ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়

মৃন্ময়ী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৩, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়

প্রতীকী ছবি

মৃন্ময়ী হাসান : ‘ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান-

তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান-

আমার আপনহারা প্রাণ; আমার বাঁধন-ছেঁড়া প্রাণ।’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বসন্তের প্রথম দিন আজ। পয়লা ফাল্গুন। গাছের কচিপাতা আর কোকিলের কুহুতানে, মাতাল হাওয়া, উড়াল মৌমাছিদের গুঞ্জরণে আজ জেগে ওঠার দিন। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, আজ বসন্ত।’

তবে এবারো ফুল ফুটেছে। দখিনা হাওয়ার গুঞ্জরণও লেগেছে। বাংলার নিসর্গ প্রকৃতিতে ফাগুন হাওয়ার দোল লেগেছে। ফুল ফোটানোর পুলকিত সময় এই নব ফাগুন। বসন্ত বাতাসে ফুলের সুবাসে মন আনচান করার দিন শুরু হয়েছে পয়লা ফাগুন থেকে।

ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠেছে প্রকৃতি। পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই গেয়ে উঠবেন- ‘মনেতে ফাগুন এলো..’।

বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও নানা অণুপ্রাস, উপমায়। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিককালের বাউল কবির মনকেও বার বার দুলিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। যান্ত্রিকতার কোলাহলমুখর নগরে, অতি কর্মব্যস্ত জীবনে যতই নিষ্প্রাণ, হিসেবী, প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন হন না কেন, বসন্তের এই দিনে তারা গেয়ে ওঠেন ‘বসন্ত বাতাসে..সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।’ এসব অমর পংক্তিমালা আমাদের দেহে-মনে-বোধে-মননে তরঙ্গায়িত হয়ে উঠে বারবার।

আমাদের প্রকৃতিতে ও মনে বসন্তের আগমন অনিবার্য। শীতের শুষ্কতায় ম্লান প্রকৃতিকে সজীব করে তুলতে, মানুষের মনে সজীবতা দিতে বসন্তের প্রয়োজন পড়ে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, মধুর বসন্ত এসেছে, মধুর মিলন ঘটাতে। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও সজীবতার সঙ্গে নতুন দিনের প্রত্যাশায় আসে বসন্ত।

ফাগুন নিয়ে কবি ও গীতিকার মাহবুবুল এ খালিদ-এর লেখা ও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুর করা মনোমুগ্ধকর একটি গান শুনুন
 



১৮ বছর আগে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। রাজধানীর বুকের মানুষ, ঠাসাবুনোটের এই শহরে কেমনে কাটে তাদের বসন্তের প্রহর? ফাগুনের প্রথম দিনটি? সকাল শুরু হওয়া মাত্রই নানা অনুষ্ঠান, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় সকলে বরণ করে নেন বসন্তকে। ফুলে ফুলে মিষ্টি রাঙায় রাঙিয়ে নেন নিজেদের। বড় প্রশান্তিময় সেই মুখশ্রীগুলো। হলুদ ও বাসন্তী রঙের সাজ-পোশাকে নারী-পুরুষের সরব উপস্থিতি জানান দেয় পয়লা ফাল্গুন।

তরুণীরা এই দিনের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে কখন আসবে ফাগুনের এই দিন। যেদিন সবাই মিলে হৈ-হুল্লোড় করবে। নারীরা হলুদ আর বাসন্তী রঙের শাড়ি, জামা পরে নিজেদের সাজসজ্জায় রাঙিয়ে তুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করে। বাইরে বেরুলেই মনে হয় যেন প্রকৃতির বুকে ফাগুনের বাতাস বয়ে যাচ্ছে।

আজ সেই কাঙ্ক্ষিত পয়লা ফাল্গুনে কিশোরী থেকে তরুণী সবাই ফুলের মালা হাতে আর চুলে জড়িয়ে ঘুরছে চারদিক। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নূপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন, সব এ বসন্তেই। বসন্ত আমাদের জীবনে সত্যিকার হয়ে আসুক। অর্থবহ হয়ে উঠুক পলাশ-শিমুলের রঙ, কোকিলের কুহুতান। সকলকে পয়লা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়