ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ফল অনলাইনে, কলেজে শিক্ষার্থীদের ভিড় কম

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২১, ২৩ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফল অনলাইনে, কলেজে শিক্ষার্থীদের ভিড় কম

আহমদ নূর : অনলাইনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) ফলাফল প্রকাশের কারণে কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভিড় কম দেখা গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারিরা বলেছেন, পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্য ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী এসেছে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম।

বিভিন্ন কলেজের আশপাশে যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন তারা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই তারা দেখছেন, ফল প্রকাশের দিন স্কুল কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।

শিক্ষকরা বলেছেন, মোবাইল টেলিফোনে এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষা ফলাফল জানা যায়। এ ছাড়াও অনলাইনে সহজে ফল পাওয়া যায়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে ফলাফল দেখতে পারে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ফল জানতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসেন না। 

শিক্ষরা বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই পরীক্ষার ফল মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে এবং অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষার ফলাফল এমনকি কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছেন তা বাসায় বসেই অনলাইনে জানতে পারেন। তাদেরকে আর কষ্ট করে কলেজ ক্যাম্পাস পর্যন্ত আসার প্রয়োজন পড়ে না। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য বিষয়টি অনেক সহজ হয়েছে।

দুপুরে সরেজমিনে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমণ্ডি বয়েজ স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজে গিয়ে দেখা যায় পরীক্ষার ফলের জন্য শিক্ষার্থীরা অপেক্ষায় নেই। তাদের উপস্থিতি বেশ কম।

সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আনিলা তাবাসসুম জানান, তার বান্ধবীরা অনেকেই পরীক্ষার ফল জানতে কলেজে আসেনি। তারা বাসায় অনলাইনে দেখে নেবে। ঘনিষ্ঠ  বান্ধবীরা কলেজ ক্যাম্পাসে আসছে না জেনে আনিলা তাবাসসুমও বাসায় বসে অনলাইনে ফল জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার মা সালমা আক্তার জোর করে কলেজে নিয়ে এসেছেন।

সালমা আক্তার জানান, তার বড় মেয়ে ২০০৮ সালে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। সে সময় কলেজে উৎসবের রূপ ছিল। একজন আরেকজনকে খুশিতে রঙ মাখিয়ে দিয়েছিল। তাদের মধ্যে আনন্দের সীমা ছিল না।

তিনি বলেন, ‘উৎসব থেকে ছোট মেয়েকে দূরে রাখতে চাইনি। এজন্য তার ইচ্ছে না থাকা সত্বেও কলেজে নিয়ে আসি। আগের মতো উৎসব নেই। তারপরও দেখছি স্টুডেন্ট যারা এসেছে তারা এনজয় করার চেষ্টা করছে।

একই কথা জানালেন ধানমণ্ডি বয়েজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আদনান রহমান। তিনি জানান, তার অনেক বন্ধুই ফল জানতে কলেজে আসেননি। তারা অনলাইনে ফলাফল জেনে নেবেন। অবশ্য অনেকে ফলাফল জানতে তার কাছে ফোন দিচ্ছেন।

হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবছর মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন খাগড়াছড়ির লোটাস ত্রিপুরা। ফল প্রকাশের দিন তিনি খাগড়াছড়িতেই অবস্থান করছেন। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘এখন মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ও অনলাইনে ফল জানা যায়। তাই কলেজে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।’ সহপাঠীদের অনেকেই কলেজে যাবেন না বলে তিনি ফল প্রকাশের দিন ঢাকায় এসে কলেজে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি বলে জানান।

ভিকারুননিসা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন শিক্ষক মেহেদী জামান। আগের দিনগুলোতে ফল প্রকাশের দিন শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস আর এ বছর পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের মধ্যে ব্যাপক ফারাক দেখছেন তিনি। এক কথায় তিনি বলেন, ‘জৌলুস কমে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আগে শিক্ষার্থীরা ফল প্রকাশের দিন মাঠে বসে থাকত। যখন ফল প্রকাশ হতো তখন দুই ধরণের চিত্রের অবতরণা হত। প্রথমত, পাশ করা শিক্ষার্থীদের আনন্দ এবং ফেল করা গুটি কয়েক শিক্ষার্থীর কান্না। যদিও বেশি পাশের কারণে ফেল করা শিক্ষার্থীদের কান্না অনেকটা ম্লান হয়ে যেত। যারা পাশ করত তারা ব্যান্ড বাজাত, মিষ্টি বিতরণ করত। শিক্ষকদের সঙ্গে ফটোসেশন হত। তারা যখন বিকেলে বাসায় ফিরে যেত তখন অনেকের মন খারাপ হতে দেখতাম। কারণ, এইচএসসির ফল প্রকাশের দিন মানে পরবর্তী সময়ে তাদের এখানে আসার সুযোগ কম। কিন্তু এখন আর তেমনটি নেই। ফল প্রকাশের দিন বেশিরভাগ স্টুডেন্ট আসেন না। যে কয়েকজন আসেন তারা একটু আনন্দ উল্লাস করে চলে যান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুলাই ২০১৭/নূর/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়