ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

এখনো মানুষ রেডিও শোনে

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এখনো মানুষ রেডিও শোনে

শাহ মতিন টিপু : বিশ্ব বেতার দিবস আজ। সারাবিশ্বে বেতার এখনও অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম। এখনো মানুষ রেডিও শোনে। এখনো রেডিওর ওপর নির্ভর করে অনেক মানুষ।

অনেকেরই ধারণা ইন্টারনেটের অগ্রযাত্রার এই সময়ে রেডিও তার গুরুত্ব হারিয়েছে। ধারণাটি সঠিক নয় মোটেই। কারণ সময় যেমন বদলেছে, ঠিক তেমনই সময়ের সঙ্গে তালমিলিয়ে প্রচারণার ধরণও বদলে গেছে।

রেডিওর গুরুত্ব আছে বলেই বাংলাদেশে ২৮টি প্রাইভেট এফএম এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও এফএম চলেেছ। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার ১২টি আঞ্চলিক বেতারকেন্দ্র এবং ৩৫টি এফএম পরিচালনা করছে সরকার। বর্তমানে দেশের নানা স্থানে ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ বেতার প্রতিদিন ২৭৭ ঘণ্টা ৩০ মিনিট অনুষ্ঠান প্রচার করছে। আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ঠাকুরগাঁও, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দারবান ও কুমিল্লা। এছাড়া অনুষ্ঠান প্রচারে ইউনিটগুলো হচ্ছে ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস, বহির্বিশ্ব কার্যক্রম, বাণিজ্যিক কার্যক্রম, কৃষি বিষয়ক কার্যক্রম, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেল এবং ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম।

বিশ্বব্যাপী ৬ষ্ঠ বারের মতো দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব বেতার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘তুমিই বেতার’। সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিশ্ব বেতার দিবস পালিত হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশ বেতার, প্রাইভেট এফএম এবং কমিউনিটি রেডিও অংশগ্রহণ করছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে রেডিও স্টেশনগুলো পালন করছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিশ্ব বেতার দিবসের বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বেতারের বিরামহীন সম্প্রচার মানুষকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দেয়। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধেও বেতারের ছিল গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। তিনি বাংলাদেশ বেতারের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

বিশ্ব বেতার দিবসের বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বেতারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সিডর, আইলার মত বিভিন্ন দুর্যোগের সময় বেতারের কর্মীবাহিনী বিরামহীন তথ্য প্রদান করে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত থেকেছেন। তাছাড়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিনোদন ও তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের আচরণগত পরিবর্তনেও বেতার তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।’

বাংলাদেশ বেতারের জন্মকালের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে এক ঐতিহাসিক মিল। বাংলাদেশে বেতারের যাত্রা শুরু ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এর ঠিক ৩২ বছর পর এ দিনটিতেই চূড়ান্ত বিজয় লাভের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয় বাংলাদেশ।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বেতার ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিহার্য সঙ্গী। বাংলাদেশ বেতার মুক্তিযুদ্ধে দেশে বীর সেনাদের অন্যতম এক অনুপ্রেরণার মাধ্যম। সে বেতার আজ ৭৭ বছরে। সে এক বিরাট সাফল্য গাঁথা বৈকি।  বিশ্বে প্রথম রেডিও আবিষ্কারই হয়েছিল ১৮৯৮ সালে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ঢাকা বেতার কেন্দ্র। যুদ্ধের সময় এটি হয়ে যায় স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র। আর সাফল্যের পর সাফল্যের খবর শুনিয়ে সহজেই কেড়ে নেয় মুক্তিকামী মানুষের মন। মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট নামে খ্যাত ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের এক বলিষ্ঠ প্রচার কাণ্ডারি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত কালজয়ী গান ও অনুষ্ঠানগুলো একদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলকে শক্তিশালী করেছে, অন্যদিকে দেশের জনগণকে স্বাধীনতার দিকে অনুপ্রাণিত করেছে।

কেবল কী তাই, মানুষের জীবনে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, মহামারিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃত বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ বেতার। এখনো অবিরাম তথ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ বেতার।

আরেকটি ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে, একাত্তরে রমনা রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের  জনসভায় জাতির জনক যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, ১৯ মিনিট স্থায়ী এই ভাষণ বেতারের কয়েক জন দুঃসাহসী কর্মকর্তা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তা সম্প্রচার করেছিলেন। এ ভাষণের মধ্য দিয়েই বাঙালির নেতা পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা করেন। এ ভাষণের বাঙালির স্বাধিকারের আকাক্সক্ষাকে আরো তীব্র করে তোলেন।

১৯৭১ সালে কালজয়ী ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার বেতারের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। এ ভাষণ প্রচারের পর সর্বস্তরের মানুষ তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

রেডিও এখন শাখা-প্রশাখায় অনেক বিস্তৃত। মূলত চারটি ধারায় রেডিও সম্প্রচার করে থাকে, যথা: পাবলিক সার্ভিস, আন্তর্জাতিক রেডিও, বাণিজ্যিক রেডিও এবং কমিউনিটি রেডিও।

পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ বেতার যেমন অনুষ্ঠান ও খবর সম্প্রচার করছে; তেমনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, ভয়েস অব আমেরিকা, এন এইচ কে, রেডিও তেহরান, রেডিও চায়না ও অন্যান্য বিদেশি মাধ্যমেও বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারছি। আবার দেশে সাম্প্রতিক কালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সম্প্রচার করছে শহরভিত্তিক বেসরকারি এফএম রেডিও। সব মিলিয়ে রেডিওর প্রচার দিনে দিনে প্রসারিত হচ্ছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়