ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সৃজন সভ্যতার বিকাশ

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৬, ৩০ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সৃজন সভ্যতার বিকাশ

শাহিদুল ইসলাম : আদিম সভ্যতা থেকে সৃজন সভ্যতার বিকাশে যেসব শিল্প উপাদান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে তার মধ্যে মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের অবদান অগ্রগণ্য। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের বিকাশের ফলেই মানব সমাজ পেয়েছে তার জ্ঞান পিপাসা মেটানোর প্রধান বাহন বই।

তা ছাড়া প্রচারের জগতে, বিজ্ঞাপনের জগতে, জ্ঞানের জগতে সর্বত্রই মুদ্রণ শিল্প জড়িত। তবে এ লেখার আলোচ্য বিষয় কিন্তু মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প নয়। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের বিকাশে যে দুটি উপাদান প্রধান ভুমিকা রেখেছে সেটাই এই লেখার মূল আলোচ্য বিষয়। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের প্রধান উপাদান হলো ছাপাখানা ও কাগজ। সুতরাং এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে ছাপাখানা ও কাগজ; এই দুইয়ের যোগসূত্রের ফলে আমরা আজকের আধুনিক সৃজনশীল বিশ্বে বাস করছি।

কিন্তু কীভাবে এলো ছাপাখান আর কীভাবে আবিষ্কৃত হলো কাগজ? কীভাবে এই দুইয়ে মিলে বদলে দিলো বিশ্বকে? আসুন জেনে নেই বিশ্বকে বদলে দেওয়া এই দুই উপাদানের আদ্যপান্ত।

সর্বপ্রথম কোথায় কাগজ আবিষ্কৃত হয়েছিল তা নিয়ে বিস্তর মত পার্থক্য রয়েছে। তবে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অধিকাংশ গবেষক মনে করেন খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে চীনের হান বংশের চাই লুন নামের এক ব্যক্তি প্রথম কাগজ আবিষ্কার করেন। ওই সময় আঁশ জাতীয় এক প্রকার গাছের মণ্ড দিয়ে আধুনিক কাগজের পুর্বরূপের উদ্ভব হয়েছিল। তবে সেই আমলে যোগাযোগ ও সংবাদ প্রবাহের তেমন সুযোগ ছিল না বলেই চীনাদের কাগজ আবিষ্কারের খবর চীনের মধ্যেই মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। মূলত আরবীয় বণিকদের দ্বারাই কাগজের প্রচলন চীন থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

 


এরও বহু পরে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মধ্যযুগের ইউরোপে কাগজের উৎপাদন শুরু হয়। এ সময় পুরনো জাল ও কাপড়ের টুকরা, বিভিন্ন গাছ সেদ্ধ করে, ইউরোপীয়রা কাগজ বানাত। পনের শতকে ইউরোপে পানি চালিত কাগজ উৎপাদনের কাগজকল ও মেশিন আবিষ্কার ও নির্মাণ করা হয়। এখান থেকেই বদলে যেতে থাকে কাগজ উৎপাদন শিল্প। এরপর সারা বিশ্ব চিঠি, সংবাদপত্র ও বইয়ের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান শুরু হয়।

বিশ্বব্যাপী সাশ্রয়ী উপাদান হিসেবে কাগজ তৈরি করা নতুন শিল্প রূপে আবির্ভূত হয়। বর্তমানে আমরা যে কাগজে লিখি তার উদ্ভব ১৮৪৪ সালে। কানাডিয়ান উদ্ভাবক চার্লস ফেনারটি এবং জার্মান উদ্ভাবক কে জি কিলার যৌথ প্রচেষ্টায় কাগজ তৈরির মূল উপাদান হিসেবে কাঠের মণ্ড তৈরি করার মেশিন ও প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন। মূলত এটাই ছিল দুই হাজার বছরের পুরনো ও প্রচলিত কাগজ উৎপাদন প্রক্রিয়ার সময়ের শেষ ও নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে নিউজপ্রিন্ট ও অন্যান্য কাগজ উৎপাদন কালের শুরু।

এরপর নানাভাবে নানান প্রচেষ্টার ফলে আধুনিক বিভিন্ন রকমের কাগজ উদ্ভাবিত হয়েছে। কাগজ যদি মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের অর্ধেক অঙ্গ হয় তবে তার বাকি অর্ধেক অঙ্গ হচ্ছে ছাপাখানা। আর ছাপাখানার কথা এলে নামটি সবার আগে মনে পড়ে তিনি হলেন গুটেনবার্গে। বর্তমান সময়ে আমরা ছাপার অক্ষরে যে বই পড়ি, আজ থেকে কয়েক শত বছর আগে তা মানুষের কল্পনাতেও ছিল না। তখন বই বলতে ছিল কেবল কাগজ বা কাপড়ের উপর মানুষের হাতে লেখা বই।

 


ছাপা বইয়ের আধুনিক ধারণার প্রবর্তক যে মানুষটি, তার নাম জোহান্স গুটেনবার্গ। ১৪৩৯ সালে গুটেনবার্গ পৃথিবীকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন প্রিন্টিং প্রেসের ধারণার সঙ্গে। ছাপার জন্য অক্ষর তৈরি, তেল নির্ভর ছাপার কালি এবং কাঠের প্রেস সিস্টেমেরও তিনিই প্রবর্তক। তার ছাপাখানা থেকেই প্রথম পড়ার জন্য বই ছাপার কাজ শুরু হয়। ১৪৫০ থেকে ১৪৫৫ সালের মধ্যে তার ছাপাখানা বেশ কিছু বই ছাপা হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ৪২ লাইনের গুটেনবার্গ বাইবেল।

রেনেসাঁতে তার এই বই ছাপার প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে তার এই প্রযুক্তি এনে দিয়েছিলো নতুন গতিবেগ। তবে গুটেনবার্গের আগেও ছাপার বিভিন্ন রকম পদ্ধতির অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। ইতিহাসবিদের মতে, ১২২১ সালে চীনে সর্বপ্রথম কাঠের টাইপ সাজিয়ে বই ছাপানো হয়। এ ছাড়া ত্রয়োদশ শতকে কোরিয়ার ধাতব হরফে মুদ্রণের কাজ হয়েছিল বলে জানা যায়।

তবে আধুনিক ছাপাখানার ধারণ আসে ১৭৯৬ সালে লিথোগ্রাফি প্রযুক্তির মাধ্যমে। জার্মান লেখক ও অভিনেতা অ্যালোয়িস সেনেফেল্ডার লিথোগ্রাফি নামে কম খরচে ছাপার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। মূদ্রণ শিল্পে লিথোগ্রাফির হাত ধরেই আসে মাইক্রো এবং ন্যানোলিথোগ্রাফি প্রযুক্তি। এরপর ১৮৭৫ সালে উদ্ভাবিত হয় অফসেট প্রিন্টিং। আর এদের মাধ্যমেই এসেছে আজকের আধুনিক ছাপাখানা এবং তা প্রতিনিয়ত আধুনিকায়নের মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ মার্চ ২০১৭/শাহিদুল ইসলাম/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়