির্মাণ করতে হলেই ফায়ার সার্ভিস থেকে অগ্নিপ্রতিরোধসংক্রান্ত ছাড়পত্র নিতে হবে। আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক মিলিয়ে রাজধানী ঢাকায় বহুতল ভবনের সংখ্যা কয়েক হাজার। কিন্তু কোনো ভবনেই কি পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা আছে? ঢাকার বেশির ভাগ ভবনের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। অনেক ভবনেই ফায়ার এক্সটিংগুইশার নেই। ফায়ার অ্যালার্মও নেই এসব ভবনে। আবার অনেক ভবনে অগ্নিনির্বাপণসামগ্রী থাকলেও এগুলো কতটা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোনো কোনো ভবনে সিঁড়ির প্রশস্ততা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বনানীর এফআর ভবনের সিঁড়ির প্রশস্ততা ছিল মাত্র তিন ফুট।

গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে দুই বছরের ব্যবধানে দুবার আগুন লেগে সর্বস্ব হারিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখন নানা উদ্যোগ গ্রহণ বা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বিধি অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কি না, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা আছে কি না সেজন্য অভিযান চালানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এসব অভিযানের ফলাফল নিয়ে প্রশ্নও আছে। প্রতিবারই আগুনের ঘটনার পর নানা তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আগুন কিংবা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটলে আমরা নড়েচড়ে বসি। কিন্তু কিছুদিন পর আবার যেই সেই। অতীত অভিজ্ঞতা আর একর পর এক দুর্ঘটনার কারণে আশ্বস্ত হতে পারছে না নগরবাসী।

দেশের অধিকাংশ বহুতল ভবন যেন একেকটি মৃত্যুকূপ। অনুমতি ব্যতীত সম্প্রসারণ এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে চালু করা হয়েছে এগুলো। ভূমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ দুর্বল এবং দায়সারা গোছের। এ কারণে কোনো ভবনে আগুন লাগলে তা নেভাতে বহু সময় ব্যয় হয়। এতে হতাহতের সংখ্যাও বেড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি ভবনে অগ্নিনিরাপত্তার কিছু বিধিমালা নির্ধারণ করে দিলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই ভবনগুলোয়। আবার বহুতল ভবনে আগুনের ঝুঁকি সম্পর্কে অনেক ভবনের মালিকই সচেতন নন। ফায়ার সার্ভিস বিভিন্ন সময়ে ভবন মালিকদের নোটিশ দিলেও তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না।

কিন্তু আমাদের সবার নিরাপত্তার স্বার্থেই এর অবসান হওয়া প্রয়োজন। অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা রোধ ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, আমরা আগুনে পোড়া মানুষ আর দেখতে চাই না। নগরীর একটি ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ থাকুক, তা আর হবে না। এবার সত্যিকার ব্যবস্থাই নেয়া হবে। মানুষের আবাসন নিরাপত্তা দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। আমাদের অভিযানে সবাইকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদেরও প্রত্যাশা এ ব্যাপারে সবাই এগিয়ে আসবেন।

রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে। অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা রোধে বিধি অনুযায়ী ভবন নির্মাণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। জানমালের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই আমাদের নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বিধি অনুযায়ী যেন ভবন নির্মিত হয় সেজন্য রাজউক, গণপূর্ত বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে কার্যকর ও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি উঁচু ভবনে কার্যকর ও পরীক্ষিত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। যারা আইন মানছে না কিংবা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ এপ্রিল ২০১৯/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়