ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শাকিব খানের পারিশ্রমিক নিয়ে ফাঁকা আওয়াজ

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৯, ৪ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শাকিব খানের পারিশ্রমিক নিয়ে ফাঁকা আওয়াজ

রাহাত সাইফুল : ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান। তিনি বর্তমানে ঢাকাই চলচ্চিত্রে শীর্ষে অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি তার অবস্থান ধরে রেখেছেন। স্বাভাবিক কারণেই তার পারিশ্রমিকও সবার চেয়ে বেশি। যদিও বিভিন্ন সময় তার পারিশ্রমিকের টাকার অঙ্ক নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে।

কিছুদিন আগে এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া এবং কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় এই নায়ক অভিনয়ের জন্য চলচ্চিত্র প্রতি ৬০ লাখ টাকা নিচ্ছেন। এরপরই আবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানা যায়,  প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শাকিব ৭০ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছেন। এমন সংবাদে সিনেমাসংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেন। বিষয়টির সত্যতা অনুসন্ধানে রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদক সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় বের হয়ে আসে, মাসুদ রানা থেকে শাকিব খান হয়ে ওঠা এই জনপ্রিয় নায়কের পারিশ্রমিক সত্যি কতটা বেড়েছে, নাকি এগুলো শুধুই কানকথা?

১৯৭৮ সালের ২৮ মার্চ শাকিব খান জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম মাসুদ রানা। ১৯৯৯ সালে প্রথম ‘সবাইতো সুখী হতে চায়’ সিনেমায় কাজ করেন তিনি। আফতাব খান টুলু পরিচালিত এই সিনেমায় নির্মাতা এফ আই মানিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। উল্লেখিত সিনেমায় বিনা পারিশ্রমিকে শাকিব খান কাজ করেন বলে জানান এফ আই মানিক। একই বছর চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান ‘অনন্ত ভালোবাসা’ নির্মাণ করেন। এই সিনেমায় মাসুদ রানা নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘শাকিব খান’। সিনেমাটি ১৯৯৯ সালের ২৮ মে মুক্তি পায়। অভিনয়ের জন্য শাকিব খানকে তখন ২৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছিল বলে রাইজিংবিডিকে জানান সোহানুর রহমান সোহান। এ প্রসঙ্গে সোহান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শাকিব খান প্রথম রেমুনেশন পায় ২৫ হাজার টাকা। এরপর আমার কয়েকটি সিনেমায় সে অভিনয় করে। সর্বশেষ ২০১২ সালে ‘সে আমার মন কেড়েছে’সিনেমায় অভিনয় করে। শাকিব তখন পারিশ্রমিক নিয়েছে ২০ লাখ টাকা।’  

২০০০ সালে শাকিব খানের পারিশ্রমিক উল্লেখযোগ্য ছিলো না বললেই চলে। সে বছর তাকে নিয়ে ইস্পাহানী আরিফ জাহান নির্মাণ করেন ‘গোলাম’। এই সিনেমায় শাকিবকে সাইনিং মানি দেয়া হয় ২৫ হাজার টাকা। এ প্রসঙ্গে ইস্পাহানী আরিফ জাহান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শাকিব খানের সঙ্গে পারিশ্রমিক নিয়ে কোন চুক্তিপত্র ছিলো না। তখন তাকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এরপর শাকিব আমাদের কাছে টাকা চায়নি। মুক্তির পরে সিনেমাটি ভালো যাওয়ায় তাকে আমরা খুশি হয়ে ২ লক্ষ টাকা দিয়েছি।’

২০০১ সালে নির্মাতা ওয়াকিল আহমেদ শাকিব খানকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘ভালবাসার দুশমন’। এ সিনেমায় শাকিবের পারিশ্রমিক ছিলো ২ লাখ টাকা। এ প্রসঙ্গে ওয়াকিল আহমেদ বলেন, ‘২ লক্ষ টাকা সাইনিং মানি হলেও পরে আরো বেশি টাকা তাকে দিতে হয়েছে। অনেক দিন ঘুড়ে সিনেমাটির কাজ শেষ করি। এরপর ২০১৪ সালে ‘সেরা নায়ক’ সিনেমায় তাকে ১৫ লক্ষ টাকা সাইনিং মানি হিসেবে দিয়েছি। সিনেমা মুক্তির পর আবারও তাকে টাকা দিতে হয়েছে।’

২০০২ সালে নির্মাতা এফ আই মানিক শাকিব খানকে নিয়ে ‘ফুল নেব না অশ্রু নেব’ নির্মাণ করেন। এ প্রসঙ্গে এফ আই মানিক বলেন, ‘‘ফুল নেব না অশ্রু নেব’ সিনেমায় শাকিব দেড় লাখ টাকা নিয়েছে। সর্বশেষ ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’ সিনেমায় তাকে ৬ লাখ টাকা দিয়েছি।’

২০০৪ সালে শাহীন সুমন পরিচালিত ‘নষ্ট’ সিনেমায় শাকিব খানের পারিশ্রমিক ছিলো ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। এরপর বেশ কিছু সময় শাকিব খানের পামিশ্রমিক খুব বেশি বাড়েনি। ২০০৮ সালে নির্মাতা বদিউল আলম খোকন শাকিব খানকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’। এ সিনেমায় শাকিব খানের পারিশ্রমিক ছিলো দেড় লাখ টাকা। এই সিনেমাটি দারুণভাবে ব্যবসা সফল হয়। এরপরেই হঠাৎ শাকিব খানের পারিশ্রমিক বেড়ে যায়। ২০০৯ সালে ‘মনে বড় কষ্ট’ সিনেমায় শাকিব খান পারিশ্রমিক নিয়েছেন ১৪ লাখ টাকা। শাহিন সুমন বলেন, ‘শাকিব খানকে নিয়ে আমি ২০টি সিনেমা নির্মাণ করেছি। ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তাকে পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছে।’

২০১২ সালে ‘আই লাভ ইউ’, ‘আমার চ্যালেঞ্জ’, ‘এক টাকার দেন মোহর’,    ‘এক মন এক প্রাণ’, ‘সন্তানের মত সন্তান’, ‘মাই নেম ইজ সুলতান’, ‘খোদার পরে মা’, ‘ঢাকার কিং’, ‘সে আমার মন কেড়েছে’সহ বেশ কিছু সিনেমায় ২০-২৫ লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক নিয়েছেন শাকিব খান। ২০১৫ সালে শাকিব খান ‘হিরো : দ্যা সুপারস্টার,’ ‘প্রেম করে মরবো আমি’, ‘লাভ ম্যারেজ’, ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’সিনেমায় অভিনয় করেন। এসব সিনেমায় তিনি ৩০ লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এভাবেই চলছিল। ২০১৭ সালে এসে কয়েকটি সিনেমায় শাকিব খান ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন। ২০১৮ সালে তার পারিশ্রমিক নিয়ে পরপর দু্ইবার গুঞ্জন ওঠে।    

সর্বশেষ খবরে বলা হয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার একটি সিনেমায় শাকিব খানকে ৭০ লাখ টাকা দেয়া হবে। বিষয়টি জানতে এই প্রতিবেদক শাকিব খানের ঘনিষ্ঠজন ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত জাজ মাল্টিমিডিয়ার এই সিনেমার জন্য শাকিব খানের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক ৫০ লাখ টাকা হতে পারে। এর বেশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাছাড়া এখনও শাকিব খানকে চুক্তিবদ্ধ করানো হয়নি।

এদিকে ওপার বাংলার সিনেমায় শাকিব খানের পারিশ্রমিক কত এ নিয়েও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি ‘ভাইজান এলো রে’ সিনেমার শুটিং করেছেন শাকিব খান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সিনেমায় শাকিব খানের পারিশ্রমিক ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া ওপার বাংলার সিনেমায় শাকিব খানের জন্য বাজেট প্রায় এরকমই। যদিও পারিশ্রমিক নিয়ে প্রকাশিত খবরে শাকিব খানের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। চলচ্চিত্র বোদ্ধারা মনে করছেন শাকিব খানের পারিশ্রমিক ৭০ লাখ টাকা বলে কেউ হয়তো গুঞ্জন ছড়াচ্ছেন। চলচ্চিত্রের মন্দার এই বাজারে লগ্নীকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া কঠিন। তার উপরে শিল্পী সংকটে ঢালিউড শীর্ষ চিত্রনায়ক শাকিব খানের পারিশ্রমিক রাতারাতি বৃদ্ধি পাওয়া চলচ্চিত্রের জন্য মন্দ সংবাদ বলেই মনে করছেন তারা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মে ২০১৮/রাহাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়