ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চাকরির প্রলোভনে ৮ বছরের দাসত্ব

ফাতিমা রুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৫, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চাকরির প্রলোভনে ৮ বছরের দাসত্ব

আলেকজান্ডার এলগিন

ফাতিমা রুনা : দাস প্রথার অবসান ঘটেছে অনেক আগে। অতীতের সেই দাস প্রথাকে মানব ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। কিন্তু এই আধুনিক যুগেও দাস প্রথার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে রাশিয়ায়।

আলেকজান্ডার এলগিন নামের এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ৮ বছর দাস করে রাখা হয়।

স্ত্রী বিয়োগের পর তার সন্তানরা তাকে রেখে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায়। ফলশ্রুতিতে অর্থ কষ্টে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এমন মুহূর্তে চাকরির লোভনীয় প্রস্তাব পেয়ে তার পুরোনো এক সহকর্মীর ফার্মে রাখালের কাজে যোগ দেন তিনি।

কিন্তু ভাগ্য বিধাতা যে তার ওপর সদয় ছিলেন না তা বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়নি, যখন তাকে জনমানবহীন সেন্ট্রাল রাশিয়ার এক দুর্গম এলাকায় পাঠানো হয়। কেঁড়ে নেয়া হয় তার ব্যাংক কার্ড ও ফোন। এমনকি নতুন মনিব তার কষ্টার্জিত টাকাগুলোও খরচ করতে শুরু করে।

এলগিনের বয়স এখন আশির ঘরে, যাকে ভারচুয়াল স্লেভ হিসেবে গ্রহণ করে ওই পরিবারটি। নিজ ফিউনিরাল বা মৃত্যু পরবর্তী খরচ হিসেবে তার সঞ্চিত সব অর্থ চাকরি দেয়ার নামে নিয়ে নেয় পরিবারটি।

এলগিন বলেন, ‘চাকরিদাতা ওই নারী কথা দিয়েছিলেন যে, তারা আমাকে নিয়মিত খাবার, কাপড় দিবে। সে বারবার বলত যে, আমি যদি কাজ করি তা হলে পেনশনের অর্থ জমাতে পারব।’

রাখালের কাজের বাইরে যখন অন্যান্য কাজও তার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়, তখন তিনি তাও করেন। কারণ পরিশ্রম করলে ফিউনিরালের অর্থ তো জমা হবে।

শত কষ্ট করেও বৃদ্ধটি তার উপর অর্পিত কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু নিষ্ঠুরতা চরম আকার ধারণ করে যখন তাকে মাসে মাত্র দুইবারের বেশি খাদ্য দেয়া হত না। এই দুইবারের খাবারের তালিকায় কখনো শুধু নুডুলস দেয়া হত।

বেঁচে থাকার তাগিদে এলগিন প্রতিবেশী গ্রামে বাধ্য হয়ে খাবার ভিক্ষা করতেন। এক পর্যায়ে, তিনি এতই দুর্বল হয়ে পড়েন যে, তার এই দাসত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে। অবস্থা এতটাই জটিল হয় যে, তিনি আত্মহত্যা করার জন্যও তৈরি হয়েছিলেন। যদিও সর্বশেষ তার নাতি ভিচেস্লভ তাকে খুঁজে পান এবং উদ্ধার করে ওই বন্দিদশা থেকে।

পরবর্তীতে এলগিনের নাতি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, চাকরিদাতা পরিবারটি তার দাদার পেনশনের অর্থ দিয়ে নিজেদের ঋণ পরিশোধ ও জিনিসপত্র কিনেছেন। আট বছরের এই বন্দিজীবনে এলগিন ১০ হাজার ৫ শত পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় সাড়ে দশ লাখ টাকা হারিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ভিচেস্লভ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করবে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা তা জানা যায় নি।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জানুয়ারি ২০১৭/ফাতিমা/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়