ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাংলাদেশের শিক্ষার বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে

আলমগীর হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১১ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলাদেশের শিক্ষার বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে

মেহেদী হাসান

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিক্ষা, সেবা, কমর্সংস্থান ও উন্নয়ন নিয়ে যখন কেউ ভাবেন তখন আদি সমাজব্যবস্থার কুসংস্কারকে ছেড়ে নতুন সত্য, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন সংস্কারমূলক সমাজ সৃষ্টির পথ আলোকিত হয়। এমন মনোভাব নিয়েই মেহেদী হাসান গড়ে তুলেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আর.পি ফাউন্ডেশন।’ এ অদম্য তরুণের জন্ম চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার চণ্ডিপুর গ্রামে। তিনি সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন। ছাত্রজীবনে মেধাবী ছাত্র, মেধার স্ফূরণ তার জীবনকে দিয়েছে বর্ণিল আভা। দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে মানসম্মত শিক্ষার প্রসারে কাজ করছেন নিয়মিত। আর.পি ফাউন্ডেশন একটি স্বপ্নের নাম। এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছেন সামাজিক কাজ করার জন্য। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক বিভিন্ন কাজ করছেন নিয়মিত। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন আলমগীর হোসেন।

বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী?
মেহেদী হাসান : আমাদের দেশে শিক্ষার সুযোগ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কারণ এ খাতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ দিন দিন বেড়েছে। শিক্ষায় অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। ধনী-দরিদ্র সবাই শিক্ষায় আগ্রহী হয়েছে। এখন এ দেশের প্রায় সব শিশু প্রাথমিক শিক্ষা পাচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাক্ষরতার হারে আমাদের উন্নতি ঈর্ষণীয়। এ বিষয়ে বৈশ্বিক পর্যায় থেকে আমরা স্বীকৃতিও পেয়েছি। তবু শিক্ষাঙ্গন নিয়ে হালে নতুন কিছু প্রশ্ন উঠেছে। এর একটি হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ। এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিক্ষার মান, বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থা এসব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কি করা উচিত?
মেহেদী হাসান : পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোর দিকে সরকারের নজর দিতে হবে। এখানে যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ-নীতি কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করা উচিত। ঢাকার বাইরের কলেজ-ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণতন্ত্র চর্চা বন্ধ হয়ে গেছে। গণতন্ত্র চর্চা জরুরি। এ জন্য ছাত্র-সংসদের নির্বাচনগুলো অবিলম্বে চালু করতে হবে।

শিক্ষকদের মাঝে নৈতিকতার অভাব কেন?
মেহেদী হাসান : শিক্ষক হবেন শিক্ষার্থীদের রোল মডেল। তিনি হবেন শিক্ষার্থীদের ‘ফ্রেন্ড, ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড’। শিক্ষার্থীরা কেবল শিক্ষকের কাছে পাঠগ্রহণ করে না, তার কাছে শিখে সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন রচনা এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের কলাকৌশল। আদর্শ শিক্ষক কেবল পাঠ্যক্রমে উল্লেখিত বিষয়ের গণ্ডিতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন না, সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পাঠদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীকে সমাজ, দেশ ও মানবতার কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ একজন পরোপকারী, মানবতাবাদী ও কল্যাণকামী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন।

যে শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এভাবে গড়ে ও বেড়ে ওঠে, যার প্রদর্শিত পথে শিক্ষার্থী নিজের জীবন ও ক্যারিয়ার গড়ে তোলে, ছাত্রছাত্রীরা কেন তেমন শিক্ষককে সম্মান করবে না?
মেহেদী হাসান : শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নকল সরবরাহ ছাড়াও কোচিং বাণিজ্য, প্রশ্নফাঁস, আর্থিক কেলেঙ্কারি, গবেষণা চুরি ও যৌন হয়রানির মতো অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষকরা যদি এমন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকেন তাহলে যুব সমাজ নৈতিক শিক্ষাটা অর্জন করবে কোথা থেকে? এ প্রশ্ন সচেতন মহলের। নীতি-নৈতিকতার বিচার না করে শিক্ষকরা জড়িয়ে পড়ছেন নানা অসামাজিক কাজে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বলে মনে করে দেশের শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা। কোচিংয়ে পড়ানো এবং পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

কোচিং বাণিজ্য শিক্ষার্থীদের কতটা ক্ষতি করছে?
মেহেদী হাসান : ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষক কর্তৃক পরিচালিত কোচিং এবং কোচিং সেন্টার নামক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত একাডেমিক কোচিং ক্যান্সারের মতো অশুভ প্রভাব নিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিরাজ করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যয়। সন্তানের পড়ালেখা করাতে অভিভাবকদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। কোচিং করতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত অনেক অশুভ ঘটনার খবর তুলে ধরা হয়েছে। আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু সবকিছুর পরও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে না। দায়িত্বশীল মহল একে যেন একটি প্রয়োজনীয় বিকল্প হিসেবেই গ্রহণ করছে বলে মনে হয়। কিন্তু এ বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের মূলধারার শিক্ষাকে কলুষিত করে চলেছে এবং শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পর্যাপ্ত শিক্ষা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই জনস্বার্থেই কোচিং বাণিজ্য অবৈধ ঘোষণা করে সব ধরনের কোচিং বন্ধ করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং শিক্ষকদের বাসায় কোচিং নামক যে জ্ঞান বিতরণ চলছে তা জ্ঞান ব্যবসারই নামান্তর। এ ধরনের সেন্টারগুলো এক ধরনের বিপণিবিতান, যেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাস্টমার হিসেবে গ্রহণ করা হয়, কখনো কখনো তাদের নানাভাবে জিম্মি করে নিপীড়নও করা হয়। কয়েক বছর আগে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষক পরিমল জয়ধরের কোচিং-ক্রাইমের যে কলঙ্কিত কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে তাতে হয়ত অনেকেরই টনক নড়েছে। এটি একটি হৃদয়বিদারক ভয়ঙ্কর ঘটনা। তবে গোটা কোচিং ব্যবসাই কোনো না কোনোভাবে অনৈতিক এবং অশুভ সিস্টেম, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অভিভাবকরা নানাভাবে এ প্রক্রিয়ার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা নিপীড়িত হচ্ছে। যাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনুকরণীয় আদর্শ মনে করবে এবং সেই আদলে নিজের জীবন গড়ার চেষ্টা চালাবে, তাদের হাতে অর্থ এমনকি ইজ্জত বিলিয়ে দিতে বাধ্য হয়ে নতুন প্রজন্মের অনেকেরই আদর্শ মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। বর্তমান বাংলাদেশে ভালোভাবে পাস করতে হলে শিক্ষার্থীদের কোনো না কোনো কোচিং বাণিজ্যের শিকার হতে হয়।

অধিকাংশ স্কুল এখন হয়ে উঠেছে কোচিংয়ের ফাঁদ। শিক্ষকদের মধ্যে একটা বিরাট অংশ তাদের কর্মরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একটি বিশেষ ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে তারা তাদের ব্যক্তিগত কোচিংয়ে শিক্ষার্থী জোগাড় করেন। মূল ব্যবসা তাদের এ প্রাইভেট প্র্যাকটিস। কেউ হয়ত বিষয়টিকে অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করতে পারেন। চিকিৎসকরা যেমন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করান, শিক্ষকদের তেমনটি করলে ক্ষতি কী? এক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ক এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক কিন্তু এক বিষয় নয়। চিকিৎসককে কোনো রোগীর অনুকরণীয় আদর্শ ভাবার আবশ্যকতা নেই। কিন্তু একজন শিক্ষককে প্রকৃতভাবে তার শিষ্যদের শিক্ষা দিতে হলে শিষ্যদের মনের মধ্যে ঢুকতে হয়। তার কাছে আদর্শ ব্যক্তি হয়ে উঠতে হয়। নতুবা তার কোনো জ্ঞানই সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের অন্তরে ঠিকমতো প্রবেশ করে না। যেসব শিক্ষক শুধু অর্থ উপার্জনের বাসনা থেকে শিক্ষার্থীদের অনেক ধরনের কৌশলে প্রাইভেট কোচিংয়ে আসতে বাধ্য করেন, তাদের শিক্ষার্থীরাও তাদের আদর্শ শিক্ষাগুরু হিসেবে সম্মান করতে পারে না। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এ ধরনের শিক্ষকের অবস্থান অনেক ক্ষেত্রেই পণ্যবিক্রেতার মতো। আর সার্বিকভাবে এ ধরনের বাস্তবতার শিকার হচ্ছে আমাদের শিক্ষক সমাজ। তবে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পেয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের ভালো শিক্ষকদের কাছে স্বেচ্ছায় কোচিং করতে যায়। এ বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ভালো কাজ করছেন বলেই মনে হয়। তবে এক্ষেত্রে তিনি তার নিজের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অধিকারকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, কর্মস্থলে অর্থাৎ তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি কতটা ভালো দায়িত্ব পালন করছেন তাও বিবেচনায় আনা দরকার। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা নিজ নিজ দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করলে কোনো শিক্ষার্থীরই প্রাইভেট কোচিংয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে সব শিক্ষার্থীকে সমানভাবে পাঠদান সম্ভব না হলে প্রয়োজনে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই বিশেষ ব্যবস্থায় এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। তাদের জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিশেষ কোচিং চালু করা যায়। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষ বা অভিভাবকদের চাপে এ ধরনের ব্যবস্থা চালু থাকলেও কার্যত অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়ে ওঠে লোকদেখানো ব্যাপার। অধিকাংশ শিক্ষকই সেখানে আন্তরিক থাকেন না। এমনকি শিক্ষার্থীদের এসব স্কুল কোচিং, কলেজ কোচিংয়ে আসতে শিক্ষকরা অনেক ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করেন বলে অভিযোগ আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা উৎসাহিত করেন তাদের ব্যক্তিগত কোচিংয়ে যেতে। উদ্দেশ্য একান্তই আত্মস্বার্থকেন্দ্রিক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে জ্ঞানব্যবসা করা।

প্রশ্ন ফাঁস ব্যপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন?
মেহেদী হাসান : পাবলিক পরীক্ষাসহ সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস এখন নিয়মিত ঘটনা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের বিস্তর অভিযোগ উঠে। হয় পরীক্ষার আগের রাতে কিংবা পরীক্ষার দিন সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ নিলেও প্রশ্নফাঁস রোধ করতে ব্যর্থ। সমাজে নৈতিকতাহীনতার চর্চার ভয়াবহ রূপ হচ্ছে প্রশ্নফাঁস। প্রশ্নফাঁস বেশি ক্ষতি করছে মেধাবী শিক্ষার্থীদের। অবিলম্বে এটি বন্ধ করতে না পারলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে পড়বে, মেধাহীন হবে জাতি।

বর্তমানে জিপিএ ফাইভ নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা নিয়ে কিছু বলুন?
মেহেদী হাসান : আসলেই এটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা। আমরা সবাই এসবের পেছনে দৌঁড়াচ্ছি। শিক্ষার মানদণ্ডের কথা মাথায় আসে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রসরের মানদণ্ড বলতে কোনটিকে বুঝায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে অভিনব পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস, জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বৃদ্ধি, শিক্ষার হার বৃদ্ধি নাকি কথার চাটুকারিতা? গত কয়েকটি বছর ধরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে এ কথাগুলো খুব বেশি আলোচিত হচ্ছে, যত না আলোচিত হচ্ছে শিক্ষার মান নিয়ে। শিক্ষাকে একটি জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে শিক্ষা কি শুধুই কাগজে কলমে জাতির মেরুদণ্ড? সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার দৈন্যতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এখন আমাদের দেশে জিপিএ-৫ না পাওয়াটা চরম অন্যায়! যে করেই হোক জিপিএ-৫ পেতেই হবে। এজন্য আলো বা আঁধার যেকোনো পথেই পা বাড়াচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবকরাও। যার ফলশ্রুতিতে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা এবং শিক্ষার হার। জিপিএ-৫ এবং শিক্ষার হার বৃদ্ধি দোষের কিছু নয়, কিন্তু যখন দেখা যায় এসব জিপিএ-৫ প্রাপ্তরা প্রকৃত মেধার স্বাক্ষর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে ঠিক তখনি শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। এ দেশে জিপিএ-৫ এর মানদণ্ড কোনটি তা নির্ণয় করা কঠিন। স্বাভাবিকভাবে শতকরা আশি মার্কস পাওয়া শিক্ষার্থীটি মেধাবী হওয়ার কথা, কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় তারা কি সেই মেধার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হচ্ছে? মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দেশসেরা এসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশই ফেল করছে। ফলে প্রশ্ন ওঠেছে এটা কি শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতা নাকি শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি?

বিদ্যমান পদ্ধতিতে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বৃদ্ধি দেখে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান বেড়েছে, এমনটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। জিপিএ-৫ এর পোশাক পরালেই মেধাটা জিপিএ-৫ হবে না। সামান্য পড়লেই, সামান্য লিখলেই যদি কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়, তার জন্য অধিক মনোনিবেশ করার যে প্রয়োজন নেই, তা মাধ্যমিক কেন, প্রাথমিক সমাপনী শিক্ষার্থীরাও জানে তবুও আমাদের শিক্ষা ভালোভাবেই চলছে। এই চলাকে বিজ্ঞাপনের জোরে চলা বলাই ভালো। বাজারে নতুন পণ্য এলে বিজ্ঞাপনের জোরে কিছু দিন তা চলে, তারপর ভালো না হলে আমজনতা সেই পণ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকেও মানুষ এখন মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। তাই এখনই যদি শিক্ষার প্রতি নজর দেওয়া না হয় তাহলে অচিরেই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যত রকম প্রচেষ্টাই নেওয়া হোক না কেন, শিক্ষাক্ষেত্রে পর্যাপ্ত গুরুত্ব না দিলে তা কখনই সম্ভব হবে না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ মে ২০১৮/আলমগীর হোসেন/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়