ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ২১ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

নিরাপদে থাকা ও নিরাপত্তার জন্য যে ছাদের নিচে আমরা অবস্থান নেই সেই ছাদই যদি মাথার ওপর ভেঙে পড়ে তাহলে নিরাপদ স্থান আর মিলবে কোথায়। এ ধরনের ঘটনায় তাই প্রবল শঙ্কা জাগে মনে। বরগুনার তালতলী উপজেলায় একটি স্কুলে শ্রেণিকক্ষের ছাদের অংশ ভেঙে পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েকজন। ওই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যে বরগুনারই আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের কিছু অংশ ধসে পড়ে। অল্পের জন্য রক্ষা পায় শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অনেকে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আসা বন্ধ করে দিয়েছে। আবার কোথাও প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই চলছে ক্লাস।

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল এবং ছাদের অধিকাংশ জায়গায় পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। কয়েকদিন আগে ওসমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার সময় হঠাৎ পলেস্তারা খসে পড়লে অল্পের জন্য রক্ষা পায় শিক্ষার্থীরা। শুধু বরগুনা বা রংপুর নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক বিদ্যালয় ভবন ও শ্রেণিকক্ষ এরকম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৬৫ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণকাজ চলমান। বাকি পুরনো অনেক প্রতিষ্ঠানই রয়েছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে। ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আবার অনেক ভবন সংস্কার করে পাঠদান উপযোগী করা হচ্ছে। তবে সারা দেশে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় রয়েছে কতগুলো তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। বরগুনার তালতলীতে শিশু মানসুরা নিহত হওয়ার পর ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শুধু প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের অনেক ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। নির্মাণের পর কয়েক বছর যেতে না যেতেই অনেক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টে করা এক রিট আবেদনে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন জরিপ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। যাতে করে কোন ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও কোনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয় তা চিহ্নিত করা যায়। আমাদের প্রত্যাশা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করার অন্যতম শর্ত আনন্দময় ও নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শিশুদের জন্য ভীতিমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন অনেকবারই। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখছি? অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো দুর্বল কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক শিক্ষাঙ্গন, বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ অনুকূল নয়। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এসব ভবন যথাযথভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল কি না? যারা তদারকির দায়িত্বে ছিলেন তারা কি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন? আবার সময়মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি না? সংশ্নিষ্টরা এর দায় এড়াতে পারেন না। আমরা মনে করি দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে সেসব সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। জরাজীর্ণ ভবন বা যেগুলো সংস্কার উপযোগী নয় সেসব ভবন ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি যথাযথ নিয়ম মেনে নির্মাণ কাজ হচ্ছে কিনা তার তদারকিও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ এপ্রিল ২০১৯/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়