ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আকবর অ্যান্থনিকে রেখে চলে গেলেন অমর

অহ নওরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৩, ২৭ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আকবর অ্যান্থনিকে রেখে চলে গেলেন অমর

বিনোদ খান্না

অহ নওরোজ : বলিউডের এক সময়ের পর্দা কাঁপানো ও জনপ্রিয় অভিনেতা বিনোদ খান্না আর নেই। ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি।

দীর্ঘ সিনেমা ক্যারিয়ারে অভিনয় দিয়ে দর্শকের মনে স্থায়ী আসন দখল করে নিয়েছেন এ অভিনেতা। শুধু তাই নয়, পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর থেকে লোকসভা সদস্য হিসেবে একাধিকবার জয়লাভও তার বিশাল জনপ্রিয়তার পরিচায়ক।

বিনোদ খান্না ১৯৪৬ সালের ৬ অক্টোবর বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশওয়ারে একটি পাঞ্জাবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কিশাণচাদ খান্না ছিলেন একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি কাপড়ের পাশাপাশি রঙের ব্যবসাও করতেন।



কিশাণচাদ খান্নার ৩ মেয়ে ও ১ ছেলের মধ্যে বিনোদ খান্না ছিলেন সকলের ছোট। ১৯৪৬ সালে বিনোদ খান্নার জন্মের বেশ কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসার প্রয়োজনে পরিবারসহ মুম্বাইয়ে চলে আসেন তার বাবা কিশঙ্কর খান্না। এখানেই শৈশব কাটে তার। তবে স্কুলে যেতে বেশ দেরি হয়েছিল তার। তিনি যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করেন তখন তার বয়স সাড়ে আট বছর। ভর্তি হয়েছিলেন মুম্বায়ের সেন্ট মেরি স্কুলে। কিন্তু এখানে বেশিদিন পড়া হয়নি তার। দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে ১৯৫৭ সালে তার বাবা আবারো পরিবারসহ পাড়ি জমান দিল্লীতে। সেখানে গিয়ে দিল্লি পাবলিক স্কুলে কিছুকাল পড়েন।

১৯৬০ সালে তার পরিবার ফিরে আসে মুম্বাইয়ের দিওলালিতে। তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয় দেওলালির বার্নস স্কুলে। অন্যান্য স্কুল থেকে এই স্কুলটি ছিল আলাদা। এখানে সবাইকেই স্কুলের বোর্ডিংয়ে থেকে পড়াশোনা করতে হতো। প্রথমবারের মতো এই স্কুলে আসার মাধ্যমে পরিবারের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হয় তার জীবন। মূলত এই স্কুলে থাকাকালে সিনেমার প্রতি প্রবল আগ্রহ তৈরি হয় বিনোদ খান্নার। স্কুলে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যেতেন সিনেমা দেখতে। এই সময়েই তিনি দেখেন ‘সোলওয়া সাল’, ‘মুঘল-ই-আজম’র মতো সিনেমা। স্কুল শেষ করে মুম্বাইয়ের সিদেনহাম কলেজে ভর্তি হন বিনোদ। আর এখানে থাকতেই তার পরিচয় ঘটে বলিউডের অন্যতম পরিচালক এবং অভিনেতা সুনীল দত্তের সঙ্গে। সুনীল দত্ত ছিলেন বিনোদ খান্নার এক শিক্ষকের বন্ধু।



সুনীল দত্তের হাত ধরেই বলিউডে বিনোদ খান্নার অভিষেক হয়। পরিচালক আদিত্য সুভহা রাও পরিচালিত ‘মন কা মিত’ সিনেমায় প্রথমবারের মতো অভিনেতা হিসেবে নাম লেখান বিনোদ। ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটিতে খলচরিত্রে অভিনয় করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। যে কারণে সিনেমাটি মুক্তির পরপরই খল চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পান। কাউকেই ফিরিয়ে দেননি তিনি। ফলশ্রুতিতে ১৯৭০ সালে একসঙ্গে মুক্তি পায় বিনোদ খান্না অভিনীত ‘পূরব আউর পশ্চিম’, ‘সাচ্চা ঝুটা’, ‘আ মিলো সাজনা’, ‘মাস্তানা’ সিনেমাগুলো। প্রতিটি সিনেমাতেই তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এরপরের বছর মুক্তি পায় ‘মেরা গাও মেরা দেশ’ এবং ‘এলান’ সিনেমা দুইটি।

কিন্তু পরিবর্তীতে খলনায়ক নয়, বরং সিনেমার প্রধান নায়ক হিসেবেই সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেছেন বিনোদ খান্না। বলিউডে যারা খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করে যাত্রা শুরু করে পরবর্তীতে মূল নায়ক হিসেবে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছেন তাদের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য।



প্রথমবারের মতো বিনোদ খান্না খলনায়ক চরিত্রের বদলে সিনেমার কেন্দ্রীয় নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন ‘হাম তুম আওর ওহ’ সিনেমায়। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালে। একজন নৌ অফিসারের জীবন কাহিনি ছিল সিনেমাটির উপজীব্য। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী ভারতী বিষ্ণুবর্ধন। মুক্তির পরপরই রোমান্টিক ঘরানার এই সিনেমাটি প্রচুর দর্শকপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে সিনেমাটির ‘প্রিয়ে প্রানেশারি’ এবং ‘দো বাতো কি মুজকো হায় তামান্না’ গান দুটি প্রচুর দর্শকপ্রিয়তা পায়। এরপর থেকে নতুন নায়ক হিসেবে বলিপাড়ায় নতুন যাত্রা শুরু হয় বিনোদ খান্নার।

এরপর ১৯৭৩ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত একাধারে বেশকিছু সিনেমায় নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন, যার অধিকাংশই ছিল ব্যাবসাসফল। এদের মধ্যে অভিনেত্রী মৌসুমি চ্যাটার্জির বিপরীতে ‘ফারেবি’, এবং ‘হাতায়ারা’, লিনা চন্দ্রবকরের বিপরীতে ‘কয়েদ’, এবং ‘জালিম’, বিদ্যা সিনহার বিপরীতে ‘ইনকার’, যোগিতা বালির বিপরীতে ‘গাদ্দার’, রেখার বিপরীতে ‘আপ কি খাতির’ এবং ‘রাজমহল’, শাবানা আজমির বিপরীতে ‘খুন কি পুকুর’ এবং ‘শক’ ছাড়াও ‘আধে দিন আধে রাত’, জিনাত আমানের বিপরীতে ‘দৌলত’সহ আরো অনেক সিনেমা দর্শকপ্রিয়তা পায়। এছাড়া ১৯৮০ সালে বিনোদ খান্না ও জিনাত আমান অভিনীত ‘কুরবানি’ সিনেমাটি সে বছরের সেরা ব্যবসাসফল সিনেমা হওয়ায় তার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়।



বিনোদ খান্না অভিনীত ‘লেইকিন’ ‘সুরিয়া’ ‘অমর আকবর অ্যান্থনি’, ‘লাহু কে দো রঙ’, ‘কুরবানি’, ‘দয়াবান’, ‘হাত কি সাফাই’ ‘ইনসাফ’, ‘সত্যমেভ জয়তে’ প্রভৃতি সিনেমাগুলো বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ‘অমর আকবর অ্যান্থনি’ ছবিতে অমর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সুপারহিট ওই ছবির অ্যান্থনি (অমিতাভ বচ্চন) ও আকবরকে (ঋষি কাপুর) রেখে চির বিদায় নিয়েছেন অমর চরিত্রের বিনোদ খান্না।

১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সিনেমা থেকে দূরে ছিলেন বিনোদ খান্না। এরপর ফিরে এসে কয়েকটি ছবি করেন। কেন্দ্রীয় চরিত্র ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবেও কাজ করেছেন বিনোদ। প্রায় ১০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। যার স্বীকৃতিস্বরূপ দুইবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, জি সিনে অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। বিনোদ খান্না অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা ‘দিলওয়ালে’। এতে রণধীর বকশির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এছাড়া ‘দাবাং’, ‘দাবাং-টু’ সিনেমায় অভিনয় করেন বিনোদ খান্না। 



সিনেমার পাশাপাশি রাজনীতিতেও বেশ সক্রিয় ছিলেন এই অভিনেতা। ১৯৯৭ সালে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) যোগদান করেন। এই দল থেকেই মনোনয়ন পেয়ে তিনি একাধিকবার পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর থেকে লোকসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।



তিনি ১৯৭১ সালে অভিনেত্রী গীতাঞ্জলীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। এরপর তিনি কবিতা খান্নাকে বিয়ে করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন পুত্র এবং এক কন্যার জনক। তার পুত্রদের মধ্যে দুজন বর্তমান বলিপাড়ায় বেশ জনপ্রিয়। এদের মধ্যে একজন হলেন- রাহুল খান্না এবং অন্যজন অক্ষয় খান্না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ এপ্রিল ২০১৭/মারুফ/ফিরোজ 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়