ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্পিন বিষে নীল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৪ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্পিন বিষে নীল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ইয়াসিন হাসান, চট্টগ্রাম থেকে: ‘জেন্টেলম্যান্স গেম’ হিসেবে ক্রিকেটের সুখ্যাতি অনেক। প্রায় ধূলো জমা পড়েছে কথাটি। সাকিব চাইলে হয়তো কিছুটা হলেও ধূলো মুছে দিতে পারতেন। কিন্তু নিজ দলের খেলোয়াড়কে বিশ্বাস করলেন অধিনায়ক।

তাইজুলের লাফিয়ে উঠা ডেলিভারীতে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়েছিলেন সুনীল অ্যামব্রিস। ব্যাট-গ্লাভসের ছোঁয়া না পেয়ে বল গেল উইকেট কিপার মুশফিকের হাতে। বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার ইলিংয়র্থ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ উইকেট। চট্টগ্রামে উড়ল বাংলাদেশের ঝান্ডা।
 


সাগর পাড়ের স্টেডিয়ামে ৬৪ রানের বিশাল জয় বাংলাদেশের। দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম জয়, সব মিলিয়ে তৃতীয়। দেশের মাটিতে সাকিবের নেতৃত্বে প্রথম জয়। কিন্তু যেভাবে শেষ হলো সেটা কি গ্রহণযোগ্য? আক্ষরিক অর্থে গ্রহণযোগ্য কারণ আম্পায়ার্স কল আউট। কিন্তু ওই যে ‘জেন্টলম্যান্স গেম’ বলে যার সুখ্যাতি সেটা…চাইলেই তো অ্যামব্রিসকে ফিরিয়ে আনতে পারতেন সাকিব, চাইলেই মুশফিক বলতে পারতেন নট আউট! কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না।
 


অবশ্য ক্রিকেট ওই ‘জেন্টেলম্যান্স গেম’-র পর্যায়ে নেই। অগ্রহণযোগ্য অনেক কিছুই হচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেটে, বাংলাদেশে। সফরকারী দলকে আটকাতে স্বাগতিক সুবিধা নিচ্ছে প্রতিটি দল। বাংলাদেশও শেষ কয়েক বছরে একই সুবিধা নিয়ে একই সাফল্য পাচ্ছে। স্বাগতিক সুবিধা আদায় করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে স্পিন ফাঁদে ফেলেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একই কায়দায় বধ করল সাকিবরা।
 


টেস্ট জিততে ২০ উইকেট চাই-ই চাই। স্পিন বিষে নীল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ইনিংস মিলিয়ে স্পিনারদের পকেটে ২০ উইকেট। এক পেসার নিয়ে মাঠে নামা মুস্তাফিজুর রহমান দুই ইনিংসে করলেন মাত্র ৪ ওভার!

অবশ্য বছরের মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের মতো করে পেস ও বাউন্স উইকেট তৈরি করে বাংলাদেশকে লজ্জা দিয়েছিল। এবার একই লজ্জা দিল বাংলাদেশ।
 


আর লজ্জার নায়ক ওই তাইজুল ইসলাম। চলতি বছর দারুণ কাটছে এ স্পিনারের। প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট পাওয়া তাইজুল দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে এ বছর ৪০ উইকেট তুলে নিয়েছেন। পাশাপাশি এক পঞ্জিকাবর্ষে মোহাম্মদ রফিকের ২০০৩ সালে করা ৩৩ উইকেটের রেকর্ডও ভাঙেন এ বাঁহাতি। এছাড়া সাকিব ও মিরাজের পকেটে গেছে সমান ২টি করে উইকেট।

শনিবার ৫ উইকেটে ৫৫ রানে দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দেড় ঘন্টার ব্যাটিংয়ে ৭০ রান তুলে তুলে অলআউট স্বাগতিকরা। ৩১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহরা। অন্যরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। প্রথম ইনিংসের ৭৮ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পুঁজি ২০৩ রান। জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের করতে হতো ২০৪ রান।
 


আগের দিন নাঈম হাসান আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছিলেন, ১৫০- রান হলেই যথেস্ট।’ বাংলাদেশের ৯২তম টেস্ট ক্যাপ পাওয়া নাঈমের কথাই যেন ঠিক হলো। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে তাদের ৪ ব্যাটসম্যান সাজঘরে। বিরতির পর দুই ঘন্টারও কম সময়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রানে অলআউট ক্যারিবীয়ানরা। ৬৪ রানের বিশাল জয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।
 


দিন যত গড়িয়েছে সাগরপাড়ের উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রথম দিন ৮ উইকেট, দ্বিতীয় দিন ১৭, শেষ দিন ১৫। ৪০ উইকেটের ৩৪টিই স্পিনে। এ পরিসংখ্যানই যেন বলে যেন ‘জেন্টলম্যান্স গেম’-এর করুণ পরিণতি। তবে দিন শেষে ওই জয়টাই মূখ্য। যেটা বাংলাদেশের পক্ষে গিয়েছে।

কতো কিছুই না পেল চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে। সাকিবের ফিরে আসা, মুমিনুলের সেঞ্চুরি, অভিষেকে নাঈমের বিশ্বরেকর্ড ও তাইজুলের ৬ উইকেট। এ যেন বিশাল পরিবারের ছোট ছোট সুখ।

 

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২৪ নভেম্বর ২০১৮/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়