ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘বৈশাখি উৎসব রঙিন হলেও আমাদের কাছে সাদাকালো’

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২০, ১৩ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বৈশাখি উৎসব রঙিন হলেও আমাদের কাছে সাদাকালো’

আরিফ সাওন : অসাম্প্রদায়িক বাঙালিদের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘বাংলা বর্ষবরণ’। এ দিনটি ঘিরে থাকে নানা প্রস্তুতি, নানা আয়োজন। পোশাকে, খাবার-দাবারে, ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ সবকিছুতে থাকে খাঁটি বাঙালিয়ানার ছাপ।

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে বছরের নতুন দিনের উৎসব মানুষকে সারা বছর চলতে অনুপ্রেরণা যোগায়।

তবে সব মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ আছেন যারা বর্ষবরণকে তাদের জীবনের অন্য আরেকটি দিনের মতো সাদাকালো হিসেবে দেখেন। তাদের কাছে এ দিনটি হতাশার, এই দিনটি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কষ্টের। তাদের না আছে স্বামীর সংসার, না আছে বাবার ঘর। তারা না নারী না পুরুষ। তারা হলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।

পরিবার-পরিজনহীন দিনটি তারা কাটান অন্যান্য দিনের মতো নেচে-গেয়ে। তবে এতে থাকে না বৈশাখের কোনো আমেজ। থাকে না পান্তা-ইলিশের অদৃশ্য মায়াভরা ঘ্রাণ। তাদের গান আর নৃত্যে ফুটে ওঠে নিজেদের নিঃসঙ্গতা আর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার হাহাকার।

কথা হলে তারা জানান, নারী হলে তারা স্বামীর সংসারে থাকতেন আর পুরুষ হলে থাকত স্ত্রী-সন্তান। কিন্তু তাদের কেউ নেই। কিছু নেই। সমাজেও তারা অবহেলিত।

কথা হয় বন্ধু সোস্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সিনিয়র লিয়াজোঁ অফিসার অনন্যা বনিকের সঙ্গে। তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তিনি বলেন, আমাদের লাইফ স্টাইল যেমন- পরিবার-পরিজন ছেড়ে একা থাকা, কোনো উৎসবই উৎসব মনে হয় না। আমাদের উৎসব মানে হতাশা। অন্য অনেকের উৎসব রঙিন হলেও আমাদের কমিউনিটির লোকদের কাছে উৎসব হয় সাদাকালো। যখন দেখি পাশের বাড়ির ভাবি রঙিন সাজে সেজে উৎসবকে সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। তারা মিশে যাচ্ছে উৎসবের সঙ্গে, আনন্দ করছে, হৈ চৈ করছে। তখন আমাদের পরিবারের কথা মনে পড়ে। বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে। আত্মীয়-স্বজনের কথা মনে পড়ে। উৎসবটা আসলে আমাদের এমনই হয়। এই হতাশা ও উৎসবহীনতা কাটানোর জন্য আমরা যা করি তা হচ্ছে, কমিউনিটির লোকজনের সঙ্গে বসে হইহুল্লোড় করা। নিজেরা নাচ-গান করি। পয়লা বৈশাখ ঘিরে আমাদের কোনো বিশেষ আয়োজন থাকে না বলেও জানান তিনি।

তৃতীয় লিঙ্গের আরেকজন রাখী রাকিব বলেন, আমি পোশাক-আশাক কিছুই কিনি নি। নিরামিষভাবেই আমার বৈশাখ উদযাপিত হবে। শুধু আমার না, আমার মতো অনেকেরই নিরামিষভাবে বৈশাখ কাটবে। জীবনই যেখানে মূল্যহীন, সেখানে বৈশাখ ঘিরে আর কি পরিকল্পনা থাকতে পারে। সবাই পরিবারের সঙ্গে কাটালেও আমাদের তো সেই সুযোগ নেই। সারাদিন বাসায় থাকব। বিকেলে যদি মন চায় তো বাসা থেকে বের হতে পারি, না হলে না। তবে আমাদের কেউ কেউ আছে যারা শাড়ি পরে এবং সাজুগুজু করে থাকে। কিন্তু সাজুগুজুর আড়ালে থাকে কষ্ট আর হতাশা। যা কেউ দেখে না।

তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলো পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, সমাজে আজো তারা অবহেলিত। অনেকেই তাদের হেয় করে দেখেন। কিন্তু না। তারাও তো মানুষ। তাই সবার উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ও উৎসবহীনতা এবং হতাশা দূর করতে তাদের সঙ্গে নিয়ে বিশেষভাবে বৈশাখ উদযাপন উচিত।এজন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ এপ্রিল ২০১৭/সাওন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়