ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রয়াত শিল্পী লাকি আখান্দকে নাগরিক শ্রদ্ধা

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ২২ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রয়াত শিল্পী লাকি আখান্দকে নাগরিক শ্রদ্ধা

আরিফ সাওন : প্রয়াত সুরকার, সংগীত পরিচালক ও শিল্পী লাকি আখান্দকে নাগরিক শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে লাকি আখান্দকে মরণোত্তর শ্রদ্ধা জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, গীতিকবি কাওছার আহমেদ চেীধুরী, বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের(বামবা) সভাপতি হামিন আহমেদ।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, শেষ তাকে (লাকি আখন্দ) দেখেছিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেবিনে। তখন তিনি হয়ত কাউকে চিনতেন না। সবাইকে চলে যেতে হবে- এটাই নিয়ম। সময়ের আগে যদি কেউ চলে যায়, তখন তা মানুষকে বেশি ব্যথা দেয়, বেশি কাঁদায়। তার যে বয়স, সে বয়সের অনেকেই বেঁচে আছেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। তিনি ছিলেন শিল্প-সংস্কৃতি জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, সংগীতের অনন্য প্রতিভা। তিনি একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। বিরল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন লাকি আখান্দ।

তিনি আরো বলেন, তার দেওয়া নীল মণিহার আমরা বুকে ধরে রেখেছি। লাকি আখান্দ যতই বলুক, আমায় ডেকো না, কিন্ত আমরা তাকে ডাকবই। ১০০ বছর পরেও মানুষ লাকি আখান্দের গান শুনবে। বেশিরভাগ মানুষ হারিয়ে যায়। আমার বিশ্বাস, তিনি হারাবেন না। শিল্পী অসাম্পদায়িক, দেশপ্রেমিক। তিনি মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করলেন, শিল্পীর দেশ আছে। রাজনীতিকরা কখনো কখনো নির্লজ্জ আপোস করেন। কিন্তু শিল্পীরা আপোস করেন না। তারা কোনো না কোনোভাবে প্রতিবাদ করেন। লাকি আখান্দের সৃষ্টি-কর্ম সংরক্ষণ করা হবে।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, একটি নাটকে নীল মণিহার গানটা ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি আমার অনেক ছোট। অন্তত ১০ বছরের। কিন্ত ওই গানের সূত্র ধরে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, তিনি এমনই এক কালব্যাধিতে আক্রান্ত হন, তাকে আর আমরা ধরে রাখতে পারিনি। বিএসএমএমইউতে যখন তার সঙ্গে আমার দেখা হয়, তখন তিনি আমার হাত ধরে বলেছিলেন, আমি কিন্তু ফিরে আসব, কিন্তু তিনি তার সেই কথা রাখতে পারেননি। তিনি আর ফিরে আসলেন না। তাকে হারিয়ে আমাদের সংগীতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। লাকির প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। আমাদের শিল্পীদের গানের আর্কাইভ করা হবে। আমরা একটি প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছি। সেখানে লাকি আখান্দের সৃষ্টি-কর্ম রাখব।

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমার মনে হয়, সুরস্রষ্টারা সবচেয়ে বড় শিল্পী। লাকি আখান্দ বাংলা সংগীতের এক অনন্য স্রষ্টা। তিনিও নজরুলের মতো দারিদ্র্য নিয়ে কথা বলেছেন। বলেছেন, দরিদ্রতা ছিল বলে আমি হয়ত সংগীত সৃষ্টি করতে পেরেছি। তার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য এখানে একত্রিত হয়েছি। প্রতি বছর তার জন্য স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান করতে চাই। লাকি আখান্দের কাছ থেকে অনেক সৃজনশীল কর্ম আদায় করে নেওয়ার সুযোগ ছিল। বাংলাদেশ সংস্কৃতির দেশ। আমাদের শক্তি হচ্ছে সংস্কৃতি। এক দিনের জন্য নয়, প্রতিদিনের জন্য লাকি আখান্দকে আমাদের কাছে রাখতে হবে।

ঢাকাকে সংস্কৃতি রাজধানী করার জন্য মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান লিয়াকত আলী লাকী।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, আজ থেকে ১১ মাস আগে টিংকু আমায় ফোন করে বলল, লাকি আমায় দেখতে চায়। আমি বললাম আমি তো বাসা চিনি না। টিংকু বলল, আমি নিয়ে যাব। টিংকু নিয়ে গেল। বাসায় গেলাম। লাকি হঠাৎ বলে উঠল, আমি গান গাইব। তার প্রথম গান শুনি ১৯৮৪ সালে। তারপর দেখা হলো হাসপাতালে, হাত ধরে বলল, দোস্ত আনিস, বাঁচতে ইচ্ছে করে। আমি বললাম, তুমি তো বেঁচে আছ। লাকি বলল, না, আমার গান গাইতে ইচ্ছে করে।

মেয়র আরো বলেন, লাকিদের ধরে রাখার জন্য আমাদের যে ধরনের নেতৃত্ব দরকার, তা আছে। আমাদের মনে হয়ে খোলা মাঠে লাকির গান গাওয়া উচিত। সব শিল্পী একসাথে গান গাইবে। আজ এ মাঠে, কাল ও মাঠে । লাকিরা হারায় না, বেঁচে থাকে। তাদের ধরে রাখার জন্য মেয়র হিসেবে আমার যতটুকু করার, আমি করব।

অনুষ্ঠানে লাকি আখান্দের ওপর নির্মিত ভিডিওচিত্র, লাকি আখন্দের সুরারোপিত শেষ গানের মিউজিক ভিডিও প্রদর্শন ও তার সুরারোপিত জনপ্রিয় তিনটি গান পরিবেশ করা হয়।

লাকি আখান্দ দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত ২১ এপ্রিল মারা যান তিনি।

লাকি আখান্দ ১৯৫৬ সালের ৭ জুন ঢাকার পাতলা খান লেনে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৫ বছর বয়সেই তিনি তার বাবার কাছে সংগীতে হাতেখড়ি নেন। লাকি আখান্দ ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টেলিভিশন এবং রেডিওতে শিশুশিল্পী হিসেবে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সেই এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হন।

লাকি আখান্দের সুর করা ও গাওয়া উল্লেখযোগ্য গান- আবার এলো যে সন্ধ্যা, কে বাঁশি বাজায় রে, আগে যদি জানতাম, আমায় ডেকো না, মামুনিয়া, এই নীল মনিহার প্রভৃতি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুলাই ২০১৭/সাওন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়