ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘ওরকম ট্র্যাজেডি আর না আসুক বাংলাদেশের ক্রিকেটে’

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৬ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ওরকম ট্র্যাজেডি আর না আসুক বাংলাদেশের ক্রিকেটে’

১৯৮৩ সালে কপিল দেবের হাতে বিশ্বকাপের মুকুট দেখে ১০ বছর বয়সি শচীন টেন্ডুলকার স্বপ্ন দেখেছিলেন ওই সোনালি ট্রফিটি ছুঁয়ে দেখার। বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজের বিশ্বকাপ স্মৃতি অনেকটা টেন্ডুলকারের মতোই।

২০০৭ সালে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘন্টা বেজেছিল ভারতের। মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, সাকিবরা হারিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয়দের। খুলনার খালিশপুরে বসে টিভির পর্দায় ভারত-বধের ম্যাচ দেখেছিলেন ১০ বছর বয়সি মিরাজ।

গভীর রাতে আনন্দ উৎসব করতে জেগে উঠেছিল পুরো দেশ। খুলনাও মেতেছিল উৎসবে। বাঁধনহারা ওই উৎসবে শামিল ছিলেন মিরাজও। তার দেখা প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ। দল-জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে একসঙ্গে এত আনন্দ করতে এর আগে কখনো দেখেননি মিরাজ। বুঝে গিয়েছিলেন ক্রিকেট এক সুতোয় গেঁথে রাখে পুরো দেশকে। বুঝে যান, বিশ্বকাপের মাহাত্ম্য, বিশ্বকাপের ওজন। সেদিন থেকে মিরাজ স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন বাংলাদেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলার, স্বপ্ন দেখেছেন বিশ্বকাপ জয়েরও। 

২০০৭ সালে যাদের খেলা টিভিতে দেখেছেন, তাদের সঙ্গেই এবার বিশ্বকাপ মঞ্চে যাবেন মিরাজ। এক যুগের ব্যবধানে মিরাজ এখন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের স্বপ্নসারথি। মাশরাফি ব্রিগেডের সৈনিক। ২৫ ওয়ানডে খেলা এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের সঙ্গে বিশ্বকাপ নিয়ে রাইজিংবিডি’র কার্যালয়ে কথা বলেছেন ক্রীড়া প্রতিবেদক ইয়াসিন হাসান।
 


শুরুতেই আপনার নতুন ভুবন নিয়ে জানতে চাই। টোনাটুনির সংসার জীবন কেমন যাচ্ছে?
মেহেদী হাসান মিরাজ: টোনাটুনি! আসলেও, বেশ মজা পেলাম। সংসার জীবন আসলে খুবই ভালো যাচ্ছে, মাশআল্লাহ। একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। পরিবারে নতুন একজন সদস্য এসেছে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকা। আমি বলব, যারা বিয়ে করেছে একমাত্র তারাই এর মানে বুঝবে। একমাস আগেও হয়তো এরকম অনুভূত হতো না, এখন যেমনটা আসে। ছোট ছোট দায়িত্বগুলো চলে আসছে। এ জিনিসটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারছি।

শুনেছি প্রেম করে বিয়ে করেছেন। বিয়ের আগের প্রেম মজার ছিল নাকি বিয়ের পরের প্রেম?
মিরাজ: দুটোই। আসলে বিয়ের আগে এক রকম সম্পর্ক ছিল, বিয়ের পর আরেক রকম। বিয়ের আগে যেটা ছিল সেটা বলব এক প্রকার কমিটমেন্ট, কথা দেওয়া। বিয়ের মাধ্যমে কমিটমেন্ট ফুলফিল হয়েছি। স্থায়ী সম্পর্ক হয়েছে। সারাজীবনের সম্পর্ক হয়েছে, সারাজীবনের জন্য ভালোবাসা। আমি বলব যে, এর আগে প্রেম করেছি ঠিকই কিন্তু সেটার মূল্য শুধু আমি আর প্রীতি (মিরাজের স্ত্রী রাবেয়া আখতার প্রীতি), কিন্তু বিয়ের মাধ্যমে আমাদের পরিপূর্ণতা এসেছে।

জীবনসঙ্গিনী হিসেবে প্রীতি কেমন?
মিরাজ: খুব ভালো একটা মেয়ে। খুব সাদাসিধে। সাধারণভাবে চলতে খুব পছন্দ করে। খুব ভালো মানুষ। খুব সাপোর্টিভ। আমি যখন মিরাজ হয়ে উঠিনি তখনো আমার সাথে ছিল। মিরাজ হওয়ার পরও তার ভাবনা পাল্টেনি আমাকে নিয়ে। এটাই ওর সবচেয়ে ভালো গুণ। আমি যেমন ঠিক তেমনভাবেই আমাকে ট্রিট করে।

এবার আপনার পেশাদার জীবনে আসি। সামনেই তো বিশ্বকাপ। ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো থাকবেন আপনি। নার্ভাস নাকি রোমাঞ্চিত?
মিরাজ: বিশ্বকাপ অনেক বড় ইভেন্ট। প্রত্যেকটা মানুষের স্বপ্ন থাকে এখানে খেলার। আমার বড়দের বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন ছিল যুব বিশ্বকাপ থেকেই। শেষ বিশ্বকাপ আমি টিভিতে দেখেছি। তখন তো যুব দলে ছিলাম। এখন বাংলাদেশ দলে। বিশ্বকাপ দলের একজন সদস্য। নিজেরও ভাবতে খুব ভালো লাগছে যে, চার বছর আগে আমি অনুর্ধ্ব-১৯ দলে ছিলাম এখন আমি মূল বিশ্বকাপে। এটা আমাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, উৎসাহ দিচ্ছে। একটুও নার্ভাস নই।
 


বিশ্বকাপ নিয়ে প্রথম স্মৃতি?
মিরাজ: ২০০৭ সালে আমি প্রথম বিশ্বকাপ দেখেছি। এর আগে দেখা হয়নি। ভারতকে আমরা হারালাম টিভিতে সেটা দেখেছি। কি যে লাফালাফি করেছি ওই ম্যাচ জেতার পর। মাশরাফি ভাই, সাকিব ভাই, তামিম ভাই, মুশফিক ভাইদেরকে দেখেছি। তখন যাদেরকে দেখেছি এখন তাদের সাথেই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। এটা অনেক সৌভাগ্যের। তখন ছোট ছিলাম ঠিকই কিন্তু আমাদের প্রথম ম্যাচ জয়ের স্মৃতি এখনো চোখের সামনে ভাসে।

তখন কোথায় ছিলেন, ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন?
মিরাজ: খুলনাতে ছিলাম। ক্রিকেট খেলা মাত্রই শুরু করেছি।

বিশ্বকাপ খেলার চিন্তা কি ওই সময়েই এসেছিল, নাকি আরো পরে...
মিরাজ: হ্যাঁ, ওরকম একটা চিন্তা তো এসেছিল যে, আমাকেও কোনো না-কোনো দিন বিশ্বকাপে খেলতে হবে। পাড়া-মহল্লার সবাই উৎসব করছে এটা দেখে যে কী আনন্দ হয়েছিল...তখনই বুঝতে পারছি বিশ্বকাপ অনেক বড় ইভেন্ট। অনেক বড় জায়গা।

অনেক গ্রেট ক্রিকেটার বলেছেন বিশ্বকাপ হচ্ছে এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে অন্য সব অর্জন ম্লান। টেন্ডুলকার তো বলেছিলেন, বিশ্বকাপ জিততে না পারলে তার জীবনের বাকি অর্জনগুলো ফ্যাকাসে থেকে যেত। আপনার কাছে বিশ্বকাপ মানে কী?
মিরাজ: বিশ্বকাপ আসলে বড় একটা ইভেন্ট। প্রত্যেকটা মানুষের আবেগ এখানে জড়িত আছে। খেলোয়াড়দের জন্য এটা অনেক বড় মঞ্চ। দেশ ও দেশের মানুষ এই খেলার দিকে তাকিয়ে থাকে। একটা ম্যাচ জিতলেই পুরো দেশে আনন্দ উৎসব হয়। আমরা যদি বিশ্বকাপ জিততে পারি তাহলে বাংলাদেশের মানুষের উৎসব হবে বাঁধনহারা। আর যদি খেলোয়াড়দের কথা বলতে বলেন, আমি বলব প্রত্যেকটা খেলোয়াড় এটাকে নেয় গৌরবের অংশ হিসেবে। এটা অত্যন্ত ভালো লাগার বিষয়। ভালো অনুভূতি দেয় যে বিশ্বকাপে আমি খেলছি, বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি। দিন শেষে বাংলাদেশের পতাকাকে বিশ্ব দরবারে প্রতিনিধিত্ব করার গৌরবই সবচেয়ে বড়।

খুব বেশিদিন আগে নয়, আপনি যুব দলকে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবার বড়দের বিশ্বকাপে খেলবেন। মনে হচ্ছে না, স্বপ্ন পূরণের পথে আরো একধাপ এগিয়ে যাচ্ছেন?
মিরাজ: অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ কিন্তু একটা স্তর। ওটা থেকেই কিন্তু একটা পাইপলাইন শুরু হয়। একটা খেলোয়াড়কে গ্রো আপ করা, একটা প্লেয়ারকে আন্তর্জাতিক ম্যাচের প্ল্যাটফর্ম দেওয়া, পরিচিতি লাভ করানো; এগুলো তখন থেকেই কিন্তু শুরু হয়। যেটা আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে। সেখান থেকেও স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলাম যে আমি বাংলাদেশ দলে খেলব, আমার সেই সামর্থ্য আছে। যুব দল থেকেই আমাকে পিক করে জাতীয় দলে নিয়ে আসা হয়েছিল।

অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আমি বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। কিছুটা হলেও ধারণা আছে যে বিশ্বকাপের স্বাদ কেমন। আন্ডার নাইন্টিনে বয়সের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু এখানে নেই। এখানে অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থাকে। ১০-১৫ বছর আন্তর্জতিক ক্রিকেট খেলেছে- এমন খেলোয়াড় আছে। দুই-তিনটা বিশ্বকাপ খেলা খেলোয়াড়ও আছে। এবার তাদের সাথেই খেলব। তখন বোঝা যাবে আরো আমার সামর্থ্য কেমন, আমি কতটুকু পারি, কতটুকু উন্নতি করতে হবে। দলের সবাই হার্ডওয়ার্ক করছে বিশ্বকাপে একটা ভালো ফলের জন্য। আশা করছি আমরা পারব ভালো কিছু করতে।

আর যেটা বললেন, নিজের কাছে তো ভালো লাগছেই যে আমি ছোটকালে যে স্বপ্ন দেখেছি সেই স্বপ্ন এখন পূরণ হতে চলছে। নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি সেখানে আমি জয়ী হয়েছি। তবে এখানেই থামতে চাই না। আরো অনেক দূর আমাকে যেতে হবে।


বয়সভিত্তিক দল পেরিয়ে আজ জাতীয় দলের নির্ভরতার নাম মিরাজ। যদি পুরো সফরের কথা বলতে চান তাহলে সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল কোনটা?
মিরাজ: আমার শুরুটা কঠিন ছিল না, অনেক সহজই ছিল। কিন্তু যদি সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি বলতে বলেন, বর্তমান সময়টার কথা বলব। জাতীয় দলে এখন প্রচুর প্রতিযোগিতা। এই সময়ে যদি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হয় তাহলে পারফর্ম করতেই হবে। দিনকে দিন অনেক কিছু অ্যাডপ্ট করতে হবে। একটা জায়গায় থেমে থাকলে হবে না। অনেক ওপরে যাওয়ার জন্য অনেক উন্নতি করতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যদি আপনি ভালো করতে চান, নিজের জায়গা ধরে রাখতে চান তাহলে উন্নতি করতেই হবে। চেষ্টা করছি। আমার অনেক সময় আছে। আমি দীর্ঘ সময় খেলতে চাই। কোনো শর্টকাট উপায়ে সফল হতে চাই না। ভবিষ্যতে ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।

শেষ বিশ্বকাপের সময় আপনি যুব দলে ছিলেন। পরের বছরে যুব বিশ্বকাপে আপনার হাত ধরে বাংলাদেশ পেল সেরা সাফল্য। ওই বছরই আপনার টেস্ট অভিষেক। সাদা পোশাকে যতটা সহজে থিতু হয়েছেন রঙিন পোশাকে পারেননি। কিন্তু ২০১৮ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই আপনি দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। এখন কি জাতীয় দলের সঙ্গে নিজেকে আরো সম্পৃক্ত মনে হচ্ছে?
মিরাজ: তা তো অবশ্যই। এখন মনে হচ্ছে আমি পরিপূর্ণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর আমার সবকিছু পাল্টে দিয়েছি। আসলে আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। এবারের লিগের আগের প্রিমিয়ার লিগ আমার ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি যখন ফ্ল্যাট উইকেটে খেলেছি, তখন থেকেই ভেবেছি ওয়েস্ট ইন্ডিজে কী ধরনের উইকেটে বোলিং করতে হবে। কোন ব্যাটসম্যানকে কীভাবে আটকাতে হবে। ওটা আমাকে হেল্প করেছে। ওয়ানডের চিন্তাগুলো আমি প্রিমিয়ার লিগে থাকা অবস্থায় করেছি। সেগুলোই ওয়েস্ট ইন্ডিজে করেছি। ব্যাটসম্যানকে কীভাবে আটকাব, কীভাবে খেলতে দেব না- এগুলো চিন্তা করেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলেছি।

আমি একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি, ওয়ানডে ক্রিকেটে যদি আমি রান বাঁচাতে পারি তাহলে দলের অনেক উপকার হবে। এটাতেই জোর দিয়েছি। ১০ ওভার বোলিং করে ১-২ উইকেট পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ওই উইকেটগুলো যদি রান বাঁচিয়ে হয় তাহলে দলের উপকারে আসবে। চেষ্টা করছি সেটাই করে যাওয়ার। ওয়েষ্ট ইন্ডিজের পর এশিয়া কাপ, নিউজিল্যান্ড সফর; আমি আসলে ওই চিন্তা নিয়েই চলছি। ওয়ানডে ক্রিকেটে স্পিনারদের তেমন সুযোগ থাকে না। পেস বোলাররা সুইং করিয়ে সুবিধা আদায় করতে পারে। আমাদের অপশন খুব কম। আমাদেরকে ভালো জায়গায়, ভালো বল করেই যেতে হবে।

রঙিন পোশাকে ওয়ানডে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে মাশরাফির ভূমিকা কতটুকু?
মিরাজ: রঙিন পোশাকে আমার শুরুটা মাশরাফি ভাইয়ের হাত ধরেই। শ্রীলঙ্কায় আমার অভিষেক হয়েছিল। শততম টেস্টে ভালো করার পর আমি সব জায়গা থেকেই অভিনন্দন পেয়েছি। সবাই আমাকে প্রেইস করেছে। আমাকে ওয়ানডেতে নেওয়া হবে বলেছিল। কিন্তু আমি দেশে চলে আসি। পরে আমাকে আবার দেশ থেকে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়েছিল। শুনেছি, মাশরাফি ভাইয়ের চাওয়াতে আমাকে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়। ওদের অনেক বাঁহাতি ছিল... তাই আমি পরিকল্পনায় ছিলাম। আমরা ভালো ক্রিকেটও খেলিছিলাম ওই সফরে। ওয়ানডে, টেস্ট, টি-টোয়েন্টি তিনটি সিরিজই কিন্তু ড্র করেছিলাম। এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া হয়ে গেছে।
 


নতুন বলে বোলিং করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
মিরাজ: নতুন বলে বোলিং করতে সব সময়ই আমি সাচ্ছন্দ্যবোধ করি। নতুন বলে একটু সাইন থাকে, বল স্কিড করে। বলটা ভালো হওয়ার সুযোগও বেশি থাকে। একটু সাহায্য পাওয়া যায় বলে আমি শুরুতেই বল করতে পছন্দ করি।

কিন্তু শুরুতে তো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং করেন। পাওয়ার-প্লে থাকে। এর মাঝেও নতুন বলে বোলিংয়ের সাহস কীভাবে পান?
মিরাজ: আমি যখন যুব ক্রিকেট খেলেছি তখন থেকেই আমি নতুন বলে বোলিং করেছি। দেখা যায়, শুরু থেকেই অ্যাটাকিং বোলিং করেছি। উইকেট পেয়েছি। আবার উইকেট না পেলেও চাপে রেখেছি অন্য প্রান্তে কেউ এসে উইকেট পাচ্ছে। এটা আমাকে ওখান থেকেই উদ্বুদ্ধ করেছে। স্পিনার হয়েছি মার খেলে খেতেও পারি, কিন্তু ভয় পেলে তো আর চলবে না। এক-দুই ম্যাচে খারাপ করতে পারি, কিন্তু পরে আবার ঠিকই সফল হব। এটাই আমার চিন্তা।

দলের সবারই কথা, আপনি টিমম্যান হিসেবে অসাধারণ। ড্রেসিংরুমে আপনার উপস্থিতি সবাই টের পায়। দলকে তরতাজা রাখার কাজটা কি মূলত আপনারই?
মিরাজ: ড্রেসিংরুমে আমি, মুস্তাফিজ যারা জুনিয়র আছি তারা সবাই খুব শয়তানি করি। সাইফউদ্দিন এখন আমাদের সাথে আছে। একসাথে থাকি, সবকিছু একসাথে করি। রিয়াদ ভাই, মুশফিক ভাই আছে সবাই একসাথে মজা করি। উনারা একটু প্রশ্রয় দিলে আমরা আরো বেশি শয়তানি করি।

অন্যের সাফল্য মিরাজ অনেক খুশি হয়। মিরাজ নিজের সাফল্যে কতটা খুশি হয়?
মিরাজ: নিজের সাফল্যে আমি তো অনেক খুশি হবোই। দলের সবাইও আমার সাফল্যে খুশি হয়। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী যারা, আমার পরিবার, আমার আশে-পাশে যারা আছে, আমাকে যারা ভালোবাসে, পছন্দ করে তারা অনেক বেশি খুশি হয়। নিজের কাছে ভালো লাগার পাশাপাশি একটা দিক ভালো লাগে যে, যারা আমার জন্য দোয়া করে, ভালোবাসে আমি তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি। একটা জিনিস কী জানেন, আমি এখন পর্যন্ত যেসব জায়গায় গেছি, গ্রাম বলেন গঞ্জ বলেন যেখানেই বলেন না কেন, আমাকে মানুষ খুব পছন্দ করে। আল্লাহর অশেষ রহমত যে, মানুষজন আমাকে খুব আপন ভাবে। দোয়া করবেন যেন এভাবেই থাকতে পারি।

ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ। নিজের হোমওয়ার্কটা কীভাবে করছেন?
মিরাজ: এতদিন তো আমরা খেলার মধ্যে ছিলাম। সত্যি বলতে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে কী করব, সেসব চিন্তা করিনি। আমাদের দলের অনুশীলন চলছে। আমরা যোগ দিলে আমাদের ভূমিকা জানানো হবে। নিজের যতটুকু করার থাকবে আমি অবশ্যই সেটা ফুলফিল করব। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের আগে ১০-১২ দিনের সময় পাব। আমার মতে ওই অনুশীলনটাই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওই প্রস্তুতিটা যদি ঠিকমতো করতে পারি তাহলে আমরা ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অনেক ভালো করতে পারব।

মিরাজের সবচেয়ে শক্তির জায়গা কোনটি?
মিরাজ:  বোলিং। যদি আরো খুলে বলতে হয় একই লাইনে, এক জায়গায় বৈচিত্র্য নিয়ে বোলিং করে যেতে পারি।

কিন্তু যুব দলে তো আপনি ব্যাটিং অলরাউন্ডার ছিলেন...
মিরাজ: দেখুন বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ দলে আমার বোলিংটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি খেলছি না। আমি ভালো বোলিং করলে এখন বাংলাদেশ জিতবে, ভালো ফল পাবে। ব্যাটিংয়ে সুযোগ পেলে অবশ্যই প্রতিরোধ গড়ব। কিন্তু বোলিংয়ে আমার মূল ফোকাস।

বিশ্বকাপে বল হাতে কোন ব্যাটসম্যানের উইকেট পেতে চান?
মিরাজ: সবার উইকেট পেতে চাই। ভালো ব্যাটসম্যানদের উইকেট পেলে অবশ্যই ভালো লাগবে।

 

সেখানে সাফল্য পাওয়ার মূলমন্ত্র কী হতে পারে?
মিরাজ: একেবারে লাইন টু লাইন বোলিং করে যাওয়া। বোলিংয়ে বৈচিত্র্য থাকলে সফল হবোই ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা?
মিরাজ: আমি মনে করি আমাদের সেই সামর্থ্য আছে। অভিজ্ঞ খেলোয়াড় বেশি। অনেকেই বলেছে আমাদের দলটা এ যাবতকাল পর্যন্ত শক্তিশালী। আমিও বিশ্বাস করি আমাদের দলটা শক্তিশালী।

বাংলাদেশের কঠিন প্রতিপক্ষ কারা হতে পারে?
মিরাজ: সব দলই শক্তিশালী। এখানে কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে খেলবে না। তবে উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোকে কঠিন বলব। আমি একটা কথাই বলব, প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, আমাদের প্রত্যেকটা ম্যাচ জেতা গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাটিংয়ে কি জোর দিচ্ছেন? যদি আবার ওপেনিংয়ে সুযোগ হয়, করবেন ব্যাটিং ওপেন?
মিরাজ: ওটা তো ট্র্যাজেডি ছিল (২০১৮ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন দাসের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন মিরাজ)। ওরকম ট্র্যাজেডি আর না আসুক বাংলাদেশের ক্রিকেটে, সেই দোয়াই করব সবাই। তামিম ভাই তখন ইনজুরিতে। ফর্মে ছিল না অনেকে। তাই আমার কাছে সুযোগটা আসছিল। তাই বলে আবার আসুক তেমনটা আমি চাচ্ছি না। যারা এখন ওপেনিংয়ে আছে তারা যদি ভালো করে বাংলাদেশ অনেক ভালো করবে। যদি ওরকম কিছু হয় আমাকে করতেই হবে, তাহলে করব। কিন্তু ব্যক্তিগত মত, সবাই যেন বিশ্বকাপে সুস্থ থাকে, যার যার পজিশনে সবাই যেন ভালো খেলে তাহলেই হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ এপ্রিল ২০১৯/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়