ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জঙ্গি আস্তানায় অস্ত্র-বোমা

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১২ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জঙ্গি আস্তানায় অস্ত্র-বোমা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুরে জঙ্গি আস্তানায় অস্ত্র ও বোমা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তবে অপারেশন ‘সান ডেভিল’ পরিচালনাকারী দলের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। দলের সঙ্গে থাকা একটি সূত্র বিষয়টি জানিয়েছে।

ওই সূত্র জানায়, জঙ্গি আস্তানায় ১১টি বোমা, একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগজিন পাওয়া গেছে। এখন বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করার কাজ চলছে। সকাল পৌনে ১১টার দিকে যে বিকট শব্দ শোনা যায়, সেটি উদ্ধার হওয়া বোমার বিস্ফোরণের শব্দ।

মাটির নিচে পুঁতে বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় বিস্ফোরণের এ শব্দটি শোনা যায়। বোমা নিষ্ক্রিয় করার কাজ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষ শাখার বোমা বিশেষজ্ঞ দল। তবে ১১টি বোমা একসঙ্গে মাটির নিচে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে কী না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে বাড়িতে অস্ত্র ও বোমা পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে, মাঠের ভেতর নির্জন এই বাড়িটিতে জঙ্গিদের অস্ত্র পরিচালনা ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। বিষয়গুলো নিশ্চিত হতে আরো গভীরভাবে অনুসন্ধান করছে অভিযান পরিচালনাকারী দল।

শুক্রবার সকালে এই জঙ্গি আস্তানায় দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান শুরু হয়। পরে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী ক্ষুদে বার্তায় সাংবাদিকদের জানান, জঙ্গি আস্তানায় চারটি ঘর আছে। তবে সেখানে জীবিত অবস্থায় কেউ নেই। সেখানে কোনো লাশ বা বিস্ফোরকদ্রব্য আছে কী না, সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি।

 



বৃহস্পতিবার ভোরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মাটিকাটা ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের সাজ্জাদ আলীর বাড়িটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। এরপর ভেতরের জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু জঙ্গিরা এতে সাড়া দেয়নি। পুলিশ তখন ফায়ার সার্ভিসকে ডেকে পানি ছিটিয়ে বাড়ির পেছনের মাটির দেয়ালটি ভেঙে ফেলতে তৎপরতা শুরু করে।

এ সময় জঙ্গিরা বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এর ফলে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী নিহত হন। আর আহত হন দুই পুলিশ সদস্য। এ ঘটনার পর দুই নারীসহ পাঁচ জঙ্গি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়।

তবে পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সুমাইয়া নামে এক নারী আত্মসমর্পণ করেন। এর আগে জঙ্গি আস্তানার পাশ থেকে সুমাইয়ার দুই শিশু সন্তানকে উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত জঙ্গিদের মধ্যে সুমাইয়ার বাবা, মা, ছোট ভাই ও বোন রয়েছে। নিহত অপর এক জঙ্গি এই বাড়িতে অবস্থান করছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের লাশ বাড়ির পাশের জমিতে পড়ে আছে। এখন সেগুলো উদ্ধারের তৎপরতা চলছে।

বৃহস্পতিবার অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও এক ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নিহত হওয়ার পর বাড়ির ভেতরে অভিযান চালানোর জন্য এই বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছিল। তবে তারা আসতে দেরি করায় ওই রাতে অভিযান স্থগিত করা হয়। পরে শুক্রবার সকাল থেকে ‘অপারেশন সান ডেভিল’ শুরু হয়। এ অপারেশনের মধ্যে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথমবারের মতো একতলা টিনের ওই বাড়িটিতে ঢোকে।

এদিকে জঙ্গি আস্তানার চারপাশে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখনো ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। আশপাশের বাড়ির বাসিন্দাদেরও মাইকিং করে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযান এখনো চলমান থাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এলাকায়। উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সাধারণ মানুষও।



রাইজিংবিডি/রাজশাহী/১২ মে ২০১৭/তানজিমুল হক/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ