ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জলবায়ু নিয়ে হতাশা

খান মো. শাহনেওয়াজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১২ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জলবায়ু নিয়ে হতাশা

খান মো. শাহনেওয়াজ : মরক্কোয় চলছে জাতিসংঘের ২২তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। কিন্তু এখানে প্রতিনিধিদের সকলেই উদ্বিগ্ন। কারণ একটাই, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যে প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে তা শেষ পর্যন্ত পুরন করবে কি না।

 

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। এর প্রভাবে বাড়ছে সমূদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এতে আমাদের বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপসহ অনেক দেশ ব্যাপক ক্ষতির সন্মুখীন হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জন্য সারা বিশ্বই আজ সরব। এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার প্রয়োজনে কার্বন নিঃসরণ কমানো প্রয়োজন। কিন্তু কার্বন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা পুরণ তো দূরের কথা এটি শেষ পর্যন্ত গতি পায় কিনা, তাই নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সংশয়।


একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, জাপানের কিয়োটো নগরীতে ১৯৯৭ সালে জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর লক্ষ্যে দেশগুলো কার্বন হ্রাস করতে সম্মত হয়। স্বাক্ষরিত হয় প্রথম জলবায়ু চুক্তি। বিশ্বের ১৩ শতাংশ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি আর অনুমোদন দেয়নি। এমনকি নানামুখী চাপ ও দাবি সত্ত্বেও কার্বন কমানোর প্রতিশ্রুতি পুরণে আন্তরিকতার পরিচয় দেয়নি। এরপর ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ ভারত, চীন ও রাশিয়া পরোক্ষভাবে শর্ত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র তার কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি বস্তবায়ন করলে একই অনুপাতে তারাও কার্বন নিঃসরণ কমাবে। প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সরকার এই চুক্তি অনুমোদন করে।

 

প্যারিস চুক্তি অনুয়ায়ী সবুজ জলবায়ু তহবিলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ৩০০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত দিয়েছে মাত্র ৫০ কোটি ডলার। বাকি অর্থ আদৌ তারা দেবে কিনা তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। এখন যুক্তরাষ্ট্র যদি কিয়োটো প্রটোকলের মতো প্যারিস চুক্তি থেকেও সরে আসে, তাহলে কি হবে ? বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবাদীরা বেশ সরব হয়ে উঠেছেন যার প্রভাব পরেছে সম্মেলনে।

 

মরক্কোর মারাক্কেশ শহরে জলবায়ু সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে প্যারিস চুক্তি অনুমোদনকারী দেশের সংখ্যা ছিলো মাত্র ৮৫। শুক্রবার পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫।  বিশ্বের ৯৫টি দেশ নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার অঙ্গীকার (এনডিসি) বাস্তবায়নের রূপরেখা জমা দিয়েছে। কিয়োটা প্রটোকল সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় জলবায়ু ভুক্তভোগী দেশগুলোর যে শিক্ষা হয়েছে সে বিষয়গুলো সামনে রেখেই এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি। এ নিয়ে আলোচনাও চলছে। 


আসলে জলবায়ু চুক্তি এমন একটি বিষয় যার শর্ত বাস্তবায়নে কোন দেশকে বাধ্য করার উপায় নেই। এটা পুরোটাই যার যার আন্তরিকতার ব্যাপার। কোন দেশ চাইলে এই চুক্তি থেকে বেরিয়েও যেতে পারে। প্যারিস চুক্তির আওতায় বিভিন্ন দেশ তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে, তার বাস্তবায়ন কতখানি হলো বা আদৌ বাস্তবায়ন হলো কিনা তার পর্যালোচনাও তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব নয়। এর পর্যালোচনা হবে ২০১৮ সালে। কিন্তু এই শতকে বৈশ্বিক উষ্ণতা যাতে বর্তমান গড় উষ্ণতার চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না পারে, সে উপায় খোঁজার জন্যই বসেছে মারাক্কেশ জলবায়ু সম্মেলন। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমএ) এই সম্মেলনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল ছিল বিশ্বের উষ্ণতম সময়।

 

জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির সন্মুখীন দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। সমূদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকা লবনাক্ত পানির নিচে তলিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে উপকূলীয় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা লবণ পানিতে ধুঁকছে। এসব এলাকায় জমি ধীরে ধীরে উর্বরতা হারাচ্ছে, মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। মানুষ ভিটেবাড়ি ছেড়ে সুবিধাজনক জায়গায় গিয়ে বসতি গড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে অত্যন্ত স্পষ্ট। ঋতু বৈচিত্রে অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে চাষাবাদ ও পশুসম্পদ হুমকির মুখে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল, ব্যহত হচ্ছে জীবিকা, বাড়ছে রোগবালাই। পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটায় কমে আসছে বৃক্ষসম্পদ।

 

মারাক্কেশ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন এতে যোগ দিচ্ছেন। সম্মেলনে উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ দেওয়ার কথা। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের একটি অংশ অগ্রবর্তী দল হিসেবে মারাক্কেশে গেছে। দুটি সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা  জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার অঙ্গীকার (এনডিসি) বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের মানুষের দুর্দশার কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব যে ভাবে পরিলিক্ষিত হচ্ছে তাতে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য কার্বন নিঃসরণকারী শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছে অর্থ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাস্তুচ্যুতদের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।

 

 

তথ্যসূত্র : এসোসিয়েটেড প্রেস, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ নভেম্বর ২০১৬/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়