ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এক হাতে জীবন জয়ের স্বপ্ন

মো. হৃদয় সম্রাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ২২ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক হাতে জীবন জয়ের স্বপ্ন

মো. হৃদয় সম্রাট : অতল সমুদ্রের স্রোত যত বড় প্রতিকূলতার সৃষ্টি করুক না কেন, মাঝি কিন্তু কখনও সেই স্রোতের বিপরীতে হাল ছেড়ে দেয় না। কারণ সে জানে, যদি সে হাল ছেড়ে দেয় তবে এই বিশাল জলরাশি কখনও তাকে পাড়ে পৌঁছাতে দেবে না। মানুষের জীবনও ঠিক তেমন, নানা প্রতিকূলতার মাঝে টিকে থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। যদি কেউ এই প্রতিকূলতার মাঝে হাল ছেড়ে দেয় তাহলে সে আর কখনও সফল হতে পারে না।

নসমস্ত প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া  মানুষগুলোর মধ্যে একজন হলেন রফিকুল ইসলাম (রফিক)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিজুলকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ছিল অগাধ টান। একদিন বৃষ্টিতে খেলতে গিয়ে হাত ভেঙে যায়। তারপর চিকিৎসার অভাব আর অবহেলায় ভেঙে যাওয়া হাতে সংক্রমণ ঘটে। ফলে নিজেকে বাঁচাতে চিরতরে হাত বিসর্জন দিতে হয়। এক হাত না থাকার পরেও দমে যাননি তিনি। ঠিকই করে গেছেন জীবনযুদ্ধ। জীবনযাপনের সঙ্গে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা।

সবার স্কুলজীবন যেমন সুখময় স্মৃতি দিয়ে ঘেরা, তার স্কুল জীবন ঠিক ততটাই বিষাদময়। নানা ধরনের মানুষ কটূক্তি করতো তাকে নিয়ে। কিন্তু পরিবার আর বন্ধুদের উৎসাহের কারণে তিনি থেমে যাননি। ঢাকা কলেজ থেকে ঠিকই অনার্স পাশ করেছেন। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিসিএস দেয়ার। বিসিএস-এর জন্য অবশ্য বেশ ঘামও ঝরাতে হচ্ছে তাকে।

বর্তমানে তার প্রতিদিনের প্রথম অংশটা কাটে বই পড়ে। আর বিকেল বেলায় এক হাতে টেবিল আর ঘাড়ে কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে চলে আসেন  ধানমন্ডি ১৫-এর কেয়ারি প্লাজার সামনে। এখানের ফুটপাতে প্রায় এক বছর ধরে তিনি করে চলেছেন ব্যবসা। ব্যবসা বলতে ছেলেদের জন্য টি-শার্ট বিক্রি করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি বন্ধুর মাধ্যমে বঙ্গবাজার থেকে টি-শার্টগুলো কিনে এনে এখানে বিক্রি করি। ব্যবসায় নতুন আমি, তবে কখনোই বেশি লাভের আশায় ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে টি-শার্ট বিক্রি করি না। তাই হয়তোবা আমার কিছু নিয়মিত ক্রেতাও জুটে গেছে। তারা সবসময় আমার দোকানে কিনতে আসে, আবার অনেকে এসে আমার খোঁজখবর নিয়ে যায়, তখন খুব ভালো লাগে আমার। প্রতিদিন আনুমানিক ১০-১৫টা টি-শার্ট বিক্রি করতে পারি। যেটা দিয়ে আমার বাসা ভাড়াবাবদ যাবতীয় খরচ চলে যায়।’

ঢাকায় এত খরচ সত্ত্বেও পড়ালেখা শেষ করে গ্রামের বাড়িতে ফিরে না যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভাই যেহেতু ইচ্ছা আছে বিসিএস দেয়ার তাই একটু কষ্ট করে হলেও ঢাকায় থাকা। এছাড়াও এখানে কিছু লাইব্রেরি আছে যেগুলোতে গিয়ে আমি পড়ালেখা করতে পারি। ফলে আমার পড়ালেখা বাবদ বাড়তি বইয়ের খরচটাও পুষিয়ে যায়। ঢাকায় থাকলে অবশ্য আরো অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন হাতের নাগালের মধ্য সব পাওয়া যায়।’

তার নিয়মিত ক্রেতাদের মধ্য একজন সিফাত ভূইয়া জানান, তাকে দেখলে আমার কাছে কেন জানি অনেক ভালো লাগে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কারো কাছে সাহায্যের জন্য না গিয়ে নিজেই ব্যবসা করছেন। যা সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক।’

তার স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বপ্নতো অনেক আছে। তবে কখনও যদি আল্লাহ সামর্থ্য দেন তাহলে পরিবার আর আমাকে যারা এত দূর আসতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আর স্বপ্ন বলতে নিজের একটা বড় বাড়ি তৈরি করতে চাই। যেখানে আমি আমার পরিবারের সঙ্গে থাকবো।’

পড়ুন :
*
 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়