ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঐক্যনাশে শক্তিক্ষয়

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঐক্যনাশে শক্তিক্ষয়

শাহেদ হোসেন : জেলে পল্লীর কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন,  'ঈশ্বর থাকেন ঐ ভদ্রপল্লীতে। এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।'  অনেক বছর আগে মানিক যে কথাটি বলেছিলেন এখনকার সমাজবাস্তবতায়ও তার হুবহু মিল রয়েছে। আপনি হতদরিদ্র এলাকায় কখনো আমাদের জনপ্রতিনিধিদের ঘরবাড়ি পাবেন না। তাদের বাড়ি ‘ঐ’ (ও+ই) ভদ্রপাড়ায়।

বাংলা স্বরবর্ণের নবম বর্ণ ‘ঐ’। মাত্রাহীন এই বর্ণটি ও এবং হ্রস্ব ই-এর সমন্বয়ে উচ্চারিত হয় বলে এটি যৌগিক স্বরধ্বনি (ও+ই) বা (অ+ই)। এর উচ্চারণ স্থান কণ্ঠ ও তালু। জ্ঞানেন্দ্রমোহন একে দীর্ঘস্বর বলেছেন। ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ‘ঐ’  যুক্ত হলে একে ঐ কার ‘ৈ’ বলা হয়। এটি ব্যঞ্জনবর্ণের বাম পাশে বসে। যেমন− কৈ, খৈ, গৈ ইত্যাদি।

ব্রাহ্মীলিপিতে ‘ঐ’  ছিল অনেকটা ত্রিভুজের মতো। কুটিললিপিতে এটি ব্রাহ্মীলিপির মতো ত্রিভুজ আকৃতিতে থাকলেও এর বাম প্রান্ত খানিকটা উপরের দিকে উঠেছিল। উপরের ওই রেখাটি ছিল কিছুটা ঢেউ খেলানো। খ্রিষ্টীয় ১০ ও ১১ শতকের মাঝামাঝি এই বর্ণটি আধুনিক ‘ঐ’বর্ণের একেবারে কাছাকাছি চেহারা পায়।

হালে ‘ঐ’-এর ব্যবহার অনেকটা কমে এসেছে। সর্ব নির্দেশক শব্দ হিসেবে (‘কি আলো রাধে ঐ জে/হাঁকুলি একলা), অদূরে বা সম্মুখবর্তী কোনো কিছু নির্দেশে (ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) কিংবা সম্বোধন, স্মরণ, খেদ ইত্যাদি সূচক ধ্বনি (ঐ দেখ, ভুলে গেছি; ঐ যা, বইটা আনিনি) হিসেবে ‘ঐ’ এখন ‘ওই’ বা ‘অই’ হিসেবে লেখা হয়। আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘ঐ’ দিয়ে লেখা শব্দের সংখ্যা ৫০ হলেও ব্যবহারিকে এ সংখ্যা আরো কমে এসেছে।

বস্তুপ্রেমের এই যুগে প্রেমের ধরন-ঢঙ পাল্টে গেছে। এককালে স্বামীরা স্ত্রীকে ডাকতেন ‘ঐগো শুনছো?’ এখন সেই আদুরে সুরের বালাই নেই স্বামীদের গলায়। ক্ষেপে গেল তুই-তোকারিতেও ছাড়েন না পতিদেব। নজরুল ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ ভাঙতে বলেছিলেন স্বাধীনতার জন্য। এখন রাজনীতিবিদরা স্বেচ্ছায় সেই কপাটে ঢোকেন পরিচিতি পাওয়ার জন্য।

দিন বদলেছে। গুরুজনরা ঠিকই বলেছিলেন, ‘ঐ দিন আর নাইরে নাতু, খাবলা খাবলা পায়রার ছাতু’। ঐকিক নিয়মের অংক এখন বদলে গেছে। আমাদের শিশুরা এখন শিখছে পিতার চেয়ে পুত্রের বয়স বেশি। সত্যি, বিচিত্র! আবার দায়িত্ববানরা (!) এর পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে ঐসাতৈসা (আজেবাজে কথা-চট্টগ্রাম) বলে ফেলেন।

রাষ্ট্রচিন্তায় ‘ঐকমত্য’ প্রত্যয়টির প্রবর্তন করেছিলেন রোমান তাত্ত্বিক মার্কুস তুল্লিয়ুস কিকেরো। বিচারের রায়প্রদানে একমত হওয়াকে তিনি প্রজাতন্ত্রের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্বের পক্ষে বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করতেন।  আধুনিক রাষ্ট্রের উন্নয়নে রাজনীতিবিদদের ঐক্য জরুরি হলেও আমাদের দেশে মনে হয় এর দরকার নেই। তাই তাদের ঐকান্তিক ইচ্ছা দেখা যায় বন্ধুত্বে নয় বরং বিভেদে।

তথ্যসূত্র :

 

বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান-বাংলা একাডেমি

বাঙ্গালা ভাষার অভিধান- শ্রীজ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস

রাজনীতির অভিধান- সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায়

আধুনিক বাংলা অভিধান : বাংলা একাডেমি





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/শাহেদ/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়