ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘প্রধানমন্ত্রী ঘর দিছে, শীতে কষ্ট পাইতে হবে না’

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ১২ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘প্রধানমন্ত্রী ঘর দিছে, শীতে কষ্ট পাইতে হবে না’

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : ‘ছয় খান টিন দিয়ে একচালা ঘর বানিয়ে স্বামী ও সন্তান নিয়ে দিন কাইট্যা যাইত কোনোভাবে। শীতের বাতাস একদিক দিয়ে ঢুইক্যা অন্য দিক দিয়ে বাইহর হইত। শীতে জুবুথুবু হইয়ে কোনোভাবে দিন রাত পার কইর‌্যা দিতাম। এখন প্রধানমন্ত্রী নতুন ঘর দিছে। শীতে আর কষ্ট পাইতে হবে না। ছেলে-মেয়ে নিয়া ভালোভাবে বাঁইচ্যা থাকতে পারব। এজন্য আমরা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই, শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করি তিনি যেন আবার ক্ষমতায় আসে।’

নতুন ঘরের চাবি হাতে পেয়ে খুশিতে কান্নায় ভেঙে পড়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার শুকতাইল গ্রামের পলি বেগম| শুধু পলি বেগমই নয়, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নতুন ঘর পেয়ে সবাই খুশি। তারা এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

গত মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘উপকার ভোগী’দের ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। নতুন ঘরের চাবি হাতে পেয়ে অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে উপস্থিত সকল উপকারভোগীই সরকারের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ওই দিন সন্ধ্যায় ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর শরীফপাড়ায় চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শান্তি মনি চাকমা সদর উপজেলার গোপীনাথপুর, শুকতাইল, চন্দ্রদিঘলীয়া ও পাইককান্দি ইউনিয়নের ৪৬ জন উপকারভোগীর হাতে নতুন ঘরের চাবি তুলে দেন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. শাম্মি আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিরুন্নাহার বেগম, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মিরান হোসেন মিয়া, গোপীনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরীফ আমিনুল হক লাচ্চু, শুকতাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, চন্দ্রদিঘলীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বি এম ওবায়েদ হোসেন, পাইককান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম শাহজাহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নতুন ঘরের চাবি হাতে পেয়ে গোপীনাথপুর শরীফপাড়ার মিজানুর রহমান, রেবেকা বেগম, ছবর আলী মিয়া বলেন, ‘আমাদের বসবাস করার মতো ভালো একটি ঘর ছিল না। সরকার আমাদের একটি ঘর দিয়েছে, ছেলে-মেয়ে নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারব।’

নতুন ঘরের চাবি হাতে নিয়ে চন্দ্রদিঘলীয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান ও ময়না বেগম বলেন, ‘আমাদের আগে বসবাসের ঘর ছিল জরাজীর্ণ, বৃষ্টি আসলেই বাইরে পড়ার আগে ঘরের মধ্যে বৃষ্টি পড়ত। বসবাস করতে অনেক কষ্ট হতো। এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘর দিয়েছে। বৃষ্টির দিনেও শান্তিতে বাস করা যাবে।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. শাম্মি আকতার বলেন, ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২২৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরের সঙ্গে একটি করে টয়লেট রয়েছে।’ আরো বরাদ্দ পাওয়া গেলে নতুন করে তা নির্মাণ করে উপকার ভোগীদের দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শান্তি মনি চাকমা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পটিকে ক, খ, গ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমত “যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ” প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ জেলার জন্য ৩ হজার ৮১৭ জনের চাহিদা পাঠানো হয়েছিল। ৭০৪টি ঘরের বরাদ্দ পেয়ে ইতোমধ্যে সদরে ২৩০টি, মুকসুদপুরে ১৩৯টি, কোটালীপাড়ায় ৭৪টি, কাশিয়ানীতে ২২৬টি ও টুঙ্গীপাড়ায় ৩৭টি ঘর নির্মাণ করে উপকারভোগীদের হাতে চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে।’

তিনি আরো জানান, এ প্রকল্পের আওতায় আরো বরাদ্দ পেয়ে পর্যায়ক্রমে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ‘যার জমি নেই, ঘর নেই তাকে আশ্রয়ণকেন্দ্রে পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৯১১ জনের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও ‘যার জমি আছে ঘরও আছে, কিন্তু জরাজীর্ণ তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৪৯ জনের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গোপালগঞ্জ জেলায় আর একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না।

 

 

রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/১২ জানুয়ারি ২০১৮/বাদল সাহা/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়