ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

একেই বলে টেস্ট ব্যাটিং!

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একেই বলে টেস্ট ব্যাটিং!

কামরুল ইসলাম রাব্বি

রুহুল আমিন : শেষ হয়েছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ। হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বাংলাদেশ ২০৮ রানে হেরেছে।

ম্যাচটি শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতের জয় পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রানের পাহাড় গড়ে। ফিল্ডিংয়ের সময় বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মিস ফিল্ডিং, রানআউটের সহজ সুযোগ, ক্যাচ মিস, স্টাম্পিং মিসসহ নানা বিষয় নিয়ে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তারপর ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশে খুব একটা ভালো করতে পারেনি। টপ অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়। অর্জন বলতে দলের অধিনায়কের সেঞ্চুরি।

এই টেস্ট থেকে বাংলাদেশ কী পেলো, কী পেল না তার হিসাবে হয়তো বাংলাদেশ দলের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, অফিশিয়াল স্টাফসহ খেলোয়াড়রা করবেন। সাধারণ দর্শক হিসেবে হায়দরাবাদ টেস্টে সবচেয়ে বড় অর্জন মনে হয়েছে কামরুল ইসলাম রাব্বি। বোলার রাব্বির কথা বলছি না। বলছি ব্যাটিং রাব্বির কথা।

যারা বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পুরোটা সময় টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখেছেন তারা দেখেছেন রাব্বি শেষের দিকে ক্রিজে এসে কীভাবে ডিফেন্স করেছেন। আমাদের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা যখন দায়িত্বজ্ঞানহীনদের মতো উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন, দলের সেরা খেলোয়াড় যখন টেস্ট ক্রিকেটকে ম্যাচকে টি-টোয়েন্টি স্টাইলে খেলেছেন, সেখানে রাব্বির খেলা সত্যিই অসাধারণ হয়েছে।

দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা যে ইচ্ছা করলে, ধৈর্য নিয়ে ক্রিজে থাকলে এই টেস্টের ফলাফল ভিন্ন হতে পারত, তা যেন রাব্বি দেখিয়ে দিলেন। টেস্ট খেলাটাই তো এমন, সময় পার করা। ধৈর্য শক্তির পরিচয় দেওয়া। প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পাতবে আউট করার জন্য। ধৈর্য ধরে বলের গুণাগুণ বিচার করে খেলে টিকে থাকাই তো টেস্টের আসল মজা। চতুর্থ দিন শেষে পঞ্চম দিনে যখন বিশাল রানের টার্গেট। সেখানে উইকেটে টিকে থাকাই ছিল একমাত্র অবলম্বন। কিন্ত বাংলাদেশ দলের স্বীকৃত অধিকাংশ ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং করা এবং আউট হওয়ার দৃশ্য দেখলে কখনো তা মনে হবে না। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ রানের পাহাড় তাড়া করে জয়ের জন্য খেলেছে। যার খেসারতও দিয়েছে বাংলাদেশ। সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিলেন রাব্বি। রাব্বি যেন দেখিয়ে দিলেন টেস্টে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়।

বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা হয়তো সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহদের আউট হওয়ার দৃশ্য দেখে কষ্ট পেয়েছেন। মনে মনে ভেবেছেন আর একটু মনোযোগী হলে ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন হতে পারত। তারাই রাব্বির ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। খেলা শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও দেখিছি রাব্বি-বন্দনা। তার কিছু নমুনা দেওয়া যাক। সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘ওয়েলডান টাইগার্স। বাংলাদেশ হারলে মন খারাপ হয়, তবে কিছু কিছু পরাজয়ে লুকিয়ে থাকে গৌরব। ১ নম্বরের সাথে ৯ নম্বরের লড়াই। কিন্তু বাংলাদেশ লড়েছে বুক চিতিয়ে। ভারতের রান-বন্যার পর কে ভেবেছিল, এই ম্যাচ পঞ্চম দিনে গড়াবে। বাংলাদেশ বারবার আইসিসিকে দেখিয়ে দিচ্ছে, আমাদের আরো বেশি টেস্ট ম্যাচ পাওনা। কিন্তু কুম্ভকর্ন আইসিসির ঘুম কে ভাঙাবে?

আজকের ম্যাচের জন্য স্পেশাল ধন্যবাদ কামরুল ইসলাম রাব্বিকে। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, এই সিচুয়েশনে কিভাবে ব্যাট করতে হয়।’

যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ নামে একজন লিখেছেন,  ‘কামরুলের কাছে আমাদের অনেক ব্যাটসম্যানেরই শেখা উচিত টেস্টে কীভাবে ব্যাট করা উচিত....

ব্যাট হাতে মুগ্ধ করছে কামরুল।’

রাব্বি লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করেছেন। নিয়েছেন ৩ রান। যারা আজ তার খেলা দেখেনি তারা হয়তো ভাবেন ৩ রান করে তিনি আবার এমন কী করলেন। আসল ব্যাপারটা ঠিক এখানেই। কারণ টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা যেখানে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন সেখানে অস্বীকৃত ব্যাটসম্যান রাব্বি ধৈর্যের প্রতীক হয়ে পরিস্থিতি সামলেছেন। ৩ রানের প্রথম রানটি নিয়েছেন তিনি ২৯তম বলে। যেটি ছিল দুই রান। পরের রানটি এসেছে আরো ৩১ বল খেলার পর। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং না করা কামরুল ইসলাম রাব্বি। এখানেই রাব্বি অন্যদের চেয়ে ভিন্ন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/রুহুল/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়