ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

চট্টগাম বন্দরের সক্ষমতায় ২৭ ধাপ উন্নতি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০২, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চট্টগাম বন্দরের সক্ষমতায় ২৭ ধাপ উন্নতি

কেএমএ হাসনাত : দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর উন্নয়নে সরকার ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বর্তমানে দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯০ ভাগই সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কাজেই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সমুদ্র বন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। সেজন্য সরকার বন্দরগুলো সমৃদ্ধ করছে। আন্তর্জাতিক জরিপ অনুযায়ী, গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতায় ২৭ ধাপ উন্নতি হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রধান বন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর শিল্প-বাণিজ্যে প্রসারের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৬ লাখ, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ১৯ লাখ, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ২২ লাখ, ২০১৬-১৭ বছরে সাড়ে ২৪ লাখ কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এ বন্দরে কনটেইনার পরিবহনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ, যা ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০১৮ সালের মধ্যে ছয়টি গেন্ট্রি ক্রেন যুক্ত হতে যাচ্ছে চট্রগ্রাম বন্দরে। আরো চারটি গেনট্রি ক্রেন ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা ২০১৯ সালের মধ্যে যুক্ত হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। ১০টি গেনট্রি ক্রেন দিয়ে পণ্য ওঠানামা করা গেলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।

লয়েড’স লিস্ট এর ২০১৬ সালের জরিপে বিশ্বের ১০টি কনটেইনার হ্যান্ডলিং বন্দরের মধ্যে পাঁচ ধাপ এগিয়ে ৭১তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। ২০১৭ সালে আরো এক ধাপ এগিয়ে ৭০তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে এই তালিকায় বাংলাদেশ ছিল ৯৮তম। বন্দরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া ও বে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় কনটেইনার অপারেশন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সিটিএমএস এবং বন্দরে জাহাজ যাতায়াত ও বহির্নোঙ্গরে অবস্থানকালে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্য আধুনিক ভিটিএমআইএস চালু করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সামগ্রিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে এ বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

মংলা বন্দরের কনটেইনার পরিবহন গত কয়েক বছর ধরে আনুমানিক অর্ধলক্ষের মধ্যেই উঠানামা করছে। তবে মংলা বন্দরকে আরো শক্তিশালী করতে সুন্দরবনের আকরাম পয়েন্টে টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তাছাড়া কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য জুলফিকার চ্যানেলের আউটার বার ড্রেজিংসহ দুটি অতিরিক্ত জেটি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ৭৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ পর্যন্ত বন্দরে আনা সম্ভব হয়। তাছাড়া, সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যয় রোধ কল্পে নদীতে ভাসমান তেল উত্তোলনের জন্য ইতিমধ্যে একটি অয়েল স্পিলিং ভেসেল কেনা হয়েছে। রূপসা নদীর ওপর দিয়ে রেলপথ এবং পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুর রেলপথ নির্মাণ হলে মংলা বন্দরে আঞ্চলিক যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে। তার সঙ্গে খানজাহান আলী বিমানবন্দরকে সম্পৃক্ত করা হলে মংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে এবং শিল্পায়নে ও বাণিজ্যিক অঙ্গনে এক নতুন যুগের সূচনা হবে।

পদ্মা সেতুর সঙ্গে পায়রা বন্দর পুরোপুরি চালুর লক্ষ্যে ২০১৬ সাল থেকে বন্দর নির্মাণকাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে। এ বন্দর চালু হলে দেশে অভ্যন্তরীণ আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটান এ বন্দর ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে। পায়রা বন্দরের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে ঢাকার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে এ অঞ্চলের দ্রুত শিল্পায়ন হবে। পায়রা বন্দর দিয়ে ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশের জন্য ড্রেজিংয়ের কাজ অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২০০ মিটার জাহাজ ভেরার জন্য ১১টি জেটি এবং টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে, যা ২০০৯ সালের মধ্যে চালু হবে। পর্যায়ক্রমে জেটির সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২০২৪ সাল নাগাদ পুরোপুরি চালু করা হবে।

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক অবস্থায় দুই টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। টার্মিনাল দুটিতে প্রায় ১৫ মিটার ড্রাফট সম্বলিত ৩৫০ মিটারের জাহাজ ভিড়তে পারবে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বাড়তি চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। যেসব মাদার ভেসেল বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না, সেসব বড় আকারের জাহাজ ওই বন্দরে ভিড়তে পারবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ডিসেম্বর ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়