ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঈদ সামনে রেখে মোবাইলে প্রতারকরা বেপরোয়া

আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৭ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদ সামনে রেখে মোবাইলে প্রতারকরা বেপরোয়া

ফাইল ফটো

আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : মাগুরায় ঈদ সামনে রেখে মোবাইলে প্রতারকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সংঘবদ্ধ এই প্রতারক চক্রটি অভিনব উপায়ে প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত থেকে শুরু করে সাধারণ লোকজনও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

লটারিতে  গাড়ি, বাড়ি, স্বর্ণাংকার কখনো বিশাল অঙ্কের অর্থপ্রাপ্তির ভুয়া সংবাদ দিয়ে, আবার কখনো দুর্ঘটনায় স্বজনের আহত হওয়ার অসত্য সংবাদ দিয়ে জরুরি চিকিৎসার কথা বলে প্রিয়জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।
কোনো সময় বিশাল অঙ্কের পুরস্কারের বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধের জন্য গ্রহণযোগ্য মাত্রায় এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই দুপুরে মহম্মদপুর সদরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইমলামের মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত একটি নম্বর থেকে কল আসে। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে গ্রামীণফোন ব্যবহারের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, ‘আপনি লটারিতে একটিতে ১৪ লাখ টাকা দামের একটি নতুন গাড়ি জিতেছেন। গাড়ির কাগজপত্র ভ্যাটসহ আনুষঙ্গিক কাজ করতে ১৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। তবে আপনাকে এই টাকা তিন কিস্তিতে পাঠালেও চলবে। আপনি বিকাশের মাধ্যমে প্রথম কিস্তির ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিন।’

বিস্তারিত জানার জন্য তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আরেকটি নম্বর দেওয়া হয়।  তিনি কাউকে কিছু না বলে ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। পরে তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন ।

মাগুরা সদরের মুদি ব্যবসায়ী লিটন মিয়ার (৩২) মোবাইলে ১৭ জুলাই পৌনে ১টার দিকে ফোন আসে। ফোনে ওই প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আমি বগুড়ার মহাস্থানগড় মসজিদের মুয়াজ্জিন বলছি। আমি জিনের মাধ্যমে জানতে পারলাম তোমার সামনে বড় বিপদ। জিন দ্বারা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তোমার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে মহাস্থান মসজিদে মিলাদ দিতে হবে। এখানে হাজির হয়ে মিলাদ দেওয়া যেতে পারে অথবা আমার নম্বরে ৪ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলে মিলাদ দিয়ে দেব।’

তিনি সরল বিশ্বাসে পরদিন সকালে ২ হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠিয়ে দেওয়ার পর থেকে নম্বরটি বন্ধ পাচ্ছেন।  
১৯ জুলাই কৃষি ব্যাংক শত্রুজিৎপুর বাজার শাখার জুনিয়র অফিসার তৌহিদুর রহমানকে ফোন করে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে কৃষি ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের কর্মী পরিচয় দেন। তার মোবাইল নম্বর সার্ভারে সংরক্ষণ করার কথা বলে ওই ব্যক্তি তৌহিদুর রহমানকে এক ঘণ্টা মোবাইল বন্ধ রাখতে বলেন এবং একজন নিকটাত্মীয়ের ফোন নম্বর চান।

তৌহিদুর রহমান তাকে স্ত্রীর নম্বর দেন এবং মোবাইল বন্ধ করে রাখেন।

তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘এর কিছু পরে আমার স্ত্রীর মোবাইলে ফোন করে কে বা কারা জানায় যে আমি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছি। তারা আমাকে জরুরি চিকিৎসার জন্য মাগুরায় নিয়ে যাচ্ছে। তারা আমার স্ত্রীকে একটি বিকাশ নম্বরে দুই দফায় ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। আমার স্ত্রী সরলবিশ্বাসে ১০ হাজার  টাকা পাঠিয়ে দেন। পরে প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।’

একই দিন শ্রীপুরের কাজলি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ফসিয়ার রহমানের কাছে কুমিল্লার বিজিবির মেজর পরিচয় দিয়ে জনৈক ব্যক্তি মোবাইলে বলেন, ‘সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক হিসেবে আপনার ছেলেকে বিজিবির সৈনিক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। ঢাকার পিলখানায় পোশাক তৈরিসহ প্রাথমিক কাজকর্ম সারতে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।’

প্রায় দুই মাস আগে একই ধরনের ঘটনায় মাগুরা শহরের পুরাতন বাজার এলাকার অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মচারীর পরিবার দেড় লক্ষাধিক টাকা খুইয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারকেরা কয়েক দফায় এই টাকা হাতিয়ে নেয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি পরিবারের সদস্যরা।

গত ১৮ জুলাই শহরের মিরাজ নামের এক গ্রাহকের মোবাইলে জানানো হয়, লটারিতে বিজয়ী হয়ে তিনি একটি গাড়ি পেয়েছেন। এ জন্য নগদ ১০ হাজার ৫০০ টাকা বিকাশ করতে বলে। তিনি জামান স্টোর থেকে বিকাশ করে পুরো টাকাই পাঠান। পরে ওই নম্বরে যোগাযোগ করে বন্ধ পাওয়ায় বুঝতে পারেন প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন।

মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিবন্ধনবিহীন সিম দিয়ে প্রতারক চক্র এভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়। কেউ ক্ষতির শিকার হলেও লজ্জায় পুলিশের কাছে আসতে চান না।

মাগুরার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বলেন, মোবাইল ফোনে কিছু প্রতারক চক্র দেশব্যাপী সক্রিয় রয়েছে। মানুষ এখন অনেক সচেতন তারপরও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এই চক্রটি মানুষকে বিভ্রান্ত করে টাকা হাতিয়ে নিতে সচেষ্ট রয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাটি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।

এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে সতর্ক থাকার ও দ্রুত পুলিশকে জানানোর জন্য তিনি সবাইকে পরামর্শ দেন।

রাইজিংবিডি/মাগুরা/ ২৭ জুলাই ২০১৪/আনোয়ার/রণজিৎ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়