ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

একতাই বল

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২০, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একতাই বল

শাহেদ হোসেন : সীতানাথ বসাক তার আদর্শ লিপিতে লিখেছেন, এ-তে -একতা । একতা সুখের মূল। শিশুমনে একতার গুরুত্ব প্রোথিত করে দিতে পারলে আগামী প্রজন্মের বিভেদের পাল্লাটা আর ভারী হবে না- সেটা পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রজীবনেই হোক না কেন।

আমাদের মনের ভাবকে একতাবদ্ধ করতে গেলে কিন্তু বাংলা বর্ণমালার অষ্টম স্বরবর্ণ ‘এ ’ এর কাছেই যেতে হবে। ‘এই যে শুনছ’ বলে  ভালোবাসার মানুষটিকে ডাক দিন কিংবা ‘এবং’বলে দুজনকে যুক্ত করুন- ‘এ’এর কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় আছে বলুন?

বাংলা স্বরবর্ণের মাত্রাহীন চারটির মধ্যে ‘এ’ অন্যতম। ব্রাহ্মীলিপি থেকে উদ্ভূত ‘এ’ খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে দেখতে ছিল ত্রিভুজের মতো। পঞ্চদশ শতাব্দীতে এসে এটি বর্তমান ‘এ’এর কাছাকাছি রূপ পায়। প্রাচীন বাংলার ‘এ’অধুনা ‘য়’তে পরিণত হয়েছে। যেমন: হএ= হয়। ‘নৃপতি হুসেন সাহ হএ মহামতি’

জ্ঞানেন্দ্রমোহন বলেছেন,  বাঙ্গালায় ‘এ’এর হ্রস্ব, দীর্ঘ ও প্লুত স্বর আছে। যথা - এক (অ্যাক)-হ্রস্ব (২) একুশ-(দীর্ঘ)(৩) মেঘ; এরে (শিশুকে ধমক দিবার কালে)-প্লুত। তবে স্বর হ্রস্ব-দীর্ঘ যাই হোক না কেন এতে অর্থের কোনো তারতম্য ঘটে না।

ব্যঞ্জনবর্ণের আগে ‘এ’বসলে  ‘ে ’ চিহ্ন বা এ-কার লেখা হয়। যেমন− কে, খে, গে, ঘে ইত্যাদি।

‘এ’ স্বরধ্বনির শ্রুতিরূপ দুটি। একটি তার স্বাভাবিক অর্থাৎ মূল ধ্বনিসঙ্গত উচ্চারণ। যেমন: ইংরেজি beg, leg, এখানে  ‘এ’এর উচ্চারণ স্বাভাবিক।  উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি- দেশ, মেঘ, শেষ,পেট, তেল ইত্যাদি। অপর স্বরটি হচ্ছে বিকৃত, ইংরেজি  bat, mat শব্দের ‘অ্যা’উচ্চারণের মতো। যেমন-খেলা,দেখা,বেচা ইত্যাদি।

রবীন্দ্রনাথ ‘এ’এর দুই ধরণের উচ্চারণই লক্ষ্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলায় ‘এ' স্বরবর্ণ আদ্যক্ষরস্বরূপে ব্যবহৃত হইলে তাহার দুই প্রকার উচ্চারণ দেখা যায়। একটি বিশুদ্ধ এ, আর-একটি অ্যা। এক এবং একুশ শব্দে তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়।’

উচ্চারণে সহজসাধ্যতা থেকেই ‘এ’এর এই রূপ বিকৃতি ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ হইতে একেবারে আ উচ্চারণে যাওয়া রসনার পক্ষে কিঞ্চিৎ আয়াসসাধ্য, আ হইতে এ উচ্চারণে গড়াইয়া পড়া সহজ। এইজন্য আমাদের অঞ্চলে আ কারের পূর্ববর্তী একার প্রায়ই অ্যা নামক সন্ধিস্বরকে আপন আসন ছাড়িয়া দিয়া রসনার শ্রম লাঘব করে।’

‘এ’এর এই দ্বিবিধ উচ্চারণ ও ব্যবহার সম্পর্কে বাংলা একাডেমি   তাদের প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মে বলেছে, বাংলায় এ বর্ণ বা  ে কার দিয়ে ‘এ’ এবং ‘অ্যা’ এই উভয় ধ্বনি নির্দেশিত হয়। যেমন: কেন, কেনো (ক্রয় করো); জেনো, যেন। তবে কিছু তদ্ভব এবং বিশেষভাবে দেশি শব্দ রয়েছে যেগুলির অ্যা-কার যুক্ত রূপ বহুল পরিচিতি। যেমন : ব্যাঙ, ল্যাঠা। এসব শব্দে ্যা (য ফলা আকার) অপরিবর্তিত থাকবে।

বিদেশি শব্দে ক্ষেত্র-অনুযায়ী অ্যা বা ্যা কার ব্যবহৃত হবে। যেমন : অ্যাকাউন্ট, অ্যান্ড,অ্যাসিড,ব্যাংক ইত্যাদি।

গুরুভক্ত অনার্য একলব্যকে স্বার্থের ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে দ্বিধা করেননি আর্য দ্রোণাচার্য ও অর্জুন। হালে আমাদের রাজনীতিবিদদের চরিত্রও এইংকা (এই রকম-রংপুর) হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে তারা এক চোখে জল আরেক চোখে হাসি নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। আর নির্বাচন গেলেই আমরা হয়ে যাই এঁডির মা কেডি (বাজে লোক - চট্টগ্রাম)।

ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় বলেছেন, ‘সমষ্টির ভিতর দিয়ে ব্যষ্টিকে দেখা-একের গর্ভে বহুত্বের সমাধান করাই একনিষ্ঠতা।’ দেশকে যদি আমরা একনিষ্ঠভাবে ভালোবাসতে পারি তাহলেই এসব এঁটো রাজনীতিবিদরা একসময় হারিয়ে যাবে।

তথ্যসূত্র :

 

শব্দতত্ত্ব : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান- বাংলা একাডেমি

বাঙ্গালা ভাষার অভিধান- শ্রীজ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস

কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী : হুমায়ুন আজাদ



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/রফিক/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়