ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সিনেমার ভিলেন বাজে চেহারার হয় কেন?

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ১৯ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 সিনেমার ভিলেন বাজে চেহারার হয় কেন?

প্রতীকী ছবি

মাহমুদুল হাসান আসিফ : সেই ১৯০০ সালের ডায়ালগহীন সিনেমা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ভিলেনদের বিশেষ সাজের চর্চাটা চলে আসছে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা শুরু থেকেই ভালো এবং খারাপের মধ্যে পার্থক্য বোঝানোর জন্য ভিলেনদের জন্য বিশেষ সাজের ব্যবস্থা করে চলেছেন।

১৯২১ সালে ‘নসফেরাটু’ নামের একটি চলচ্চিত্রে ভিলেন হিসেবে ধূসর ফ্যাকাশে বর্ণের চুলহীন ভয়ানক একজনকে দেখানো হয়। তারপর থেকে চলচ্চিত্রে ভিলেনদের এই বিশেষ রূপের চর্চাটা প্রথাগত একটি ব্যাপারে রূপ নেয়। ‘ডার্থ ভেডার’ নামক চলচ্চিত্রে ফ্রেডি কুগারের ভিলেনরূপী চেহারাটা ছিল ভয়ানক। তার চেহারার বড় পোড়া দাগ, চেহারায় বিশাল আকৃতির ক্ষত- সব মিলিয়ে তাকে করে তোলা হয়েছিল ভয়াবহ এক চরিত্র। অদ্ভুত ত্বকের রঙ, চোখের নিচে পড়া ঘন কালি এবং ভয়ংকর বাদ্যের বাজনা দিয়ে সিনেমাগুলোকে করে তোলা হয় ভয়ানক। তাছাড়া সিনেমার ভিলেন বা বাজে চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তোলা হয় বিচিত্র ধরনের সাজের মাধ্যমে।

সম্প্রতি ‘জেএএমএ ডার্মাটোলজি’ নামক একটি গবেষণাপত্রে চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত ভিলেন কনসেপ্ট এবং তাদের ভয়ানক মুখের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল শাখার গবেষক জুলিয়া এ ক্রোলি এবং তার সহকর্মীরা হলিউডের সর্বকালের সেরা ১০ সিনেমার হিরো এবং ভিলেনদের ত্বকের সাজ মূল্যায়ন করেছেন। গবেষকদল খুঁজে পান প্রায় ৬০ শতাংশ শীর্ষ ভিলেনদের ত্বক বা মুখের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রায় একইরকম।

* ৩০ শতাংশ ভিলেনদের চোখের নিচে কালি থাকে।

* ৩০ শতাংশ ভিলেনদের মাথায় চুল থাকে না।

* ২০ শতাংশ ভিলেনদের চেহারায় ঝুলে পড়া চামড়া থাকে।

* ২০ শতাংশ ভিলেনদের চেহারায় বিভিন্ন ধরনের ক্ষত বা কাটা দাগ থাকে।

* ২০ শতাংশ ভিলেনদের চেহারায় বড় আঁচিল থাকে।

* ১০ শতাংশ ভিলেনদের বিদঘুটে আকারের নাক থাকে।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যেখানে ৬টি সিনেমার ভিলেনদের চেহারায় ত্রুটি ছিল, সেখানে মাত্র ২টি সিনেমার নায়কদের চেহারায় ত্রুটি ছিল। তবে নায়কদের চেহারায় যে ত্রুটি ব্যবহার করা হয় তা ভিলেনদের তুলনায় যথেষ্ট সূক্ষ্ম।

এই গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক এবং সানফ্রান্সিসকোর একজন ত্বকবিজ্ঞানী ভেইল রিস অবশ্য ভিলেনদের এই অদ্ভুত সাজের সমালোচনা করেছেন। তার মতে, কোনো মানুষকে ভয়ানক বানানো একটি নিয়মবিরুদ্ধ কাজ এবং তিনি এটির বিরোধিতা করে বলেন, ‘একজন ভিলেন চরিত্রের অভিনেতার স্বাভাবিক জীবন রয়েছে, পরিবার রয়েছে। তার এই অভিনয়ের একটি নেতিবাচক প্রভাব তার পরিবারের ওপর পড়তে পারে। তাছাড়া তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে চলাচলের সময় সিনেমায় প্রদর্শিত তাদের ভয়ংকর রূপের একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়া অস্বাভাবিক কিছুই নয়।’

ভয়ংকর ভিলেনগুলোর চেহারা একটা সময়ে তাদের ইতিহাসে পরিণত হয়ে যায়। এই ধরনের চরিত্রগুলো অতীত থেকে পালাতে সক্ষম হন না কারণ তাদের ভয়ানক অভিনয় দর্শকের দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য হয় না।
কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড র‍্যাকিসন বলেন, ‘ভয়ানক কিছু আমাদের ভীত করে তোলে। আমাদের কল্পনাগুলোতে সাধারণত আমরা সুন্দর সাবলীল একটি চেহারা চিন্তা করি। কেননা সুস্থ মানুষ বলতে আমরা সেটাই বুঝি। আর একজন কুৎসিত মানুষ দেখলে আমাদের অসুস্থতার কথা মাথায় আসে। তাছাড়া ভয়ানক চেহারা আমাদের আত্মঘাতী এবং সমাজের বাইরে বসবাসকারী কোনো এক ভিন্ন ধরনের মানুষের কথা মনে করিয়ে দেয়।’

কিন্তু মানুষজন বাস্তব জীবনে পর্দায় তাদের দেখে ভয় পাওয়ার মানে এই নয়, তারা শারীরিক বা মানসিকভাবে অসুস্থ। এই কারণেই সিনেমার চর্চাটা আসলে একটি চিন্তার বিষয়। গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, হলিউডে সিনেমার মাধ্যমে ত্বকের রোগগুলোকে একটি নেতিবাচক জায়গায় ফেলা হচ্ছে এবং এগুলোর প্রভাব সিনেমা থিয়েটারের বাইরেও দেখা যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ত্বকের রোগে আক্রান্ত কিছু সংখ্যালঘু মানুষকে শিকার বানিয়ে এমন করার ফলে আমাদের সমাজে নানান সমস্যা, রোগগুলো নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে এবং এর ফলে সেসব রোগে আক্রান্ত মানুষদের সাধারণ মানুষের জগত থেকে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, চলচ্চিত্র নির্মাতাগণ ত্বকের রোগে আক্রান্ত মানুষদের একটু বেশিই ব্যঙ্গ করে ফেলেন এবং এগুলোর যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে। আসলে সুন্দর মানুষ সবসময় বাহ্যিকভাবে সুন্দর হয় না, তাছাড়া একটি মানুষ দেখতে আকর্ষণীয় নয়, তার মানে এই নয় যে সে খারাপ মানুষ।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ এপ্রিল ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়