ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জবিতে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪

আশরাফুল ইসলাম আকাশ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ৬ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জবিতে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪

জবি প্রতিনিধি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির প্রমাণ পাওয়ার চার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজনকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই চারজন ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভর্তি পরীক্ষায় অন্য শিক্ষার্থীর প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মঙ্গলবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে গত রোববার একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কোতয়ালী থানায় সোপর্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- ভূমি আইন ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কালাম আহমেদ (ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রম : ৫৬৩), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আশিকুর রহমান (মেধাক্রম : ৩৯৭), লোকপ্রশাসন বিভাগের রাজু আহমেদ (মেধাক্রম : ২৪৭)। গত রোববার ভূমি আইন ব্যবস্থাপনা বিভাগের এলিন শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বর্তমানে দুই দিনের পুলিশি রিমান্ডে আছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ‘ডি’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এসব শিক্ষার্থীদের নামে অন্যরা প্রক্সি পরীক্ষা দেন। এজন্য তারা পক্সিদাতাদের ছবি দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন এবং পক্সিদাতাদের ছবিযুক্ত প্রবেশপত্র দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ফলে এ সময় সমস্যা না হলেও মেরিট লিস্টে নাম আসার পর ভর্তি কার্যক্রমের একটি ধাপে ধরা পড়েন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রবেশপত্র জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। এ সময় পক্সিদাতাদের ছবির জায়গায় মূল শিক্ষার্থীরা ফটোশপের মাধ্যমে প্রবেশপত্রে তাদের ছবি যুক্ত করে ভর্তির জন্য জমা দেন। পরে ভর্তি পক্রিয়ার ওই ছবির মিল না থাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত প্রবেশপত্রের সাথে মিল না থাকায় ধরা পড়েন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষার সময় পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষক দুই কপি প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর করে এক কপি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমা নেন। জমা নেওয়া এক কপি প্রবেশপত্র ভর্তি কার্যক্রমের সময় ডিন অফিস থেকে বিভাগে মূল শিক্ষার্থী ও তার জমা দেওয়া প্রবেশপত্রের সাথে মিলিয়ে নেওয়ার জন্য দেন। কিন্তু ভর্তি কার্যক্রমের সময় এদের প্রবেশপত্র মিলিয়ে নেয়নি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ অবস্থায় বিভাগীয় প্রধান ও ডিন যাচাই-বাছাই শেষে ভর্তির কাগজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি দপ্তরে শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড ও আইডি নম্বরের জন্য দেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইটি দপ্তরও শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই না করে আইডি নম্বরের জন্য রেজিস্ট্রার দপ্তরে কাগজপত্র দেন। রেজিস্ট্রার দপ্তরে শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার সময় এ চার শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের ছবি ও স্বাক্ষরের সাথে ভর্তি পরীক্ষার সময় জমা দেওয়া প্রবেশপত্রের ছবি ও স্বাক্ষরের গরমিল পাওয়ায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত কালাম আহমেদ জানান, ভর্তি কোচিং ইউসিসির ফার্মগেট শাখায় কোচিং করার সময় ফারুকের সঙ্গে পরিচয় হয়। ফারুক ইউসিসির কোচিংয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করান। ফারুক তার বন্ধু নবুওয়াত ওরফে আজমের সহযোগিতায় দেড় লা্খ টাকার বিনিময়ে জবিতে প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি করান। তবে তিনি প্রক্সিদাতার নাম বলতে পারেননি।

আশিকুর রহমান জানান, তিনি ভর্তি পরীক্ষার আগে মেসের বড় ভাই সোহাগ ও মারুফের মাধ্যমে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার মাধ্যমে প্রক্সি দিয়ে ভর্তি হন। সোহাগ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। মারুফের পরিচয় জানা যায়নি।

রাজু আহমেদ জানান, সাইদুর রহমান নামে জনৈক ব্যক্তির কাছে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি হন। এর বেশি তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি।

গত রোববার ভূমি আইন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী এলিন শেখ একই প্রক্রিয়ায় আটক হন। তিনি দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি হন। তাকে কোতয়ালী থানা পুলিশ আদালতে হাজির করলে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আটককৃতরা ভর্তি পরীক্ষার কোনো তথ্যই দিতে পারেনি। তারা ভর্তি প্রক্রিয়ার কিছুই জানেন না বলে স্বীকার করেছেন। পরীক্ষার আগে জালিয়াত চক্রকে চাহিদামতো টাকা দিয়েছেন। এরপর ওই চক্রই সব করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, প্রক্সি দিয়ে ভর্তির অভিযোগে চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কোতয়ালী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

কোতয়ালি থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগে মামলা হয়েছে। একজন রিমান্ডে আছে। মূল হোতাদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, জালিয়াতি করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। গত ২ বছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সব তথ্য আবার চেক করা হচ্ছে। যেকোনো পর্যায়ে জালিয়াতি ধরা পড়লে ছাত্রত্ব বাতিল হবে এবং আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীতে শিক্ষাবোর্ডের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের সব তথ্য এবং ছবি নেওয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় থেকে শুরু করে কোনো পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আর কোনো তথ্য নেব না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ মার্চ ২০১৮/আশরাফুল/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়