ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পালটাপালটি অভিযোগ : সমাধানের আশ্বাস দিলেন মন্ত্রী

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৬, ৪ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পালটাপালটি অভিযোগ : সমাধানের আশ্বাস দিলেন মন্ত্রী

রাহাত সাইফুল : দীর্ঘদিন ধরে হল মালিক ও প্রযোজক-পরিচালকদের মধ্যে সিনেমা নিয়ে ঠান্ডা লড়াই চলে আসছে। সম্প্রতি সিনেমা হল বন্ধের ঘোষণা দেন হল মালিকদের সংগঠন। এরপর দুই পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ তোলা হয়। যদিও হল মালিক সমিতি তাদের ঘোষণা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল বুধবার জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে এই বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষই পালটাপালটি অভিযোগ করেন। কিন্তু বুকিং এজেন্ট প্রসঙ্গে সবাই একমত পোষণ করে বলেন- বুকিং এজেন্ট চলচ্চিত্রে বিষফোড়ার মতো। এ সময় শিল্পমন্ত্রী ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তারা চলচ্চিত্রে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার সেমিনারে তার বক্তব্যে সিনেমা হলকে ‘গুদাম ঘর’ বললেও ভুল হবে না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘একটি সিনেমা হলে সিনেমা মুক্তি দিতে গেলে একজন প্রযোজককে মেশিন ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, এসি খরচ, সিটি কর, পৌর কর, ব্যানার তৈরি ও পোস্টারের টাকা দিতে হয়। একজন প্রযোজককে যদি এসব দিয়ে তারপর সিনেমা মুক্তি দিতে হয়, তাহলে সিনেমা হলের মালিকগণ শুধু একটি গুদাম ঘরের মালিকই বলব।’

বুকিং এজেন্টদের দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলেন গুলজার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বুকিং এজেন্ট হচ্ছে হল মালিকদের প্রতিনিধি। তাকে কেন প্রযোজক কমিশন দিবে। তাকে কমিশন দিতে হলে সেটা হল মালিক দিবে। এই বুকিং এজেন্টকে পাঁচ পার্সেন্ট কমিশন দিতে হয় প্রযোজকদের।’

শিল্পীদের অসহযোগিতার কথা জানিয়ে এ পরিচালক বলেন, ‘চলচ্চিত্র ধ্বংসের জন্য কম বেশি সবাই দায়ী। সিনেমা নির্মাণ করে লাভ না হলে প্রযোজক দ্বিতীয়বার সিনেমা প্রযোজনা করছেন না। একজন হল মালিকের বিল্ডিং কিন্তু ধ্বংস হচ্ছে না। তাদের বাবা অথবা দাদা বিল্ডিং তৈরি করেছিলেন, তারা সে বিল্ডিংয়ের কোনো সংস্কারও করেন না। তাদের নতুন করে কোনো বিনিয়োগ নেই। তারা বলেন, ‘মানসম্পন্ন সিনেমা হচ্ছে না।’ হল থেকে তো টাকাই দিচ্ছেন না, মানসম্পন্ন সিনেমা হবে কী করে? ‘ঢাকা অ্যাটাক’ একটি ভালো সিনেমা। সারা দেশে আলোড়ন তৈরি করেছিল। কিন্তু সেই প্রযোজক টাকা ঘরে তুলে নিতে পারেননি। এই হলো আমাদের সিনেমার অবস্থা!’’

একই রকম কথা বলেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানও। অন্যদিকে প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু তার বক্তৃতায় কপিরাইট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘কপিরাইট রেজিস্টার চলচ্চিত্রের কপিরাইট সমিতির নিবন্ধন দিয়েছেন। কিন্তু সেই সমিতিতে চলচ্চিত্রের কোনো মানুষ নেই। বিষয়টির দিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এদিকে কপিরাইট অফিসের ওয়েব সাইটে সংরক্ষিত যে খসড়া আইনটি রয়েছে, সেই আইনটিতেও এই ধারাটি এভাবেই লেখা আছে। যাতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, যিনি বক্তৃতা দিয়েছেন এবং যার পক্ষে বিবৃতিটা দেয়া হয়েছে। তারা দুজনেই ওই কপিরাইটের মালিক হবেন।’

এদিকে চলচ্চিত্র প্রদর্শক মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘আজকের অভিযোগগুলো প্রদর্শকদের বিরুদ্ধে। আমিও প্রযোজক ছিলাম, পরিবেশক ছিলাম। আজকে যে অভিযোগগুলো প্রদর্শকদের বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে, সেগুলো এক সময় আমারও ছিল। কারণ আমি তখন প্রযোজক ও পরিবেশনের নেতৃত্ব দিতাম। ২০০৫ সালের পর সিনেমার অবস্থা ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলে গেল। তখন কিন্তু আমরা ডিজিটাল বুঝি না। পরিবেশকরা ডিজিটাল বুঝে না। শিল্পীরা ডিজিটাল বুঝে না। না বুঝেও প্রজেক্টর ভাড়া কেন দিব?’

তিনি আরো বলেন, ‘যে হলে প্রজেক্টর নেই সে হলে সিনেমা দিব না। এটাই একজন প্রযোজকের নীতি হওয়া উচিত। আমরা যৌথভাবে অসৎ পথে সহযোগিতা করেছি। আমি মনে করি, প্রযোজকরা তার নিজস্ব রীতিতে নিজস্ব গতিতে ঠিক থাকলে আজকের এই অবস্থা সৃষ্টি হতো না। আমি বিশ্বাস করি, চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তারা এটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন। আর বুকিং এজেন্ট নিয়ে কথা উঠেছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা সব সময়ই ক্ষতিকর।’

সেমিনারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকলেও বুকিং এজেন্ট প্রসঙ্গে দুই পক্ষই একমত প্রকাশ করেন।   

সেমিনারে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ (এমপি) বলেন, ‘সিনেপ্লেক্স নির্মাণ এখন সময়ের চাহিদা। সেই ভাবনা থেকেই সিনেমা হলের সংকট কাটাতে দেশের সব উপজেলায় মাল্টিপারপাস কালচারাল কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে শিগগির দেশের ১০০টি উপজেলায় সিনেপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। দেশের প্রতিটি উপজেলায় নির্মিতব্য মাল্টিপারপাস কালচারাল কমপ্লেক্সে থাকবে ৪০০ থেকে ৫০০ আসনের একটি মিলনায়তন, একটি মুক্তমঞ্চ ও একটি আধুনিক সিনেপ্লেক্স। এর মাধ্যমে দেশে সিনেমা প্রদর্শনের জন্য আধুনিক মানের সিনেমা হলের সংকট দূর হবে।’

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে প্রতি বছর ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস পালিত হচ্ছে। নতুন এসএমই নীতিমালা অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এ সুযোগ নিতে পারেন। সিনেমা হল আধুনিক করতে ও সিনেমায় অর্থলগ্নিসহ চলচ্চিত্র শিল্পের সকল সমস্যা দূর করতে তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করতে পারে। সেক্ষেত্রে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’

জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্মাতা মতিন রহমান। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। প্রধান আলোচক ছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ এপ্রিল ২০১৯/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়