ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিপিও সামিটের সেমিনারে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২১, ১৬ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিপিও সামিটের সেমিনারে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত বিপিও সামিট বাংলাদেশ-২০১৮ এর প্রথম দিনে ছয়টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) এর আয়োজনে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জমজমাট এ আয়োজন। সামিটের প্রথম দিন ছয়টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি সেমিনারে ছিল তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। আজ বিপিও সামিটের দ্বিতীয় দিনেও ৪টি সেমিনার ও ১টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।

বিপিও অ্যাজ এ ক্যারিয়ার ফর ইয়ুথ
রোববার, উদ্বোধনের পর দুপুর আড়াইটার সময় বলরুমে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিপিও অ্যাজ এ ক্যারিয়ার ফর ইয়ুথ’। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসা বিকাশের স্বার্থে দেশের সব জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। আমরা এখন ইউনিয়নগুলোতে কানেক্টিভিটি পৌঁছানোর কাজ করছি। কেবল ইউনিয়নে নয়, বাড়ি-বাড়ি সেই কানেক্টিভিটি পৌঁছাতে চাই।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে সরকার প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিচ্ছে জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, সারাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তরুণ-তরুণীর প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারবে। সরকার মূলত প্রশিক্ষণের জায়গাটা উন্মুক্ত করার চেষ্টা করছে। সাতটি জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করছি। আমরা ৬৪টি জেলায় করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আইটি খাতে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহীদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কেবল সেটাতে লেগে থাকার পরামর্শ দেন মোস্তাফা জব্বার।

আইসিটি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন, ১৪-১৫ লাখ সরকারি চাকরির বিপরীতে বেসরকারি খাতে অনেক চাকরি রয়েছে। সেজন্য দক্ষতা বাড়ানোটা গুরুত্বপূর্ণ। কেবল আইটি সেক্টরে ১০ লাখ লোক তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিপিও সেক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখবে। চাকরি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নানা দিকে না ঘুরে একদিকে নিবদ্ধ হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মালিহা নার্গিস। সেমিনারে তিনি বলেন, প্রতিবেশী ভারত-শ্রীলঙ্কা আউটসোর্সিং থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় করছে, আমরা পারছি না। কারণ আমরা কিছু কাজ করছি, কিন্তু সেটা অর্গানাইজড না, এটাই আমাদের বড় সমস্যা। বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির চাহিদাভিত্তিক লোক তৈরির জন্য সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার করা দরকার বলে মন্তব্য করেন মালিহা।

সেমিনারে উপস্থিত থেকে ন্যাবেট ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অর্জুন মিশ্র বলেন, কলসেন্টার সব ধরনের মানুষ কাজ করতে পারে। আমরা কলসেন্টারে প্রতিবন্ধীদের দিয়ে এ সেক্টরে কাজ করানো যায় সেটা দেখিয়েছি। আমরা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চ্যারিটির মধ্যে থাকিনি, তাদের দক্ষতা তৈরি করে তাদের আয়ে তাদের চলার ব্যবস্থা করেছি।

অনুষ্ঠানের মডারেটর হিসেবে ছিলেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাক্যেও সাধারণ সম্পাদক ও ফিফো টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদ হোসেন। তিনি জানান, ২০২১ সালের মধ্যে বিপিও খাতে এক লাখ উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ৪০ হাজার ইতোমধ্যে তৈরি হওয়ায় এখনও দরকার ৬০ হাজারের মতো দক্ষ যুবশক্তি।

সেমিনারে আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন মধ্যে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক মাহতাবুল হক, মালয়েশিয়ার ইউরাস কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক কৃষ্ণা রাজকুমার রাজাশেখারান, স্টার কম্পিউটার্সের চিফ অপারেটিং অফিসার রেজওয়ানা খান, অগমেটিক্সের প্রশিক্ষক রুবাইয়া তানসিম, ফিফো টেকের কর্মী তামান্না সুলতানা। এই সেশনের শেষে অনলাইনে বিপিও খাতে প্রশিক্ষণ কোর্স নিয়ে সরকারের এলআইসিটি প্রকল্প ও রেপটো আইটি লিমিটেডের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

গ্লোবাল অপরচুনিটিস ফর ক্রিয়েটিভ ইকোনমি
বিকাল পাঁচটার সময় ব্যালকনি হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘গ্লোবাল অপরচুনিটিস ফর ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ শিরোনামে সেমিনার। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এ সময় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, তরুণদের মধ্যে রয়েছে নানা আইডিয়া। তাদের এসব আইডিয়ার কথা জানাতে হবে আমাদের। তারা এগিয়ে আসলে খুলে যাবে অনেক সম্ভাবনার দুয়ার।

আইসিটি খাতে তরুণদের নানা প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ল্ডের জন্য আমরা যখন ক্রিয়েটিভ ইকোনমির কথা বলছি, তখন তরুণরা তাদের ধারণাগুলো নিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। আগে যেসব সমস্যার জন্য আমাদের কাগজপত্র খুঁজতে হতো, এখন এক সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমরা সেসব সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারি, খুব সহজেই সেসব সমস্যার সমাধান করতে পারি।

নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর অববাহিকায় আমরা যখন বিদ্যুৎকেন্দ্র বা শক্তি উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি, তখন সাশ্রয়ী কোনো ধারণা কিন্তু তরুণরা দিতে পারে। আমরা যখন বাসা-বাড়িতে বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে কথা বলি, বিল কেন-বেশি আসে; এমন প্রশ্ন খুঁজি, তখন আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারি।

এ সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন সার্ভিস সলিউশনসের সিইও তানভীর ইব্রাহীম, টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আয়মান সাদিক, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম খায়রুল আলম, গিকি সোশ্যালের এম আসিফ রহমান, হিউম্যান এইড বাংলাদেশের শিক্ষা বিভাগের পরিচালক সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরী, বেসিসের পরিচালক দিদারুল আলম, রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজিসের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন ফারুক। 

এডুকেশন: এ কি ইন্সট্রুমেন্ট টু অ্যাচিভ এসডিজি
বিকাল ৫টার সময় সুরমা হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘এডুকেশন: এ কি ইন্সট্রুমেন্ট টু অ্যাচিভ এসডিজি’ শিরোনামে সেমিনার। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা সারোয়ার জাহান। এ সময় তিনি বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আওতায় আনা জরুরি। এক্ষেত্রে মায়েরা যদি শিক্ষিত হয়, তবে তারা তাদের সন্তানদের বেসিক শিক্ষাটা দিতে পারবে। ফলে তারা সততা, মূল্যবোধের শিক্ষা পাবে। তারা সহজেই ফরমাল এডুকেশনটা গ্রহণ করতে পারবে। এসডিজি অর্জনে আমাদের মূল লক্ষ্য শিক্ষা। শিক্ষার প্রসারে রাজনৈতিক নেতাদেরও চাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে, বলেন সারোয়ার জাহান।

সেমিনারটির মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজ মো. হাসান। তিনি বলেন, মানসম্মত শিক্ষা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। এজন্য যোগ্য শিক্ষকও প্রয়োজন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) উপদেষ্টা ও ভিরগো কন্টাক্ট সেন্টার সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমাদুল হকের পরিচালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন ইউসেপের প্রধান নির্বাহী তাহসিনাহ আহমেদ, ড্যাফোডিল গ্রুপের সিইও মো. নুরুজ্জামান, এএসকে টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়মা শওকত প্রমুখ।

এছাড়া সামিটের প্রথম দিন রোববার, দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় গর্ভমেন্ট প্রসেস আউটসোর্সিং- স্কোপস অব গর্ভমেন্ট ইন বিপিও’, একই সময় সুরমা হলে ‘ক্রিয়েটিং দ্য নেক্সট জেনারেশন আউটসোর্সিং সার্ভিসেস ইন বাংলাদেশ’ এবং বিকাল পাঁচটার সময় মেঘনা হলে ‘অ্যাকাউন্টিং প্রসেস আউটসোর্সিং: পজিশনিং বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় দিনে ৪টি সেমিনার ও ১টি কর্মশালা
বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতের অবস্থানকে তুলে ধরার লক্ষ্যে দুই দিনের এ আয়োজনের শেষ দিনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘আউটসোর্সিং ফর স্টার্ট-আপস: গ্রোয়িং টুগেদার’ শিরোনামে দিনের প্রথম সেমিনার এবং একই দিনে সময়ে মেঘনা হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিল্ডিং ফর কলসেন্টার এজেন্টস’ শিরোনামে একটি কর্মশালা। দুপুর আড়াইটার সময় ব্যালকনি হলে ‘ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন: চ্যালেঞ্জেস ইন বিপিও’, সুরমা হলে ‘কাস্টমার-সেনট্রিক হেলথকেয়ার ডেলিভারি সিস্টেম অ্যান্ড বিপিও’ এবং মেঘনা হলে ‘রাইজ অব এআই অ্যান্ড দ্য ইমপ্যাক্ট অন বিপিও’ শিরোনামে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে তিনটি সেমিনার।

রোববার সকালে ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০১৮’ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ। দুই দিনের এ আয়োজন আজ শেষ হবে।

এবারের আয়োজনে ৬০ জন স্থানীয় বক্তা, ২০ জন আন্তর্জাতিক বক্তা রয়েছেন। দুই দিনের মূল্য আয়োজনের আগে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টিভেশন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০১৮ এর আয়োজনের প্ল্যাটিনাম স্পন্সর অগমেডিক্স। গোল্ড স্পন্সর এডিএন টেলিকম লিমিটেড, সিলভার স্পন্সর অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, ফ্লোরা ব্যাংক, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড। নেটওয়ার্ক পার্টনার ফাইবার অ্যাট হোম। আইটি পার্টনার আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেড। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বাংলাদেশ ইনভেশনমাট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি, এলআইসিটি, অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি), এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি), আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি)। পার্টনার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি), আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ ও ই-কর্মাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ এপ্রিল ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়