ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

নিরাপদ পানি পাচ্ছে সুন্দরবন সংলগ্ন ২৫ উপজেলা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিরাপদ পানি পাচ্ছে সুন্দরবন সংলগ্ন ২৫ উপজেলা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : সুন্দরবন সংলগ্ন  লবনাক্ত মাটি ও পানি অধ্যুষিত  ২৫ উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

বৃহত্তর খুলনার লবনাক্ত এই ২৫ উপজেলায় মিঠে পানি সরবরাহ এবং ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

২০০৭ সালে সিডর এবং ২০০৯ সালে আইলা দুর্যোগে উপকূল এলাকায় নিরাপদ পানির সংকট দেখা দেয়। পাশাপাশি লবনাক্ততা বেড়ে যায়। এ কারণে সুন্দরবনের ৪৩টি কম্পার্টমেন্টে সুন্দরী গাছে টপডায়িং রোগেরও বিস্তার লাভ করে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব একটি আঞ্চলিক সমস্যা। মাটি ও পানির লবনাক্ততা সুন্দরবন সংলগ্ন ২৫ উপজেলায় অন্যতম দুর্যোগ। উজানে গড়াই নদীতে শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে বৃহত্তর খুলনায় ভূ-উপরিস্থ পানি ও মাটিতে লবনাক্ততা বেড়ে যায়, যা স্বাভাবিক কৃষি ব্যবস্থা ও শিল্পে বিশুদ্ধ পানির ব্যবহারকে অনিশ্চিত করে তোলে। একদিকে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে এবং মানবদেহে আর্সেনিকসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মিঠে পানি সরবরাহের লক্ষে উপকূলবর্তী খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, তেরখাদা, দিঘলিয়া, রূপসা, বাগেরহাট জেলা সদর, মোল্লাহাট, ফকিরহাট, কচুয়া, শরণখোলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, চিতলমারি, মংলা, সাতক্ষীরা জেলা সদর, কলারোয়া, তালা, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায় এ অর্থ বছর থেকে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ প্রকল্পের আওতায় ৬৬৪টি গভীর নলকূপ স্থাপন, ৫ হাজার স্থানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, সোলার পাম্পযুক্ত পন্ডস্যান্ড ফিল্টার ও খুলনার ফুলতলা উপজেলায় দু’টি উৎপাদক নলকূপ থেকে ১২ কিলোমিটার এলাকায় পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে। সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা, নাকতাড়া, কোদান্ডা, বুড়োখারাটি, শিতলপুর, মহিষকুরসহ এলাকার ১১টি গ্রামে উৎপাদক নলকূপ থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ হবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের খুলনাস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ জানান, বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালি ইউনিয়নে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ফুলতলা উপজেলার ৪ বাড়িতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিরাপদ পানির সুবিধা দেওয়া হবে।

তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এসএম ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের পর এ বছর থেকেই নিরাপদ পানি সরবরাহের কাজ শুরু হবে। আগামী অর্থ বছরে তা শেষ হবে। এতে প্রায় পৌণে ২ লাখ জনগোষ্ঠি বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পাবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সুন্দরবনের মাটিতে অত্যধিক লবণাক্ততা, জিংক, ম্যাঙ্গোনিজের স্বল্পতা এবং ক্যালসিয়ামে অতিরিক্ত পরিমাণ লরেনথাস বা এক ধরণের পরজীবীর কারণে টপডায়িং রোগ বিস্তার লাভ করেছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সুন্দরবনে আগামরা ও টপডায়িং রোগ ছড়িয়ে পড়ে। সুন্দরবনের ৪৩টি কম্পার্টমেন্টে এ রোগ অপ্রতিরোধ্যভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।



রাইজিংবিডি/খুলনা/১৪ ডিসেম্বর ২০১৭/ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়