ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দুঃস্থ ও সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২২, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুঃস্থ ও সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়

আসাদ আল মাহমুদ: কালের চাকায় ঘুরে বিদায় নিচ্ছে ২০১৮ সাল। এ বছরটি দুঃস্থ, অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পাশে সরকারের  দাঁড়ানোর বছর।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশের দুঃস্থ, দরিদ্র, অবহেলিত, অনগ্রসর ও সুযোগ সুবিধাবঞ্চিত ও সমস্যাগ্রস্ত পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদান করছে। লক্ষ্যভুক্ত এ সকল জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত করে মন্ত্রণালয় দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সুশাসনে আইন ও নীতির উন্নয়ন : জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন। (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক প্রণীত, যাতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অন্যতম লিড মিনিস্ট্রি  হিসেবে কাজ করেছে)। প্রবীণ ব্যক্তিদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

বয়স্কভাতা : দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ দুঃস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে ও পরিবার ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৪০ লাখ ব্যক্তিকে ৫০০ টাকা করে ‘বয়স্কভাতা’ দেওয়া হয়।

বিধবা ভাতা : ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের ভাতা কর্মসূচি শুরু করে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ১৪ লাখ জনের জন্য ৮৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভাতা দেওয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো- বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান। পরিবার ও সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি। আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে তাঁদের মনোবল জোরদার করা। চিকিৎসা সহায়তা ও পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান।

প্রতিবন্ধী ভাতা : অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মাথাপিছু মাসিক ৭০০ টাকা করে ১০ লাখ ব্যক্তিকে ৮৪০ কোটি টাকা প্রদান করা হবে। বিগত ১০ বছরে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা খাতে ৩২৬৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য বাজেট ৮০ কোটি  ৩৭ লক্ষ টাকা। বিগত ১০ বছরে (২০০৯-১৮) প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি খাতে ১১৭১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট : বেসরকারি এতিমখানা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুদান (ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট) প্রদান করছে। ২০১৮ সালে এ খাতে ৮৬ হাজার ৪০০ শিশুর জন্য মোট বরাদ্দ রয়েছে ১০৩ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা। বিগত ১০ বছরে (২০০৯-১৮) ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বাবদ ৬৬৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অটিজম রিসোর্স সেন্টার : দেশব্যাপী ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপন এবং প্রতিটি কেন্দ্রে অটিজম রিসোর্স সেন্টার চালু, যা থেকে বছরে প্রায় ৪ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সরাসরি সেবা পাচ্ছে। ৩২টি মোবাইল থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ : সমাজসেবা অধিদপ্তর ১৬ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ ও ডাটাবেইজ তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেবা প্রদানের মাধ্যমে মেধাবী গরীব শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ৩২৪ জনকে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেবা প্রদান করা হয়েছে যার আনুমানিক খরচ প্রায় ৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

হৃদরোগ প্যারালাইজড রোগীকে সহায়তা : সমাজকল্যাণ ‘ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীর আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। এ পর্যন্ত  মোট ২৯৫৫ জনকে মোট ১১২৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তা : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর (হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর) জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৭৬ হাজার ব্যক্তি প্রশিক্ষণ ও বিশেষ ভাতা পাচ্ছে এবং শিশুরা উপবৃত্তি পাচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট বরাদ্দ ২৭ কোটি টাকা এবং মোট উপকারভোগী ৩৫ হাজার ৯৩২ জন।

শেখ রাসেল প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র : পথশিশুদের অধিকার সুরক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে ১২টি শেখ রাসেল প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যাতে ২৩টি আবসস্থলে প্রায় ৯০৪৯ জন (৪৪৩৩ জন বালক ও ৪৬১৬ জন বালিকা) শিশুকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে।

দরিদ্র রোগীদের সহায়তা : গ্রামীণ দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ৪১৯টি উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে রোগকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন ৮টি বিভাগীয় কার্যালয় স্থাপন করে জনগণের দোরগোড়ায় সমাজসেবাকে পৌঁছে দেয়া সহজতর করা হয়েছে।

সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ : প্রতি জেলায় সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১ম পর্যায়ে ২২টি জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ চলমান রয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতাল ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পৃথক পৃথক ১৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮টি হাসপাতাল ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিগত ১০ বছরে মোট ৪৫৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল বিশেষায়িত হাসপাতাল এন্ড নার্সিং কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু  হাসপাতাল, ফিফটি (৫০) বেডেড কিডনি ফাউন্ডেশন হসপিটাল এন্ড রির্সাচ ইনস্টিটিউট, নীলফামারী ডায়াবেটিক হসপিটাল, সোনাইমুড়ি অন্ধ কল্যাণ সমিতি আই হসপিটাল, কমিউনিটি হেলথ এন্ড হার্ট হাসপাতাল-পাবনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ ডিসেম্বর ২০১৮/আসাদ/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়