ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

হাতিয়ার গণহত্যা: এ প্রজন্মকে জানাতে হবে

বাদশাহ সৈকত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাতিয়ার গণহত্যা:  এ প্রজন্মকে জানাতে হবে

হাতিয়া বাজারের কাছে নির্মিত নতুন স্মৃতিসৌধ

বাদশাহ সৈকত, কুড়িগ্রাম : ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে গণহত্যা চালায় হানাদার বাহিনী। বর্বরোচিত ওই গণহত্যায় প্রাণ হারান ৬৯৭ জন নিরীহ গ্রামবাসী।

 

স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও তাদের নাম শহীদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বৃহত্তর রংপৃরের সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হয় হাতিয়ায়। হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলো এখনও পায়নি স্বজন হারানোর বিচার।

 

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের মিথ্যা তথ্যে পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা হাতিয়া ইউনিয়নে সশস্ত্র অবস্থান নেয়। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই তারা একে একে বাগুয়া, অনন্তপুর, রামখানা, মন্ডলেরহাট, নয়াদাড়া, নীলকণ্ঠ ও দাগারকুঠি গ্রামের নারী-পুরুষকে ধরে এনে দাগারকুঠিতে সারিবদ্ধ করে নির্বিচারে গুলি চালায়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহগুলোকে আগুনে ফেলে দেয়। হত্যাকাণ্ডের পরদিন এলাকাবাসী দাগারকুঠি গ্রামেই ৬৯৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে গণকবর দেয়।

 

হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে পুরাতন স্মৃতিসৌধ

 

গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভটি ইতিমধ্যেই ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়েছে। স্থানান্তরিত স্মৃতিস্তম্ভটি এখন দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে। শহীদদের স্মরণে অনন্তপুর বাজারের পাশে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে আরো একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

 

মহান মুক্তিযুদ্ধে হাতিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সেসময়ে বেঁচে থাকা মানুষজন মনে রাখলেও নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই তা অজানা। এখনই এর ইতিহাস সংরক্ষণ করে হত্যাকাণ্ডের শিকার ৬৯৭ জনের নাম শহীদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করলে এক সময় এ গণহত্যার কথা ভুলে যাবে আগামী প্রজন্ম।   

 

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা গুলিবিদ্ধ বাবর আলীসহ অনেকেই জানান, সেই স্মৃতি মনে পড়লে এখনও কান্নায় বুক ভেসে যায়। গণহত্যার কবল থেকে বাঁচলেও স্বজনহারা সে মানুষগুলো আজ জীবনযুদ্ধের কাছে অসহায়। অনেকে সংসারের কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দুঃখ কষ্টে দিন পার করলেও কোনো সরকারই খবর রাখেনি তাদের।

 

হাতিয়া গণহত্যায় স্বজন হারানো পরিবার

 

এলাকাবাসী জানান, পাক সেনাদের আচমকা হামলায় গ্রামের অন্যান্য মানুষের মত প্রাণ ভয়ে পালাতে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি মুক্তিকামী মানুষদের। একে একে চোখের সামনে পাখির মত গুলি চালিয়ে হত্যা করে তাদের প্রিয় স্বজনদের। এখন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছুই করার নেই তাদের।

 

হাতিয়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান জানান, হাতিয়ার অনন্তপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল রাজাকাররা। আর এ তথ্যের ভিত্তিতে সশস্ত্র অবস্থায় পাকবাহিনী হাতিয়া ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে লোকজনকে ধরে এনে লাইন করে পাখির মতো গুলি করে মেরেছে। এটি উত্তরবঙ্গের একটি বড় গণহত্যার ঘটনা। আমরা হাতিয়া গণহত্যা দিবস ঘোষণার পাশাপাশি এ হত্যাকাণ্ডে নিহত শহীদদের নামফলক তৈরির দাবি জানাই। যাতে করে নতুন প্রজন্ম এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারে।

 

এ ব্যাপারে হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, ১৯৭১ সালে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড হাতিয়ায় সংঘটিত হলেও এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হয়। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রকমের সুযোগ সুবিধাও পায়নি।

 

এখানকার এলাকার মানুষের দাবি হাতিয়া হত্যাকাণ্ডের শিকার ৬৯৭ জনের নাম রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক। আগামী প্রজন্মকে এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করতে হাতিয়ায় স্মৃতিস্তম্ভের পাশে শহীদদের নামফলক স্থাপনসহ ১৩ নভেম্বর দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের ব্যবস্থা করা হোক। 

 

 

 

রাইজিংবিডি/কুড়িগ্রাম/১৯ ডিসেম্বর ২০১৬/বাদশাহ সৈকত/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়