ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হাতে গুলির চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন শাহাজাহান

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৬ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাতে গুলির চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন শাহাজাহান

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : রুপসা উপজেলার আইচগাতি ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহাজাহান হাওলাদার। তিনি মৃত হাসান উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। মা জয়ফুর বেগম।  তিন সন্তান ও স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার তার।

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। বর্তমানে গুলিবিদ্ধ হাত নিয়েই নগরীতে চায়ের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন নীরবে-নিভৃতে থাকা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় নগরীর জোড়াগেট এলাকায় বাস করতেন শাহাজাহান হাওলাদার। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার আমড়াঝুড়ি গ্রামে।

শাহাজাহান হাওলাদার জানান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর বাংলাদেশকে পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীন করার ইচ্ছা জাগে।  প্রস্তুতি নেন যুদ্ধে যাওয়ার। এ সময় তার  আত্মীয় আব্দুল জব্বার ও ব্যাংক কর্মকর্তা মঞ্জু তাদের কয়েকজনকে ডেকে স্বেচ্ছাসেবক কমিটি তৈরি করেন। তাদের অধীনে তিনিসহ অন্যরা বয়রা রেলওয়ে মাঠে প্রশিক্ষণ নেন এবং জোড়াগেট থেকে কাস্টমগেট পর্যন্ত পাহারা দেন। এক রাতে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর টইল গাড়ি দেখতে পান। তখন তাদের কাছে কোনো অস্ত্র না থাকায় আত্মগোপন করেন।

এরমধ্যে একদিন খবর আসে বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসেরের নূরনগরের বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করে এবং জোড়াগেট এলাকায় দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনী চলে যাওয়ার পর খুলনা পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে সায়েমের বন্দুকের দোকান থেকে কিছু অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে তারা বৈকালি এলাকায় অবস্থান নেন। সেখান থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর টইল গাড়িতে হামলা চালালে তাদের পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

এরপর তিনি বরিশালে চলে যান। কাউখালী থানার কমান্ডার পনা ও আবুল বাসারের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে ক্যাপ্টেন কাশেমের নেতৃত্বে কাউখালী থানা দখলে অংশ নেন তিনি। ১০ দিন পর আবার পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। কয়েকদিন পর আবার একত্রিত হয়ে রাজাকারদের প্রতিহত করেন এবং হিন্দুদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সাহায্য করেন।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, কাউখালী থানা আক্রমণের কয়েকদনি পর শান্তি কমিটির সদস্য হাশেম খাঁ ও জলিল মুন্সী নিজ গ্রাম আমড়াঝুড়ি থেকে তাকে আটক করে। কিন্তু হাশেম খাঁর স্ত্রীর সহযোগিতায় তিনি পালিয়ে পনা কমান্ডারের কাছে যান। তিনি তাকে ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়ে দেন।

ভারতের বিলগরিয়া, কুমড়োখালি, দক্ষিণ চব্বিশপরগানা এবং টাকি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। ভারত থেকে বজলুর রশিদ আজাদকে সঙ্গে নিয়ে কমান্ডার কবির হোসেন মধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের পাইকগাছা ক্যাম্পে আসেন। সেখান থেকে মুজিব বাহিনীর জেলা নেতা কামরুজ্জামান টুকুর নেতৃত্বে গল্লামারী এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর টইল গাড়িতে হামলা করে তাদের পরাজিত করেন। সেসময় সহযোদ্ধা ছিলেন বজলুর রশিদ আজাদ, লাল, হাজির উদ্দিন গাজী, ইউসুফ চিশতি, জব্বার, দিলু, জালাল মাস্টারসহ আরো অনেকে। এরপর ভারতের শিখ সেনাদের সঙ্গে খুলনা শহরে প্রবেশ করে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে অনেকে মারা যান, কেউ আহত হন এবং তার নিজের ডান হাতের কবজিতে গুলি লাগে।

খুলনায় পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করে পাকসেনাদের নিয়ে সাত নম্বর ঘাট এলাকায় শিখ সেনাদের হেফাজতে রাখা হয়। এর দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। পরে গিলাতলা ক্যাম্পে তারা অস্ত্র জমা দেন। সেখান থেকে একটা টোকেন দেওয়া হয়। ওই টোকেন দেখে এমএজি ওসমানী তাকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেন। তার মুক্তিবার্তা নম্বর ০৪০২০১০০৫১ এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সনদ নম্বর  ম-১৩২৮৪২।

এই বীর যোদ্ধা ’৭১ এর রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেও তিনি এখন ভাড়া বাসায় থাকেন। সরকারের কাছে জমির জন্য আবেদন করলেও কোনো সদুত্তর আজও মেলেনি। তিনি সরকারের কাছে এক টুকরো জমির দাবি জানান।



রাইজিংবিডি/খুলনা/২৬ মার্চ ২০১৭/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়