ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

লেখকদের রয়্যালিটির টাকা যথাযথভাবে দেওয়া হচ্ছে না : আহমদ রফিক

অহ নওরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লেখকদের রয়্যালিটির টাকা যথাযথভাবে দেওয়া হচ্ছে না : আহমদ রফিক

লেখক, গবেষক ও ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিষয়ে গবেষণা তার বিশেষ কৃতিত্ব। টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাকে রবীন্দ্রত্ত্বাচার্য উপাধিতে ভূষিত করে। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বই প্রকাশ এবং লেখক সম্পর্কিত বেশকিছু কথা বলেছেন। যার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অহ নওরোজ

রাইজিংবিডি : কেমন আছেন?
আহমদ রফিক :
বয়স হয়েছে। চেষ্টা করেও ভালো থাকা কঠিন।

রাইজিংবিডি : গ্রন্থমেলার অর্ধেক সময় চলে গেল। মেলা উপলক্ষে বই পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেছেন কি-না জানতে চাই।
আহমদ রফিক :
মেলায় হয়তো প্রকাশক বই বের করেন। কিন্তু মেলাকে উদ্দেশ্য করে কখনো লিখিনি। যেমন এ বছরও দুই দিনটা কাজ করবো বলে প্রত্যাশা আছে। কাজ শেষ হলে সেটি মেলায় বের হবে কী আগে হবে সেটি নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।

রাইজিংবিডি : আপনার তো অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।  সব বইয়ের রয়্যালিটির টাকা কী যথাযথভাবে পেয়েছেন?
আহমদ রফিক :
হাতে গোনা কয়েকটি বইয়ের রয়্যালিটির টাকা পেয়েছি। অনেকে আমাকে খুব ঠকিয়েছে। এদের অনেকেই নামকরা প্রকাশক। বই প্রকাশ করেছে, সেই বই চলেছে, কিন্তু টাকা-পয়সা দেয়নি। আমিও লজ্জা বশত চাইনি। আগে লজ্জার এই ব্যাপারটা ছিল। কিন্তু ইদানিং আমি বছরখানেক ধরে আর্থিকভাবে সমস্যায় আছি তখন আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, তাও আমি নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেইনি-আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে বলেছে ‘আমাকে এসব বিষয়ে শক্ত হতে হবে’। সেখান থেকে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি।

রাইজিংবিডি : আপনি প্রকাশকদের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন ?
আহমদ রফিক :
হ্যাঁ। এরপর থেকে আমি আমার সব বড় প্রকাশকদের কাছে চিঠি লিখলাম যে-এখন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বইয়ের যে রয়্যালিটি প্রাপ্য হয় বই প্রকাশের পরপরই বাজারজাত করার আগে আমাকে পাঠিয়ে দিতে হবে। তা না হলে প্রকাশকের সঙ্গে কোনো অ্যাগ্রিমেন্টে যাবো না। এতে কেউ কেউ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, আবার কেউ কেউ অসন্তুষ্ট হয়েছে। তবে পাণ্ডুলিপি চাওয়া থেকে কেউ বিরত নেই। উপরন্তু দুই একজন নতুন প্রকাশক অগ্রিম টাকা দিয়ে বই ছাপছে।

রাইজিংবিডি : কয়েকবার চাওয়ার পরও টাকা দেয়নি, এমন ঘটনা ঘটেছে?
আহমদ রফিক :
অনেকে আছে, মিডিয়ার সামনে নাম বলে আমি তাদের ছোট করবো না। তারা আমার বই প্রকাশ করেছে দুই-তিন সংস্করণ করেছে। কিন্তু আমার টাকা দেয় না। বইমেলায় প্যাভিলিয়ন নেয়, ব্যবসা করে। অন্য সবকিছুতেই টাকা খরচ করে, কিন্তু যে লেখকের ওপর নির্ভর করে বাণিজ্য গড়ে উঠল সেই লেখককে যে রয়্যালিটির টাকা দেওয়া হচ্ছে না, তার প্রমাণ আমি নিজেই। আর শুধু যে আমাকেই টাকা দেওয়া হচ্ছে না তা নয়, অনেক লেখকই আছেন যাদের রয়্যালিটির টাকা দেওয়া হচ্ছে না। অথচ তাদের বই দিয়ে প্রকাশক দিব্যি ব্যবসা করে চলছেন। এখন তাদেরকে ফোন করে রয়্যালিটির টাকা চাই বলে ফোনও ধরে না। পত্রিকায় লেখা দিলে গত দশ বছর ধরে একই সম্মানি। টেলিভিশনে গেলেও তো তাই।

রাইজিংবিডি : এটা নিয়ে আপনারা কথা বলেন না কেন?
আহমদ রফিক :
সিনিয়র হয়ে গেছি বলে বলতে পারি না। অনেকে টাকা দিবেন বলে দেন না। তোমরা তরুণ আছো, তোমাদের উচিত এটা নিয়ে কথা বলা।

রাইজিংবিডি : বর্তমান সময়ে অনেককেই দেখছি নিজের টাকা খরচ করে বই প্রকাশ করেন। এটি কতটুকু সাহিত্যবান্ধব?
আহমদ রফিক :
আমার মনে হয় লেখালেখি করার সাথে সাথে বই করার জন্য একটু অপেক্ষা করা উচিত। কারো লেখা গ্রন্থাকারে প্রকাশ হওয়ার জন্য পোক্ত হওয়া দরকার। পকেটের টাকা পয়সা দিয়ে বই করে নিজে ধরে ধরে বই বিক্রি করার মধ্যে সার্থকতা নেই। এটি লেখকের জন্য ক্ষতিকর। আমি এর পক্ষপাতি না। বই প্রকাশের আগে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখে লিখে পাকা হলে তারপর প্রকাশক এমনিতেই খুঁজে বের করবেন। আর এভাবে বই প্রকাশ হলেই তো লেখকের আনন্দ।

রাইজিংবিডি : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আহমদ রফিক :
তোমাকেও ধন্যবাদ। রাইজিংবিডির পাঠকদের শুভেচ্ছা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়