ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

উ প কূ লে র প থে

চিংড়ি চাষ এখনো আধুনিকায়ন হয়নি

রফিকুল ইসলাম মন্টু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চিংড়ি চাষ এখনো আধুনিকায়ন হয়নি

রফিকুল ইসলাম মন্টু, খুলনার পাইকগাছা ঘুরে : চিংড়ি চাষ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে, কৃষি আবাদ থেকে বিতাড়িত করছে চাষিদের। এরপরও খুলনার পাইকগাছাসহ এই অঞ্চলের বহু মানুষের ভাগ্য এখন চিংড়ি চাষেই আবর্তিত। অনেকে অর্থের লোভে, আবার অনেকে বাধ্য হয়েই ঝুঁকছে চিংড়ি চাষের দিকে। কিন্তু চিংড়ি চাষ এখনো আধুনিকায়ন হয়নি। ঘেরের ভাইরাস রোধে আধুনিক পদ্ধতি নেই। তাই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী চিংড়ি চাষে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

অর্থ আর শ্রম ব্যয়ে ঘেরে চিংড়ি চাষের পর ফলন কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে শঙ্কা চাষ মৌসুমের শুরু থেকেই। বড় ঘেরমালিকেরা এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারলেও ছোট চাষিদের এ নিয়ে চিন্তার শেষ থাকে না।

পাইকগাছার বিভিন্ন শ্রেণির চিংড়িচাষির সঙ্গে আলাপকালে এই আশঙ্কার কথা জানান। তারা বলেন, চিংড়ির ঘেরে কোথা থেকে ভাইরাস আসে তা আজও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বাইরে থেকে আসা চিংড়ি রেণু পরীক্ষা করার মতো নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি। সে কারণে রেণু ভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

চাষিরা জানান, ভাইরাস আক্রান্ত ঘেরে প্রথমে দু-একটি চিংড়ি পোনা মরে গিয়ে ভেসে ওঠে। অল্প সময়ের মধ্যে একসঙ্গে অনেক পোনা মারা যায়। এই সময়ে ঘেরের মাটির ভেতরে লুকিয়ে থাকা চিংড়ি পোনাগুলো বেঁচে যায়। তবে ভাইরাস থেকে রেহাই পায় না ঘেরের অন্যান্য মাছও। চিংড়ি পোনা কিংবা অন্যান্য মাছ মরার আগে কাঁকড়া মারা যায়।

 


হেলাল মৎস্য খামারের মালিক মো. মোবারক সরদার বলেন, ভাইরাস রোধে আধুনিক কোনো পদ্ধতি এখনো আমাদের হাতে আসেনি। এ বিষয়ে মৎস্য বিভাগে কথা বলেছি। তারা কোনো সমাধান দিতে পারেনি। তাই নিজেদের মতো করে চিংড়িঘের ভাইসরাসমুক্ত রাখার চেষ্টা করি। সব মাছ উঠে গেলে নতুন পোনা ছাড়ার আগে পানি কমিয়ে ঘেরে চুন দিই। এরপরও ভাইরাস আক্রান্ত হলে কিছুই করার থাকে না। চিংড়ি বড় হওয়ার আগ পর্যন্ত শঙ্কা থেকেই যায়।

রয়েল মৎস্য খামারের মালিক গোলাম কিবরিয়া রিপন বলেন, চিংড়ি চাষে যেমন লাভ আছে, তেমনি নানামুখী ঝুঁকিও রয়েছে। ঘেরে পোনা ছাড়ার আগে ভাইরাসমুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে চিংড়ি বাজারজাতকরণেও রয়েছে প্রতিবন্ধকতা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটি চক্র চিংড়ির দাম কমিয়ে রাখে। ফলে চাষিরা প্রকৃত পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়।

সূত্রগুলো বলছে, ধান চাষের চেয়ে চিংড়ি চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় আশির দশকে এই এলাকার চাষিরা চিংড়ি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ে। চাষিদের মতে, ধান ও চিংড়ি উভয় চাষেই ঝুঁকি রয়েছে। ধান আবাদে আগের চেয়ে খরচ অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম অনেক কম। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য কোনো কারণে ধান মার খেলে সে বছর বিপদের শেষ থাকে না। আবার চিংড়ি লাভজনক বটে, তবে হঠাৎ করেই ভাইরাস দেখা দেয়। কিন্তু ভাইরাসে ঘেরের সব চিংড়ি মেরে ফেলতে পারে না। সে কারণে ধানের চেয়ে চিংড়ি চাষ লাভজনক।

পাইকগাছা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে সোলাদানা চৌরাস্তায় চিংড়িচাষি বাছিরোন বাছার বলেন, আগে জমিতে ধানের আবাদ হতো। ধান আবাদে খরচ ও ঝুঁকি বেশি বলে অনেকেই চিংড়ি আবাদের দিকে ঝুঁকছে।

একই স্থানে আলাপকালে কল্যাণ কুমার সানা নামের আরেকজন জানালেন, তার ঘেরমালিক রেজাউল করিম একবার চিংড়ি চাষ বাদ দিয়ে ধান আবাদ করেছিলেন। কিন্তু ধান তেমন ভালো হয়নি। তাই আবার চিংড়ি চাষ করছেন। তিনি বলেন, বিলে জোয়ার-ভাটার ব্যবস্থা থাকলে ধান ও চিংড়ি দুটোই আবাদ করা সম্ভব হতো।

 


মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতাধীন পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শ্যামলেন্দু বিকাশ সাহা বলেন, চিংড়িচাষিদের সুবিধার্থে এই কেন্দ্র বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে চিংড়ি চাষকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা দরকার। ধান ও চিংড়ি চাষের জন্য জোনিং ব্যবস্থাটা থাকা জরুরি।            

এলাকাবাসী জানান, প্রথম দিকে এলাকার চাষিরা ক্ষুদ্র আকারে চিংড়ি চাষ শুরু করলেও একপর্যায়ে বাইরে থেকে আসা বড় ঘেরমালিকেরা চিংড়ি চাষে ঝুঁকে পড়েন। জমি লিজ নিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। নিজের কোনো জমি নেই, অথচ অন্যের জমি লিজ নিয়ে চিংড়ি চাষ করে কোটি টাকার মালিক হওয়া চাষির সংখ্যা অনেক। চিংড়ি চাষ কিছু লোককে সম্পদশালী করলেও ছোট চাষিদের সংকট বাড়তেই থাকে।

এলাকাবাসী বলছেন, চিংড়ি চাষ আরো লাভজনক করতে এই খাতের সব সমস্যা দূর করতে হবে। কারণ চিংড়ি চাষের সঙ্গে এলাকার বহু মানুষের জীবিকা নির্ভর করে।         

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জানুয়ারি ২০১৭/রফিকুল ইসলাম মন্টু/শাহ মতিন টিপু/এএন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়