ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কবিতার সাথে অর্থনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই : শান্তা মারিয়া

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কবিতার সাথে অর্থনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই : শান্তা মারিয়া

রাইজিংবিডির স্টলে শান্তা মারিয়া (ছবি : ছাইফুল ইসলাম মাছুম)

শান্তা মারিয়া কবি, সাংবাদিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। ১৯৯৭ সালে দৈনিক মুক্তকণ্ঠে সাংবাদিকতা শুরু। কাজ করেছেন জনকণ্ঠ, আমাদের সময়, রেডিও আমার ও চীন আন্তর্জাতিক বেতারে। তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। এ পর্যন্ত নয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে আসেন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাইজিংবিডি ডটকমের স্টলে। এ সময় সাহিত্যের নানা প্রসঙ্গ, লেখক, পাঠক ও বইমেলা নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ বরকতুল্লাহ।

সাইফ বরকতুল্লাহ : বইমেলা কেমন দেখছেন?

শান্তা মারিয়া : ভালো লাগছে। বাবার হাত ধরে বইমেলায় আমি ছোটবেলা থেকেই আসছি। বইয়ের মেলা মানেই হচ্ছে আমার প্রিয় স্বজনদের সমাবেশ। স্বজন সমাবেশ সব সময় ভালো লাগবে। আমার কাছে খুব ভালো লাগে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনি তো বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন। চীনে অনেক দিন ছিলেন। ভিনদেশের বইমেলা আর আমাদের অমর একুশে বইমেলার মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পান?

শান্তা মারিয়া : অনেক পার্থক্য আছে। তবে আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের বইমেলায় প্রাণের স্পর্শ অনেক বেশি। বাইরের বইমেলাগুলো অনেক সিসটেমেটিক। অনেক সাজানো, সুশৃঙ্খল, বই বিক্রিও অনেক বেশি হয়। কিন্তু আমাদের বইমেলার সাথে আমাদের যে আবেগ, আমাদের যে ভালোবাসা, অমর একুশের সাথে আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের ব্যাপার জড়িত। সেদিক থেকে আমাদের বইমেলা অনেক প্রাণোচ্ছ্বল।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনি অনেক বিষয় নিয়ে লিখছেন। কিন্তু আমরা আপনাকে কবি হিসেবেই চিনি। ইদানীং ভ্রমণকাহিনীও বেশ লিখছেন। কবি, কথাসাহিত্যেক না গল্পকার- কী পরিচয় আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

শান্তা মারিয়া : আমি অনেক বিষয় নিয়ে লিখি। অনেক ফরমায়েশি লেখাও লিখি। অবশ্যই কবি পরিচয় আমার কাছে বেশি ভালোলাগে। কিন্তু তারপরও আমি কলম শ্রমিক। জীবিকার জন্য কিন্তু আমাকে লিখতে হয়। জীবিকা অর্জন হয় আমার লেখার মাধ্যমে। সুতরাং আমি আসলে কলম শ্রমিক, শ্রমজীবী মানুষ। লেখার মাধ্যমে রোজগার করি। তবে কবিতার সাথে অর্থনৈতিক কোনো  সম্পর্ক নেই। কবিতা প্রাণের তাগিদে আমি লিখি।

সাইফ বরকতুল্লাহ : এখন কিন্তু বিপুল সংখ্যক কবিতার বই বের হয়। বিপুল সংখ্যক কবি আসছেন। বিশেষ করে নতুন লেখকদের কবিতার দিকেই ঝোঁকটা বেশি। কিন্তু একটা সমালোচনাও আছে এখন যারা কবিতা লিখছেন তারা ছন্দের দিকে মনোযোগী নন?

শান্তা মারিয়া : এটা শুধু কবিতার ক্ষেত্রে না, আমার মনে হয় সব ক্ষেত্রেই এ সমস্যা। আমি যদি লিখতে চাই তাহলে আমাকে পড়তে হবে। ছন্দ জানতে হবে। ছন্দ আমি মানব কি মানব না সেটি পরের বিষয়- ছন্দ আমাকে জানতে হবে। তারপর আমি ভাঙি, অন্য রকমভাবে লিখি। আমি যদি গদ্যও লিখি, লেখার আগে আমাকে সে বিষয়ে পড়তে হবে জানতে হবে। এখন আমি দেখছি যে পঠনটা একটু কম, মানুষের পড়ার প্রবণতা কম- এটা আমার কাছে ভালো মনে হয় না। আমি যদি না পড়ি তাহলে আম কী লিখব। আপনি যে বিষয়ে লিখবেন সে বিষয়ে জানতে হবে। উপন্যাস লিখছেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলো পড়া দরকার, শিল্পসাহিত্য সম্পর্কে জানা দরকার। গদ্য লিখলেও গদ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। আমি ভ্রমণকাহিনী লিখছি। কিন্তু যে দেশের কাহিনী নিয়ে লিখি আমি কিন্তু সেখানকার বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করি। আমি যে দেশে বেড়াতে গেছি, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়েই লিখি কিন্তু তারপরও আমি ওই দেশটা সম্পর্কে লেখাপড়া করে তারপর লিখি। লেখাপড়া না করলে লেখার কথা আমি ভাবতেও পারি না।

সাইফ বরকতুল্লাহ : এখন তো তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার বিশ্বব্যাপী। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহিত্য নিয়ে ব্যাপক সরব। এখানেও কিন্তু বাংলা সাহিত্যের একটা উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনার ভাবনা কী?

শান্তা মারিয়া : এটা ভালো। অবশ্যই ইতিবাচক। ই-বুক বলে যে ‌ব্যাপারটা আছে সেটাও খারাপ না। মূলকথাটা হচ্ছে আমি বইয়ের টেক্সটা পড়ছি কি না। বই এক সময় তালপাতার পুঠিতেও লেখা হতো। এক সময় সুমেরিয়াতে দেখা গেছে, মাটির ফলকের ওপরে লিখছে। এখন কাগজে ছাপা হচ্ছে। এরপরে অনলাইনে বই পড়া যাচ্ছে। ফর্মটা পরিবর্তন হতেই পারে। বিষয়বস্তুটা পড়া হচ্ছে কি না এটা আসল কথা। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে যে লেখালেখি হচ্ছে এটা ভালো।

সাইফ বরকতুল্লাহ : বেশিরভাগ বই সম্পাদনা ছাড়া বের হচ্ছে, আপনি বিষয়টা কীভাবে দেখেন?

শান্তা মারিয়া : এটা উচিত না। সম্পাদনা করে বই বের করতে হবে। লেখককে পরিশ্রম করতে হবে। প্রকাশকের সম্পাদনা পরিষদ থাকতে হবে। সম্পাদনাটা জরুরি।

সাইফ বরকতুল্লাহ : ফেব্রুয়ারি মাস এলেই, বইমেলা এলেই বই উৎসব, প্রচুর বই প্রকাশিত হয়। মিডিয়ায় ব্যাপক কাভারেজ পায়। কিন্তু বছরের অন্য মাসগুলোতে তা হয় না। আপনার ভাবনা কী?

শান্তা মারিয়া : ফেব্রুয়ারি মাস এলে, বইমেলা এলে বই নিয়ে মাতামাতি হবে এটা ভালো, তাই বলে অন্য সময়ে বইকে ভুলে থাকতে হবে এটা ঠিক না। অন্য সময়ে বই লিখতে হবে, প্রকাশ করতে হবে, সেটা নিয়ে প্রকাশনা উৎসবও হতে পারে। বই বিক্রিও যেন হয়, আমরা শুধু ফেব্রুয়ারিতেই বই কিনব এই প্রবণতা আত্মবিধ্বংসী।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনি কী বিষয় নিয়ে লিখতে পছন্দ করেন?

শান্তা মারিয়া : মানব অধিকার, মানুষের অধিকার।  আমি মানুষের অধিকার নিয়ে লিখতে ভালোবাসি। আমি সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে লিখেছি। সাঁওতালদের অধিকার নিয়ে লিখেছি। বিশ্বের অন্য প্রান্তেও যদি কোনো মানুষ নিপীড়িত হয় তাদের অধিকার নিয়েও লিখব। মানবাধিধকার নিয়ে লেখাটা হচ্ছে আমার মূল কর্তব্য।

সাইফ বরকতুল্লাহ : এবার আপনার কী কী বই বের হয়েছে?

শান্তা মারিয়া : এবার আমার দুটি বই বেরিয়েছে। একটি ভ্রমণকাহিনি। যেটি রাইজিংবিডিতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল চকবাজার টু চায়না- সেটি গ্রন্থ আকারে বের হচ্ছে। আরেকটি আমার অনুলিখন আমার বাবার আত্মজীবনী। আমার বাবা কমরেড মোহাম্মদ তকীয়ুল্লাহ। উনি ভাষাসৈনিক। ভাষা আন্দোলনের আলোকচিত্রি, ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির পঞ্চাশের দশকে একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন। তার আত্মজীবনী পলাতক জীবনের বাঁকে বাঁকে, বলা যায় আমারই অনুলিখন, সম্পাদনাও আমার করা। এটি বের হচ্ছে বিপিএল থেকে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : লেখালেখি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা?

শান্তা মারিয়া : এ বছর আমি উপন্যাস লেখা শুরু করেছি এটা শেষ করব। নারীবিষয়ক লেখা আরো লিখব। আরো দেশ ঘুরতে চাই। সেই দেশের সমাজ ব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও মানুষের অধিকার নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

শান্তা মারিয়া : আপনাকেও। রাইজিংবিডিকে  শুভেচ্ছা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সাইফ/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়