ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘বাবাকে বলবে, জজ সাহেব স্কুলে যেতে বলেছেন’

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৬, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বাবাকে বলবে, জজ সাহেব স্কুলে যেতে বলেছেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘বাবুরা, এদিকে এসো। তোমাদের কি আদালতে আসতে ভয় লাগে? ভয়ের কিছু নাই। কী নাম তোমাদের?’

রোববার হাইকোর্টে হাজির করা ‘খুনি’ সন্দেহে গ্রেপ্তার দুই শিশুর সঙ্গে এভাবে অভিভাবকসুলভ ভঙ্গিতে কথা বলেন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক।

দুরু দুরু বুকে ওই দুই শিশু ডায়াসের সামনে এগিয়ে আসে। এ সময় বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক আবারও প্রশ্ন করেন, তোমরা কী করো?

শিশু দুটি জানায়, তারা গাড়িতে কাজ করে। তারা আরো জানায় যে, তাদের কেউই স্কুলে যায় না। 

এ সময় বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক বলেন, ‘এতটুকু বয়স, ওদের তো এখন স্কুলে থাকার কথা। কিন্তু আজ এই শিশুদের কাজ করে খেতে হয়। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা, সমাজপতিরা অনেক কথা বলেন। কিন্তু এ বিষয় তাদের চোখে পড়ে না। রাষ্ট্রের তো দায়িত্ব ছিল এই শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার। এতটুকু বাচ্চা কাজ করে, এটা আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য লজ্জার। আমাদের সমাজ এর কী জবাব দেবে? সরকার এতো টাকা খরচ করে, এদিকে একটু গুরুত্ব দিলেই তো পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার আইন করুক, স্কুল টাইমে শিশুরা বাইরে ঘোরাফেরা করলে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেবে। স্কুল টাইমে শিশুদের ধরে নেওয়ার পর তাদের অভিভাবককে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। এ ছাড়া এই শিশুদেরকে যারা কাজে নেবে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এ ধরনের আইন আছে।’

দুই শিশুর উদ্দেশে বিচারপতি কাজী রেজা-উল বলেন, ‘বাবাকে গিয়ে বলবে, জজ সাহেব স্কুলে যেতে বলেছেন। আর বড় হয়ে তারপর কাজ করবে।’

এরপর আদালত ‘খুনি’ সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের ৮ ও ৯ বছর বয়সি শিশু দুটিকে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেন। একই সঙ্গে আদালত এই দুই শিশুটিকে নিরাপত্তা দিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি ও কামরাঙ্গীরচর থানার ওসিকে আদেশ দেন।

রোববার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।বয়স নির্ধারণ না করে দুই শিশুকে গ্রেপ্তার করায় শিশু আইনের ৪৪ ধারা লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন আদালত।

আদালতে শিশুদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

গত ২৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে `লাশের পরিচয় মেলেনি, খুনি সন্দেহে ২ শিশু গ্রেপ্তার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করা হয়।

ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় দুই মাস আগে পুলিশ অজ্ঞাত এক শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছিল। এর ১০ দিন পর লাশটি নিজেদের নিখোঁজ হওয়া এক শিশুর, এ দাবি করে শিশুটির পরিবার হত্যা মামলা করে। ওই মামলায় খুনি সন্দেহে দুই শিশুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিচারিক হাকিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে তাদের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠান। বিষয়টি নিয়ে রিট করলে দুই শিশুকে হাজির করার নির্দেশ দেন আদালত। সেই নির্দেশ মোতাবেক আজ দুই শিশুকে আদালতে হাজির করা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জানুয়ারি ২০১৭/মেহেদী/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়