ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তি চান ভুক্তভোগী

আশরাফুল ইসলাম আকাশ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ২৮ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তি চান ভুক্তভোগী

জবি প্রতিনিধি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল হালিম প্রামানিকের (সম্রাট) বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে বৃহস্পতিবার ৭৭তম সিন্ডিকেট সভায় তাকে তিরস্কার এবং নির্ধারিত সময়ের চেয়েও দুই বছর পরে পদন্নোতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্যাতনের শিকার হওয়া এক শিক্ষার্থী। এ বিচার মানেন না তিনি। ওই শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।

নির্যাতনের শিকার হওয়া ওই শিক্ষার্থী শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যেহেতু তাকে তিরস্কার এবং দুই বছর পদোন্নতি থেকে বিরত করা হয়েছে, সেহেতু শাস্তি তাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন একজন যৌন নিপীড়নকারীর শাস্তি মাত্র তিরস্কার? মাত্র দুই বছর পদোন্নতি থেকে বিরত? তাহলে বাঙালি জাতির মা-বোনদের লাঞ্চিত করার শাস্তি শুধু তিরস্কার! বাহ্, বাংলাদেশ বাহ্! আমি এই বিচার মানি না, আমি এই শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তি চাই। সবার সহযোগিতা প্রার্থনা করছি।’

নির্যাতনের শিকার হওয়া নাট্যকলা বিভাগের ওই শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, তার ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টারে অভিনয় প্রস্তুতি-১১০৫ নামে একটা কোর্স ছিল। কোর্স শিক্ষক ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হালিম প্রামানিক। তিনি শিক্ষার্থীদের এ কোর্সের ক্লাস নেওয়ার সময় ছাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন অংশে হাত দিতেন। কোর্সের সংশ্লিষ্ট বিষয় হওয়ায় ছাত্রীরা প্রথমে এ বিষয়টিকে পাঠদানের অংশ হিসাবে মনে করতেন। কিন্তু এ শিক্ষক ইচ্ছা করেই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিতেন।

ওই শিক্ষার্থী জানান, স্যার প্রথমে ঘাড়ে হাত দিতেন। কিন্তু ক্রমান্বয়ে তিনি পেটে ও কোমরে হাত দিলে এ ছাত্রী একদিন হাত সরিয়ে দেন। পরে মৌখিক পরীক্ষার সময় এ আচরণের প্রতিবাদ করলে ওই ছাত্রীকে পরোক্ষ হুমকি দেন শিক্ষক। এ ঘটনার পরপরই এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির অভিযোগ করলে নির্যাতিত এ শিক্ষার্থীও আব্দুল হালিম প্রামানিকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার বরাবর অভিযোগ দেন।

শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ঘটনা তদন্তে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। প্রথম তদন্ত কমিটি স্বাভাবিক প্রশ্ন করলেও দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি তাকে অবান্তর প্রশ্ন করে। এ তদন্ত কমিটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে এ শিক্ষার্থী অভিযোগ দিলে উপাচার্য দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি বাতিল করার আশ্বাস দেন।

নির্যাতিত এ শিক্ষার্থী বলেন, দ্বিতীয় কমিটি আমাদের জেরা করার সময় কিছু অবান্তর প্রশ্ন করে। এ বিষয়ে আমরা উপাচার্য স্যারের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিলে তিনি এ তদন্ত কমিটিটি বাতিল হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের সিন্ডিকেট সভায় আব্দুল হালিম প্রামানিক স্যারের শাস্তি হিসেবে তিরস্কারের সংবাদ শুনে আমরা মর্মাহত। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুল হালিম প্রামানিক (সম্রাট) গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টা ২৫ মিনিটে নাট্যকলা বিভাগের এক ছাত্রীকে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ক্লাসের জন্য বিভাগে আসতে বলেন। ছাত্রীটি সন্ধ্যার দিকে বিভাগে আসলে ওই শিক্ষক তাকে বিভিন্ন একাডেমিক পরামর্শ দিয়ে বিভাগের শ্রেণিকক্ষে বসতে বলেন। শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে তাকে কুপ্রস্তাব দেন শিক্ষক। এ সময় ছাত্রীটি তাকে ধাক্কা মেরে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। পরে আব্দুল হালিম প্রামানিক ছাত্রীটিকে তার রুমে নিয়ে ঘটনার কথা অন্য কাউকে না বলার জন্য অনুরোধ করেন। পরে ১৬ ফেব্রুয়ারি এ ছাত্রী উপাচার্য বরাবর যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। পরে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রশাসন।

এ বিষয়ে জবি উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেছেন, সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সিন্ডিকেটে তাকে তিরস্কার করা হয়েছে। তিরস্কার একজন শিক্ষকের বড় একটা শাস্তি। এছাড়া তার পরবর্তী পদোন্নতিতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দুই বছর বেশি লাগবে। সিন্ডিকেটে এ শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ এপ্রিল ২০১৮/আশরাফুল/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়