ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সময়ের অপেক্ষায় বাংলা সিনেমা

সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২০, ২০ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সময়ের অপেক্ষায় বাংলা সিনেমা

সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড : প্রায় আটত্রিশ বছর পর সৌদি আরবে পূনরায় সিনেমা প্রদর্শনের জন্য সিনেমা হল উন্মুক্ত করা হচ্ছে। সৌদি সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, সরকার অবিলম্বে সিনেমা নির্মাণেও ছাড়পত্র দেয়া শুরু করবে। অস্কার জয়ী ইরানের কথা না হয় বাদই রাখলাম। সৌদি আরবের মতো মুসলিম রাষ্ট্রে যখন বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে তখন বাংলাদেশের মতো দেশে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সিনেমা ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। নির্মাতাগণ সিনেমা নির্মাণের আগ্রহ হারাচ্ছেন। এর পেছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। নিজেদেরকে নিজেরা সহ্য করতে না পারা। একে অন্যের নির্মাণের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো। আমিত্বের অহংকার। সৃজনশীলতার অভাব। শিল্পের মাঝে অপশিল্পের অনুপ্রবেশ। সবকিছু মিলিয়ে এই শিল্প এখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।

এই আধুনিক কালেও দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার বারো শ সিটের কীটনাশকের গোডাউন মার্কা সিনেমা হল। অসাস্থ্যকর পরিবেশে এইসব হলে তিন ঘণ্টা বসিয়ে দর্শকে সিনেমা ভক্ষণ করানো কম কথা নয়। ওই পরিমাণের সিনেমা ক্ষুধার্ত বেকার দর্শক এখন আর রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে বাদাম চিবায় না। একসময় দর্শক হলের সামনে মারামারি হুড়াহুড়ি করে টিকিট সংগ্রহ করত এটা সত্য। এই অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই আছে। কারণ তখন সিনেমা ছাড়া কিছুই ছিল না, যা দেখে দর্শক হাসবে, কাঁদবে, প্রেম করবে, প্রতিজ্ঞা করবে, স্বপ্ন গড়বে, অবসর সময় অতিবাহিত করবে। এও সত্য, তখন সিনেমার ব্যবসা ভালো ছিল বলে মালিকগণ ঈদে উৎসবে হলের যত্ন নিতেন। এখন আর কি যত্ন নিবেন? যেখানে হল ব্যবসার টাকায় একবেলা ভালোভাবে খাবার জুটে না সেখানে আবার হলের যত্ন! সিনেমার স্বর্ণকাল নিয়ে এখনো যারা অহংকার করেন তাদের বুঝতে হবে সেকাল বাসি হয়েছে। তখন সিনেমাই ছিল বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। এখন বিনোদনের অনেক মাধ্যমের মাঝে সিনেমা একটি মাধ্যম। এই নিয়ে অতীত হাতড়ে হতাশা ব্যক্ত করবার কোনো কারণ দেখি না। আধুনিকতার সাথে উত্থান এবং পতন যুক্ত। বিদ্যুৎ আসলো বলে হারিকেন বিলুপ্ত হলো। এটা প্রকৃতির নিয়ম। চোখের সামনে মানুষের সাধ্য এবং রুচির আকাশ পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের হাতেও এখন একটা স্মার্ট ফোন তাতে ইন্টারনেট ইউটিউব সংযুক্ত। এখন হলে লুঙ্গি পড়া দর্শক পাওয়া যেমন কঠিন তেমনি বর্তমানে এক সিনেমা তেরবার দেখার দর্শক পাওয়া মানে গ্রিনিজ বুকে রেকর্ড হওয়া।

অতএব সার্বিক বিচারে সীমিত সিট সংখ্যার রুচিসম্মত আধুনিক হল ব্যতীত ওইসব হলকে জাদুঘরে অথবা সংস্কারে পাঠিয়ে সময়ের চাহিদানুযায়ী সিনেমাকে কিভাবে কোন পথে বর্তমান প্রজন্মের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় তার পথ খুঁজতে হবে। এর অর্থ এই নয় যে, স্কুল কলেজে গিয়ে ছাত্রদেরকে অনুরোধ করে সিনেমা দেখতে হলে এনে তার পকেটের টাকা খরচ করাতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রত্যেক ছাত্রকে একটা নির্দিষ্ট খরচের মধ্য দিয়ে মাস অতিবাহিত করতে হয়। তাদের কাছে গিয়ে হলে এসে সিনেমা দেখার আকুল প্রার্থনার যে ট্রেন্ড চালু হয়েছে তা থেকেও সরে আসতে হবে। এমনিতে পড়াশুনার ব্যয় এখন অনেক বেড়েছে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। কেউ যদি মনে করেন তার সিনেমা ছাত্রদের দেখাবেন পয়সা নিবেন না অথবা কম মূল্যে দেখাবেন সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।

যুগের পরিবর্তন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আগে যেখানে একটি সিনেমা, হলে নেয়ার ক্ষেত্রে ষোল থেকে বিশটি ক্যানের বোঝা এক হল থেকে আরেক হলে বয়ে বেড়াতে হত এখন সেখানে একটি হার্ডডিস্ক অথবা ছোট্ট একটি পেনড্রাইভ পকেটে থাকলেই যথেষ্ট। সময় এবং প্রযুক্তির এটা একটি পরিবর্তন। তেমনি সিনেমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও নিশ্চয় একটি পরিবর্তন আসবে। অপেক্ষা শুধু পেছনের অধ্যায়কে বাই জানিয়ে শূন্যরেখা অতিক্রম করে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করার সময়টুকু।

লেখক : চলচ্চিত্রকার

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৮/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়