ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘আমার বউ মনোয়ারার সঙ্গে গোপন কথা বলব’

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ১৬ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আমার বউ মনোয়ারার সঙ্গে গোপন কথা বলব’

‘নূর আলমের ক্যাসেট’ টেলিফিল্মের দৃশ্যে চঞ্চল চৌধুরী, প্রিয়া আমান

বিনোদন ডেস্ক : নব্বই দশকে যেসব গ্রামে বিদুৎ ছিল না তখন মানুষজন চার্জার ব্যাটারি দিয়ে টেপ রেকর্ডার শুনত। বিদেশ থেকে পাঠানো প্রিয় মানুষের রেকর্ড করা কথা শুনতে উঠানজুড়ে বসত মা-খালা, বউ-ঝিদের আসর। সবার কান টেপ রেকর্ডারের দিকে। এমন প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত হয়েছে টেলিফিল্ম ‘নূর আলমের ক্যাসেট’।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে টেলিফিল্মটির মাধ্যমে দর্শকদের খানিক সময়ের জন্য অতীতে ফিরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা দেখিয়েছেন তরুণ নির্মাতা হিমু আকরাম। টেলিফিল্মটির চিত্রনাট্যও করেছেন হিমু। সংলাপ রচনা করেছেন দয়াল সাহা। এতে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, হুমায়ুন সাধুসহ অনেকে।

রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে নাট্য নির্মাতা হিমু আকরাম বলেন, ‘‘নব্বই দশকের ঘটনা। আমার খালাত ভাই নূর আলম বিদেশে থাকত। আমি তখন অনেক ছোট। সে একটি টেপ রেকর্ডার সৌদি আরব থেকে পাঠিয়েছিল। তখন কথা রেকর্ড করে নূর আলম দেশে ক্যাসেট পাঠাত। একবার সে একটি ক্যাসেট পাঠায়। আমরা সবাই মিলে উঠানে বসে ওর রেকর্ড করা কথা শুনছিলাম। এক পর্যায়ে ও বলে, আপনারা সবাই এখন চলে যান, এখন আমি আমার বউ মনোয়ারার সঙ্গে গোপন কথা বলব। এ কথা শুনে সবার মনে প্রশ্ন জাগে বউয়ের সঙ্গে তার কি এমন গোপন কথা? তারপর সংসারে শুরু হয় অশান্তি। বাস্তব এই ঘটনা অবলম্বনে ‘নূর আলমের ক্যাসেট’ টেলিফিল্মটির গল্প গড়ে উঠেছে।”



তবে এই গল্পটি পর্দায় রূপায়ন করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে নির্মাতাকে। এ অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে হিমু আকরাম বলেন, ‘প্রত্যেক আর্টিস্টের প্রপস আমি নিজ হাতে কিনেছি। এটা শুধু ওই সময়টা ধরার জন্য। টেলিফিল্মে যে টেপ রেকর্ডার ব্যবহার করেছি তা অনেক খোঁজাখুঁজির পর গুলিস্তানের একটি ভাংগারির দোকান থেকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। গল্পটির জন্য টেপ রেকর্ডারটা অনেক বেশি গুরত্বপূর্ণ ছিল। টেপ রেকর্ডার সংগ্রহ করার পর প্রয়োজন পরে ক্যাসেটের। সর্বশেষ এক বন্ধুর বাসায় ক্যাসেট পাওয়া যায়।’  

পোশাক সংগ্রহ করতে গিয়েও বিড়ম্বনা কম হয়নি এই নির্মাতার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুটিংয়ের আগে একদিন সকাল ১০টায় আমি নিউ মার্কেট যাই। বিকাল সাড়ে ৪টায় নিউ মার্কেট থেকে বের হই। কারণ কোনোভাবেই চঞ্চল চৌধুরীর শার্টটি নব্বই দশকের সঙ্গে মেলাতে পারছিলাম না। নাটকে যে শার্টটি চঞ্চল চৌধুরী পরেছেন সর্বশেষ এটা নিউ মার্কেট থেকে কিনি। কিন্তু ঝামেলায় পড়ে যাই হুমায়ুন সাধুর শার্ট নিয়ে। প্রথমে দোকানিকে বললাম, বাচ্চা ছেলের শার্ট লাগবে। তাতেও না মেলাতে পেরে একটি ভিডিও দেখিয়ে বললাম, তার গায়ের শার্ট লাগবে। এরপর নানা ঝামেলার পর তার গায়ের শার্টটি পাই।’



এছাড়া পানের বাটা, পাটি, হারিকেনসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র টেলিফিল্মটির শুটিংয়ের প্রয়োজনে কিনতে হয়। তবে ওই সময়ের হারিকেন কিনতে গিয়েও বেশ ঝামেলা পোহাতে হয় বলেও জানান এই নির্মাতা।

টেলিফিল্মের গল্পে হারু চরিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। যিনি নূর আলমের ছোট ভাই। এ প্রসঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আমি হারু চরিত্রে অভিনয় করেছি। নূর আলমের ছোট ভাই। গ্রামের হাট থেকে ব্যাটারি ভাড়া করে আনা, বড় ভাবির ক্যাসেট চুরি করা, বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করা, বিদেশ থেকে পাঠানো ভাইয়ের রেকর্ডিং ক্যাসেট বাজানোর আয়োজন করা- সব মিলিয়ে চরিত্রটি বেশ মজার। আগে গ্রামের বাস্তবতাও ছিল এমনই। এই টেলিফিল্মটির মাধ্যমে দর্শকরা অন্য একটি গল্প পাবেন। যে গল্পটির মধ্য দিয়ে অসংখ্য মানুষ বড় হয়েছেন, কিন্তু এভাবে কখনো ভাবেননি। যে গল্পটির হাত ধরে দর্শকরা ফিরে যাবেন ফেলে আসা নব্বই দশকে, গ্রামে কিংবা শৈশব-কৈশোরে।’



এছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়া আমান, শাহনাজ খুশি, দিলারা জামান, এস কে বাপ্পি, শরিফ ভুঁইয়া প্রমুখ। ঢাকার অদূরে পুবাইলের বিভিন্ন স্থানে টেলিফিল্মটির শুটিং হয়েছে। ২৪ নভেম্বর বেলা ৩টায় চ্যানেল আইয়ে টেলিফিল্মটি প্রচারিত হবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ নভেম্বর ২০১৭/শান্ত/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়