ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নই আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে’

এমএম আরিফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৪, ১৮ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নই আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে’

এম এম আরিফুল ইসলাম, নাটোর : প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনো বাধাই আর বাধা থাকে না। তার চাক্ষুস প্রমাণ নাটোরের সারোয়ার হোসেন সাদ্দাম।

ক্রিকেট খেলার জন্য শরীর ফিট থাকা অত্যাবশ্যকীয়। অনেক পরিশ্রমের খেলে ক্রিকেট। কিন্তু সাদ্দামের এক পা নেই। তাতে কি হয়েছে। সাদ্দাম ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নের কাছে হার মানতে রাজি নন।

এক পা দিয়েই ক্রিকেট খেলে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন  তিনি। এক পায়ে ভর করেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় অংশগ্রহণ করছেন তিনি। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন কিপিংয়েরও।

স্বপ্ন দেখেন জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবন্ধী দলে খেলার। দুর্ঘটনায় একটি পা হারান তিনি। প্রতিবন্ধী দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেই অনেক দূরে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।

সমাজের অন্য শারীরিক প্রতিবন্ধীরা যখন হতাশাগ্রস্ত হয়, তখন সাদ্দাম এক পায়ে ক্রিকেট খেলে অন্য প্রতিবন্ধীদের নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা যোগান। মনোবল এবং মানসিক শক্তি দৃঢ় থাকলে সব সবকিছু জয় করা যায়।সাদ্দাম যেন সেই কথাই বলতে চান নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে।



নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের জংলী গ্রামের মৃত আব্দুর রউফ পাঠানের ছেলে  সাদ্দাম। পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে সাদ্দাম চতুর্থ। আট বছরের এক মেয়ে সন্তানের জনক সাদ্দামের জংলী মোড়ে ছোট্ট একটি দোকানে মোবাইল সামগ্রী বিক্রি করে সংসার চলে। সারাদিন যা উপার্জন তাই দিয়েই সংসারের খরচ বহন করেন সাদ্দাম। অবসর সময়ে ক্রিকেট খেলে সময় কাটে তার। সাদ্দাম তার ছোট ভাই মাসুমকে নিয়ে স্থানীয় জংলী ইসলামিয়া দলের হয়ে এবার জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগে অংশ নেন।

এই পর্যন্ত সাদ্দাম বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন চারবার। এ ছাড়া ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন দুইবার। সম্প্রতি জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত শংকর গোবিন্দ চৌধুরি স্টেডিয়ামে তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগ খেলেন তিনি। টুর্নামেন্টে জংলী ইসলামীয়া দলের হয়ে খেলেন সাদ্দাম।

সাদ্দামের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, অন্য আর দশজনের মতো সাদ্দামেরও দুই পা ছিল। বিয়ের তিন মাসের মাথায় পাওয়ারটিলার উল্টে এক দুর্ঘটনায় একটি পা হারান তিনি। বিয়ের পরও তিনি এক পা দিয়ে একাধিক টুর্নামেন্ট খেলেছেন। মানসিক শক্তি ও দৃঢ় মনোবলের কারণে তিনি এখনও এক পায়ে ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন।

সাদ্দামের প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক হয়ে খেলা রিয়াজুল হোসেন বলেন, ‘একজন স্বাভাবিক খেলোয়াড়ের সঙ্গে সাদ্দাম সমানতালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং প্রতিটি বলে রান নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন তিনি।’

জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কোচ বাবুল আখতার বলেন, ‘এক পায়ে ক্রিকেট খেলা কোনো স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সম্ভব না হলেও সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন সাদ্দাম। কে জানে, সুযোগ দেওয়া হলে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও ছেলেটি দেশ ও নাটোরের জন্য সুনাম বয়ে আনবে।’

সারোয়ার হোসেন সাদ্দাম বলেন, ‘ক্রিকেটার হবার স্বপ্নই আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে। দেশের প্রতিবন্ধী দলের হয়ে খেলতে চাই। স্বপ্ন দেখি একদিন দেশ এবং জেলার জন্য সুনাম বয়ে আনাব।’

নাটোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল বলেন, ‘এক পায়ে ভর করে ক্রিকেট খেলতে যে শারীরিক ও মানসিক একাগ্রতা লাগে তা সাদ্দামের রয়েছে। ভবিষ্যতে জেলা ক্রীড়া সংস্থা সাদ্দামের পাশে থাকবে।’

সারোয়ার হোসেন সাদ্দামের ক্রিকেট খেলার ভিডিও :





রাইজিংবিডি/নাটোর/১৮ এপ্রিল ২০১৭/এম এম আরিফুল ইসলাম/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়