ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ধ্বংসের মুখে পুরাকীর্তি তাড়াশ ভবন

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ২১ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ধ্বংসের মুখে পুরাকীর্তি তাড়াশ ভবন

শাহীন রহমান, পাবনা : সংস্কার আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে পাবনার অন্যতম পুরাকীর্তি তাড়াশ ভবন।

 

র্দীঘ ১৮ বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ভবনটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় ভবনটি সৌন্দর্য হারিয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড। ইতিহাস আর গৌরবের কালের সাক্ষী এ ভবনটি সংস্কারে এখনই উদ্যোগ না নিলে অচিরেই এটা পরিত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

 

পাবনা জেলার ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীতে পাবনার সবচেয়ে বড় জমিদার রায় বাহাদুর বনমালী রায়ের অমর কীর্তি তাড়াশ ভবন। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে নান্দনিক সৌন্দর্য আর স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন এ ভবনটি তাঁড়াশের রাজবাড়ী নামেও পরিচিত।

 

ব্রিটিশ শাসনামলে ইউরোপীয় রেনেসাঁ রীতিতে নির্মিত এ জমিদারবাড়ি আজও দাঁড়িয়ে আছে রায় বাহাদুরের প্রতীক হয়ে। পাবনার জমিদারদের মধ্যে সবচেয়ে নামকরা এবং পুরাতন বলে পরিচিত তাড়াশের এই জমিদার।

 

বগুড়া জেলার চান্দাইকোণার কাছে কোদলা গ্রামে একঘর কায়স্থ জমিদার ছিলেন। এই জমিদারই তাড়াশের রায়বংশের পূর্বপুরুষ বাসুদেব। তাড়াশের এই পরিবার ছিল বৃহত্তর পাবনা জেলার সবচেয়ে বড় জমিদার। বাসুদেব নবাব মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব বিভাগে চাকরি করে প্রতিষ্ঠা করেন রাজবাড়ি। নবাব মুর্শিদকুলি খান বাসুদেবকে ‘রায়চৌধুরী’ খেতাবে ভূষিত করেন। তার জমিদারী ছিল প্রায় ২০০ মৌজা নিয়ে।

 

সুদৃশ্য তোরণ বিশিষ্ট আয়তাকার এ ভবনটিকে ১৯৯৮ সালের ৮ জানুয়ারি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। তবে ঘোষণার ১৮ বছর পার হলেও সংস্কার ও সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় ভবনটি সৌন্দর্য হারিয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে।

 

 

সীমানা প্রাচীর ভেঙে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে জমিদার বাড়ির পুরো এলাকা। মাদকসেবীদের অবাধ আনাগোনায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। কারুকার্য খচিত ভবনের অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে নকশা, খসে পড়েছে পলেস্তরা। ভাঙা প্রায় প্রতিটি জানালার কাঁচ। দীর্ঘদিন রং না করায় দেয়ালে জমেছে শৈবাল।

 

জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণে গড়ে উঠেছে অটোরিকশা স্ট্যান্ড। ভবনের আঙ্গিনায় স্ট্যান্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করলে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন অটোচালক বলেন, শহরের যানজট কমানোর স্বার্থে এ স্থানে তারা স্ট্যান্ড গড়েছেন। এতে জনগণের উপকারই হচ্ছে। প্রশাসন তাদের কখনো বাধা দেয়নি বলেও জানান তারা। 

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অটোচালক জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি এখানে স্ট্যান্ড গড়েছেন। প্রতি ট্রিপের জন্য নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে তারা এখান থেকে গাড়ি চালান। প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই প্রশাসনকে ম্যানেজ করেন।

 

সরেজমিন গিয়ে আরো দেখা যায়, বিশাল এ স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন দুজন প্রহরী। নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলেও পরিস্থিতির কাছে তাদের অনেকটাই অসহায় মনে হয়েছে। এ বিষয়ে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।

 

দিলালপুর এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বলেন, বাপ দাদার মুখে এ বাড়ির কত গল্প শুনেছি। রায় বাহাদুর বাড়ির গেট নিয়ে আমরা গর্ব করতাম। শুনেছিলাম এখানে পর্যটন কেন্দ্র করবে, সংগ্রহশালা করবে, কিন্তু তার কোনো বাস্তবায়ন আজও হয়নি। এমন সুদৃশ্য স্থাপনা এভাবে নষ্ট হতে দেখে খুবই মন খারাপ হয়।

 

সরকারের অবহেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জমিদার বাড়ি সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তারা।

 

এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রাণী বালো বলেন, ভবনটি সংস্কারের ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) পাবনার সভাপতি আব্দুল মতীন খান বলেন, পুরাকীর্তিগুলো জেলার গর্ব। কিন্তু সরকার বা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর পুরাকীর্তি সংরক্ষণের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। ফলে অনেক নির্দশন ধ্বংস হয়ে গেছে। যেটুকু আছে সেগুলো ধরে রাখা না গেলে ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবেনা নতুন প্রজন্ম।

 

 

 

রাইজিংবিডি/পাবনা/২১ অক্টোবর ২০১৬/শাহীন রহমান/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়