পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ না দেওয়ায় হুমকি

রাবি প্রতিনিধি : পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ না দেওয়ায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।

গতকাল সোমবার দুপুরে রাজশাহী মহানগর ২২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহানেওয়াজ সরকার সেডু তার অনুসারীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে নিয়োগ প্রাপ্তদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগে জানা গেছে।

এর আগে রোববার নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আব্দুল আলিমকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হয়। তবে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি সেডু সরকার অস্বীকার করেছেন।

জানা যায়, রুয়েটে ২০-২১ এপ্রিল সহযোগী অধ্যাপক পদে চারজন ও প্রভাষক পদে ছয়জন শিক্ষক, ডেপুটি রেজিস্ট্রার, উপ-পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রাসারণ), বাজেট অফিসার, সহকারী প্রকৌশলী, জুনিয়র সেকশন অফিসারসহ পাঁচজন কর্মকর্তা ও তিনজন কর্মচারীসহ চারটি ক্যাটাগরিতে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ৮০ তম সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ প্রাপ্তদের তালিকাভুক্ত করা হয়। তবে এখনও নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অভিযোগে জানা যায়, নিয়োগে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটন ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার,  তার ভাই বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতির সভাপতি ও আওয়মী লীগ নেতা শাহানেওয়াজ সরকার সেডুর কিছু প্রার্থী ছিল। নিয়োগে মূলত লিটনের প্রার্থীদের চাকরি হলেও সেডুর প্রর্থীদের চাকরি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দপ্তরে গিয়ে তিনি ও তার অনুসারীরা এই হুমকি-ধামকি দেন। এমন কি নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও জানা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুয়েটের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সোমবার দুপুরের দিকে শাহানেওয়াজ সরকার সেডুর নেতৃত্বে কর্মচারী সমিতির সভাপতি মুরাদ ও সেক্রেটারি মানিকসহ তাদের অনুসারীরা এই নিয়োগে ক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ রনি ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার সদরউদ্দিনকে তাদের পদোন্নতি ঠেকানোর হুমকি দেন।

এ ছাড়া হিসাব শাখার প্রধান নাজিম উদ্দিন আহম্মদকে ফোনে হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তারা কিভাবে চাকরি চালিয়ে যান সেটা দেখে নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া যারা মাস্টার রোলে ছিল বর্তমানে নিয়োগ হতে যাচ্ছে, তাদের কাছ থেকে জয়েনিংয়ের জন্যও টাকা চাচ্ছেন তিনি।

এর আগে রোববার একই বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক  ড. আব্দুল আলিমকে হুমকি দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ওই শিক্ষককে গালি-গালাজ করেন বলেও জানা যায়।

হুমকি প্রদানের ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আব্দুল আলিম বলেন, ‘সে ফোনে কথা বলেছে। তবে সরাসরি তার সঙ্গে কোন ঝামেলা হয়নি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রুয়েটের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, মূলত সেডু সরকার তার ভাই মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের মদদে এই হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এর আগে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে হুমকি-ধামকির কারণেই রেজিস্ট্রার স্যার পদত্যাগ করেছেন। স্থানীয় দলীয় প্রভাব দেখিয়ে এখানে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। যার কারণে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব নয়। চাকরিতে যোগদানের জন্য সেডু সরকার যার-তার কাছ থেকে টাকা চাচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে উপাচার্যের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা।

অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা শাহানেওয়াজ সরকার সেডু বলেন, ‘কারো সঙ্গেই কোনো খারাপ আচারণ করা হয়নি। নিয়োগের নামে রুয়েট প্রশাসন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ বোর্ড নিয়ম লঙ্ঘন করে দায়িত্ব পালন করছেন।’

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঢাকাতে আছি। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।

সার্বিক বিষয় নিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. মোহা. রফিকুল আলম বেগের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।



রাইজিংবিডি/রাবি/২৫ এপ্রিল ২০১৭/মেহেদী হাসান/রুহুল