ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁও-১ : নৌকা প্রতীকে নতুন চমকের অপেক্ষায় তৃণমূল

তানভীর হাসান তানু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ১৪ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঠাকুরগাঁও-১ : নৌকা প্রতীকে নতুন চমকের অপেক্ষায় তৃণমূল

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামীলীগের ১০ জন মনোনয়ন যুদ্ধে লড়ছেন।

এখানের প্রবীণ ও তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দদের ধারণা এ আসনে এবার আওয়ামীলীগে চমক আসতে পারে। তাহলে এটাই ধরে নেওয়া যায় যে, এখানে নৌকা প্রতীকে নতুন চমকের অপেক্ষায় রয়েছেন তৃণমুল!

নতুন যারা চমক হয়ে দেখা দিতে পারেন এদের মধ্যে অনেকেই এখন মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর আদাজল খেয়ে মাঠে নামবেন তারা। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে প্রয়াত এমপি খাদেমুল ইসলামের ছেলে সাবেক ছাত্রনেতা সাহেদুল ইসলামের প্রতিও নজর রয়েছে ভোটারদের।

মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সরকারের বিগত ১০ বছরের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরছেন নিজ এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে। ঈদ-পূজা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আগে থেকেই গণসংযোগও চালিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ।

নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ১০ মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নেতাদের নামে পাড়া-মহল্লায় লিফলেট বিতরণ এবং পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে হাট-বাজার-রাস্তাঘাট। ১০ জনই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী উল্লেখ করে সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চাইছেন দলীয় প্রতীকে।

নৌকার টিকিট পেতে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন: বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, ৩ বার নির্বাচিত এমপি প্রয়াত খাদেমুল ইসলামের ছেলে কূটনীতিক সাহেদুল ইসলাম সাহেদ, প্রয়াত ভাষা সৈনিক ও সাবেক গর্ভনর ফজলুল করিমের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বাবু, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী, সাবেক যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুনাংশু দত্ত টিটো, কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সহ-সম্পাদক রাজিউর রেজা খোকন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পদাক ইন্দ্রনাথ রায়, সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুব মহিলা লীগের সভাপতি তাহমিনা আক্তার মোল্লা, ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান খোকন ও জেলা আওয়ামী লীগের বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জামান দুলাল।

রমেশ চন্দ্র সেন:  ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আবারও এমপি হতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন রমেশ চন্দ্র সেন। ১৯৯৬ সালে দলের মনোনয়ন পেয়ে উপনির্বাচনের মাধ্যমে সাংসদ হন রমেশ চন্দ্র সেন। ২০০১ সালে তিনি মির্জা ফখরুলের কাছে হারলেও ২০০৮ সালে আসনটি উদ্ধার করেন। তারপরে সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইমরান হোসেন চৌধুরীকে হারিয়ে আবারও নির্বাচিত হন তিনি।

পরে রমেশ চন্দ্র সেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য দায়িত্বপান। ইতোপূর্বে রমেশ চন্দ্র সেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘আমি সদর আসনের উন্নয়ন করার জন্য এমপি এবং মন্ত্রী হয়েছিলাম। আমি জনগণকে যেটুকু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার চেয়ে কয়েকগুণ উন্নয়ন করেছি।’

অরুনাংশু দত্ত টিটো: জন্ম ঠাকুরগাঁও পৌরসভার আশ্রম পাড়ায় ১৯৬৪ সালে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা হিমাংশু দত্ত। বাবার আর্দশে টিটো প্রথম রাজনৈতিক জীবনে পা রাখেন ১৯৯৭ সালে। তখন তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০১ সালে সরকার পতনের পরে তিনি বিএনপি, জামাতের মিথ্যা মামলার কারণে ১১ মাস কারাগারে বন্দি ছিলেন। কারাগারে তাকে বিভিন্ন নির্যাতনও করা হয়েছে। এরপরে তিনি আবার ২০০৫ সালে জেলা যুবলীগের সভাপতি হন। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। টিটো দত্ত ২০১৪ সালের ১৬ই এপ্রিলে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

টিটো বলেন, ‘এই আসনের যুবক শ্রেণির ৮০ শতাংশ সমর্থন তার পক্ষে। মনোনয়নের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে তৃণমূলে নির্বাচনের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই হলে তিনি বিপুল সমর্থন পাবেন।’

মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী: ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত তিনি। নজর কেড়েছেন দলের শীর্ষ নেতাসহ সভানেত্রী শেখ হাসিনার। ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেক কুরাইশী সরকারি কলেজে পড়াকালে ছাত্র রাজনীতি করতেন। ১৯৭৭ সালে ছাত্রদের সুসংগঠিত করে সভা, সমাবেশ মিছিলসহ বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন সংগ্রামেও লিপ্ত ছিলেন তিনি।

১৯৮২ থেকে ৮৩ সাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক, পরে ১৯৮৪-৮৬ সাল পর্যন্ত জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। লাভ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ। পরে চলে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে। ১৯৯১ সালে চার ও প্রকাশনা  সম্পাদক, ১৯৯৪ সালে জেলার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে দলের দুঃসময়ে কোন্দল দূর করে সুসংগঠিত করেছেন দলকে। ২০০৫ সালের দলীয় কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাদেক কুরাইশী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বের পাশাপাশি জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে নিয়োগ দেন সাদেক কুরাইশীকে। ২০১৫ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

তিনি বলেন, ‘দল যদি মনে করে, দলীয় মনোনয়ন দেয় তবে নির্বাচন করবো।’

অ্যাড. মকবুল হোসেন বাবু : বাবা ফজলুল করিম ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারই অনুপ্রেরণায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. মকবুল হোসেন বাবু মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ২০০৮ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বাবা  ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।

মকবুল হোসেন বাবু বলেন, ‘বাবার অনুপ্রেরণায় আওয়ামী রাজনৈতিতে কাজ করছি। এবার নেত্রী মনোনয়ন দিলে ঠাকুরগাঁও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করবো। জেলার উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’

সাহেদুল ইসলাম সাহেদ : সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাহেদুল ইসলাম সাহেদের বাবা মরহুম খাদেমুল ইসলাম ছাত্র জীবনেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তাঁর নেতৃত্বে আস্থাশীল হয়ে ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর রোষানলের শিকার হয়ে তিনিও দশ মাস কারাগারে ছিলেন । মুক্তি পেয়ে ঠাকুরগাঁও মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ঠাকুরগাও-১ আসন হতে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

খাদেমুল ইসলামের মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে সদ্য এমএ পাশ করা সাহেদুল ইসলামকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানে বাংলাদেশী হাইকমিশনের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন।  পরবর্তীতে ২০০৮ সালে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের ডেপুটি কনসাল জেনারেল নিযুক্ত করেন।

তাহমিনা মোল্লা: ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে অধ্যক্ষ তাহমিনা আখতার মোল্লা সরাসরি প্রতিদ্বন্ধিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিগত পৌরসভা নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছোটো ভাই মির্জা ফয়সাল আমিনের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হেরেছেন। তার আগে তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তাহমিনা। প্রতিষ্ঠা করেছেন অটিস্টিক শিশুদের একটি স্কুল। ঠাকুরগাঁওয়ের একমাত্র ল’ কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা তিনি। সেই কলেজের অধ্যক্ষও তিনি।

রাজিউর রেজা খোকন চৌধুরী: তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সহ-সম্পাদক। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ও পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন ।

রাজিউর রেজা খোকন চৌধুরী বলেন, ‘আমি আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ করে দিবেন।’




রাইজিংবিডি/ ঠাকুরগাঁও/১৪ নভেম্বর ২০১৮/তানভীর হাসান তানু/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়