ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রাজধানীতে মহীরুহের পতন

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ৩ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজধানীতে মহীরুহের পতন

মঙ্গলবার রাতে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে ঝড়ে ভেঙে পড়া বৃক্ষ

হাসান মাহামুদ : পর পর দুই সপ্তাহে রাজধানীতে দুটি মহীরুহের পতন হয়েছে। প্রবল বর্ষণসহ বৈশাখী ঝড়ে মঙ্গলবার রাতে ভেঙে গেছে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ এলাকার স্মৃতিবিজড়িত একটি বৃক্ষ। আগের সপ্তাহে ভেঙে পড়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি নিম গাছ।

বৃক্ষ ও বন আমাদের কত বন্ধু তা আর বলার অবকাশ রাখে না। নাগরিক জীবনে গাছ বা বৃক্ষ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। যুগ যুগ ধরে মানুষ গাছপালা উপকারিতা বুঝেছে। বৃক্ষ সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এ কথা আরো বেশি সত্য বলে পরিচিত। এর বাইরে কিছু বৃক্ষ পরিণত হয় মহীরুহে। যে মহীরুহ ঘিরে থাকে আনন্দ, উচ্ছ্বাস, বিচ্ছেদের ইতিহাস। তেমনি একটি বৃক্ষ ছিল হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের বিশাল বৃক্ষটি। মঙ্গলবার রাতে ঝড়ে ভেঙে পড়েছে বৃক্ষটি।

হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, পথচারী এবং কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হতো এই বৃক্ষের। এলাকার শোভাবর্ধন এবং বাতাসের ভারসাম্য রক্ষায় এই বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। কিন্তু ঝড়ে গাছটি ভেঙে পড়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

 


২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে ঝড়ে ভেঙে পড়া বৃক্ষ

 

ঝড়ে বৃক্ষটি ভেঙে পড়ার বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদ এলাহী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘মহীরুহের পতন। হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে উনার সঙ্গে আমার নিয়মিত দেখা হত। কাল হতে আর হবে না। এর আগে আরেকটি পরিচিত মহীরুহ ঢাবি সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনের নিমবৃক্ষের পতনে খুব খারাপ লেগেছিল। আশ্চর্য ব্যাপার। সামান্য ঝড়ে ব্যাপারটা হয়েছে। বাস্তবে বিরাট ঝড়ে কোনো মহীরুহের পতন হতে আমি দেখিনি। আরেকটা কারণে মহীরুহের পতন হয়। কারণটি হলো তারা মহীরুহ।’ এই বিষয়ে আরো বেশকিছু দুঃখ ভারাক্রান্ত পোষ্ট দেখা গেছে।

জানা গেছে, গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী এই ঝড়ের আঘাতে বড় একটি বৃক্ষ ভেঙে পড়েছিল। তখনও নগরবাসী বৃক্ষটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়। বৃক্ষটি সুপ্রিম কোর্টের সীমানা প্রাচীরের ওপর ভেঙে পড়েছিল।

এদিকে গত সপ্তাহে ২৫ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের একটি নিম গাছ কালবৈশাখী ঝড়ে ভেঙে পড়ে। গাছটিকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগ আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতে এই নিম গাছটির বয়স কম করে হলেও ১০০ হবে। তবে কষ্টের সঙ্গে ক্ষোভও ঝাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। একটা শতবর্ষী গাছকে টিকিয়ে রাখতে যে ধরনের যত্ম নেওয়া দরকার, কর্তৃপক্ষ সেভাবে নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভেঙে পড়া নিম গাছ

 

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক চিত্রশিল্পী আশিক রন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কিছুক্ষণ আগে লাইব্রেরির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গাছটা দেখে বুকের মধ্যে সত্যি সত্যি মোচড় দিল! মনে হলো কোনো স্বজনকে হারালাম। ক্যাম্পাসের প্রিয় গাছগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।’

প্রাক্তন ঢাবি শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম রনি লিখেছেন, ‘আমরা যারা সরাসরি প্রত্যক্ষকারী তাদের আরো বেশি খারাপ লাগছে। প্রথমদিন থেকেই প্রেম এই গাছটির সাথে। জাকির ভাইয়ের দোকান আর এই গাছের সাথে সপ্তাহে অন্তত একবার সাক্ষাৎ হতোই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামের একটি জনপ্রিয় ফেসবুক পেজে সাজেদুল ইসলাম বাঁধন নামের একজন উপড়ে যাওয়া নিম গাছের ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন যেখানে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাইক পড়েছে প্রায় আড়াই হাজার। বাঁধন লিখেছেন, ‘হৃদয়বিদারক ঘটনা। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের নিম গাছটি আর নেই।’

ফেসবুকে ঢাবির শিক্ষার্থীরা অনেকেই একটা নিম গাছের বদলে সে এলাকায় একাধিক নিম গাছ এবং অন্যান্য ওষুধি ও ফলজ বৃক্ষ রোপণের দাবি জানিয়েছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মে ২০১৭/হাসান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়